দৌড়: অ্যাপ-বাইকে গন্তব্যের পথে। বৃহস্পতিবার, দমদম পার্কে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
পুজো আসছে। সেই সঙ্গেই বাড়ছে বাড়তি আয়ের হাতছানি। উৎসবের মরসুমে সেই বাড়তি আয়ের মোহেই অ্যাপ-নির্ভর সংস্থার মোটরবাইক চালকদের অনেকেই ট্র্যাফিক-বিধি লঙ্ঘন করছেন বলে অভিযোগ। কোথাও দ্রুত ‘টার্গেট’ পূরণের লক্ষ্যে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার দৌড় ডেকে আনছে মৃত্যু, কোথাও আবার উপরি আয়ের জন্য ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি সামগ্রী পৌঁছে দিতে গিয়ে ঘটে যাচ্ছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
ওই চালকদের বার বার বুঝিয়েও কাজ হচ্ছে না বলে দাবি পুলিশের। দিনকয়েক আগে পুলিশের পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহেও অন্যতম মাথাব্যথার কারণ ছিল এই ধরনের বাইক চালকদের অসচেতনতা। ওই সময়ে একাধিক পদক্ষেপের পরেও পরিস্থিতি কিছুমাত্র বদলায়নি বলে দাবি পুলিশের। লালবাজার সূত্রের খবর, গত এক মাসে প্রায় ৭২টি ক্ষেত্রে এই ধরনের বাইক চালকদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। কম সময়ে পৌঁছতে গিয়ে একমুখী রাস্তায় ঢুকে পড়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ২৮টি ক্ষেত্রে। পুলিশের দাবি, এর সঙ্গে উৎসবের মরসুমে যুক্ত হচ্ছে সংস্থাগুলির তরফে দেওয়া উপরি অর্থের হাতছানি।
অনলাইনে খাবার আনানোর একটি সংস্থার এক কর্মী জানালেন, এমনিতে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও রেস্তরাঁ থেকে খাবার পৌঁছে দিলে ২০ টাকা পাওয়া যায়। তার বেশি হলে প্রতি কিলোমিটারে পাঁচ টাকা ৪০ পয়সা মেলে। রেস্তরাঁয় বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হলে প্রতি মিনিটে দেওয়া হয় এক টাকা করে। এই ভাবে কেউ এক দিনে ৩০০ টাকার কাজ করলে ১২০ টাকা, ৪২০ টাকার কাজ করলে ১৫৫ টাকা, ৫২০ টাকার কাজ করলে ১৯৫ টাকা, ৬১৫ টাকার কাজ করলে ২২৫ টাকা এবং ৭৪০ টাকার কাজ করলে ২৬০ টাকা ‘ইনসেন্টিভ’ বা উপরি পান। পুজোর মরসুমে এই বাড়তি আয় অনেকটাই বেড়ে যায়। ওই কর্মীর কথায়, ‘‘আমাদের সংস্থার তরফে ভাল ইনসেন্টিভ দেওয়ার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ৫০-৬০ টাকা করে বেশি হচ্ছে। কম সময়ে বেশি আয়ের জন্য তখন তো ছুটতেই হবে!’’
আর এক অনলাইন সংস্থার কর্মীর দাবি, এমনি সময়ে প্রতি ট্রিপে কিলোমিটার ধরে টাকা দেওয়া হত। সারা দিনে ১৮টি ট্রিপ করতে পারলে মিলত ৯৬০ টাকা। এখন প্রতি ট্রিপে ২০-৩০ টাকা করে বেশি দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। ওই কর্মী বললেন, ‘‘এই বাড়তি টাকাটাই তো পুজোর ইনসেন্টিভ। এক দিনে ১৮টি ট্রিপ করা কি মুখের কথা? সেই জন্যই তো জীবন বাজি রেখে ছুটতে হয়।’’ একটি অ্যাপ-বাইক সংস্থার এক কর্মীর আবার মন্তব্য, ‘‘লকডাউনের পরে বহু মানুষের কাজ গিয়েছে। অনেকেই তখন মোটরবাইক কিনে এই কাজে নামেন। এখন চালকের সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছে যে, ১৮ তো দূর, সারা দিন বসে থেকে আট-দশটা ট্রিপও করা যায় না। ফলে একে অপরকে টেক্কা দিতে ঝুঁকি নিতেই হয়।’’
অ্যাপ-নির্ভর সংস্থাগুলির যদিও দাবি, কর্মীদের সর্বক্ষণই ঝুঁকি না নিতে বলা হয়। কর্মীদের জন্য বিমাও করে দেওয়া হয়েছে। তাড়াহুড়ো করতে যাতে না হয়, তাই আংশিক এবং সর্বক্ষণ সময়ের জন্য কাজ করার দু’টি আলাদা ভাগও রাখা হয়েছে। এর পরেও অনেক চালক দায়িত্বশীল হন না। একটি সংস্থার কলকাতা জ়োনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বললেন, ‘‘বিপদ বাড়াতে নয়, ইনসেন্টিভ দেওয়া হয় কাজে উৎসাহদান এবং পুজোর মরসুমে কর্মীদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে।’’ পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা যদিও মনে করেন, ‘টার্গেট’ পূরণের মাধ্যমে উপরি আয়ের হাতছানির বদলে অন্য উপায়ে বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিলে বিপদ অনেক কমবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy