Advertisement
০৪ জানুয়ারি ২০২৫
Examination

দশমের পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় মূল্যায়ন নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা

পরীক্ষা বাতিল হওয়ার পরে অধিকাংশ পরীক্ষার্থীরই প্রশ্ন, তাদের দশম থেকে একাদশ শ্রেণিতে ওঠার মূল্যায়ন কী পদ্ধতিতে হবে?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪৬
Share: Save:

কোনও কোনও পরীক্ষার্থী খুশি। কারও বা মনখারাপ। তবে অধিকাংশ শিক্ষক, শিক্ষিকা, অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদেরাই জানাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আইসিএসই (দশম শ্রেণি) পরীক্ষা বাতিল করে ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে ‘কাউন্সিল ফর দি ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগজ়ামিনেশন’ (সিআইএসসিই)।

তবে পরীক্ষা বাতিল হওয়ার পরে অধিকাংশ পরীক্ষার্থীরই প্রশ্ন, তাদের দশম থেকে একাদশ শ্রেণিতে ওঠার মূল্যায়ন কী পদ্ধতিতে হবে? সিবিএসই বোর্ড যেমন জানিয়েছে, দশম শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন পছন্দ না হলে তারা করোনা পরিস্থিতি কাটার পরে লিখিত পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে। আইসিএসই বোর্ডের পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রশ্ন, এমন সুযোগ কি তাদেরও দেওয়া যেত না? লিখিত পরীক্ষা পুরোপুরি বাতিল হওয়ায় এত দিনের প্রস্তুতি কি পুরোটাই বিফলে গেল না?

সিআইএসসিই-র সচিব জেরি অ্যারাথুন বললেন, “যে ভাবে করোনা বাড়ছে, তাতে আমরা খুবই চিন্তিত। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে কী ভাবে? তাই এমন সিদ্ধান্ত।” ওই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের ডিরেক্টর দেবী কর বলেন, “কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত একেবারে ঠিক। এর আগে ১৬ এপ্রিল যে বিজ্ঞপ্তি কাউন্সিল জারি করেছিল, সেখানেই তারা দশম শ্রেণির পরীক্ষা পুরোপুরি বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারত। আমরা এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার কথা ভাবতেই পারছি না। এখন পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যটাই আগে।”

দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল হলেও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার কী হবে, তা নিয়ে অবশ্য এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কাউন্সিল। তবে অধিকাংশ অধ্যক্ষই মনে করছেন, করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে দ্বাদশ শ্রেণির লিখিত পরীক্ষা অফলাইনে নেওয়া হবে। রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাসের মতে, “দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার নম্বরের উপরে ভিত্তি করেই এক জন পড়ুয়া কলেজে ভর্তি হয়। নানা রকম কোর্সে ভর্তি হতেও দ্বাদশের রেজ়াল্ট লাগে। এমনকি, বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও দ্বাদশের নম্বর দেখা হয়।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘দশম শ্রেণির পরীক্ষা পড়ুয়াদের জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা হলেও গুরুত্বের দিক থেকে দ্বাদশের পরীক্ষা অনেকটাই এগিয়ে। তাই ওই পরীক্ষা পুরোপুরি বাতিল করা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। করোনা পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেলে তা নিতেই হবে।”

এই যুক্তি মেনে নিয়েও মনখারাপ কাটছে না দশম শ্রেণির অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর। তাদের কয়েক জনের বক্তব্য, করোনার এই পরিস্থিতিতে ৪ মে পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু পরীক্ষা পিছিয়ে জুন বা তার পরেও কোনও একটা সময়ে নেওয়া যেত। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে আগ্রহী ছিল ওরা প্রায় সকলেই। ওদের কয়েক জনের মতে, “অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে আমরা যে নম্বর পাব, তার গুরুত্ব কি লিখিত পরীক্ষার নম্বরের মতো দেওয়া হবে? তা ছাড়া, আমাদের মূল্যায়ন কী ভাবে করা হবে, তা-ও তো জানতে পারছি না।”

যদিও পরীক্ষা বাতিলের পক্ষেই মত দিয়েছে পরীক্ষার্থীদের অন্য একটি অংশ। তাদের মতে, সিলেবাস কমে গিয়েছিল কিছুটা। তার মধ্যে পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছিল। একই বিষয় বার বার পড়তে গিয়ে একঘেয়েমি চলে আসছিল। সেই সঙ্গে পড়ায় মনও বসছিল না। এ বার নতুন ক্লাসে উঠে নতুন ভাবে পড়াশোনা শুরু করতে হবে।

শহরের বিভিন্ন স্কুল অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, একাদশ শ্রেণির ক্লাস শীঘ্রই শুরু হবে। ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুলের অধ্যক্ষা মৌসুমী সাহা জানিয়েছেন, তাঁরাও খুব শীঘ্রই একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করবেন। একাদশ শ্রেণিতে সাধারণত প্রতি বার দশম শ্রেণির প্রি-টেস্টের নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়া হয়। এ বারও সে ভাবেই ভর্তি নেওয়া হয়েছে। তবে এ বার ক্লাস হবে অনলাইনেই। হেরিটেজ স্কুলের অধ্যক্ষা সীমা সাপ্রু বললেন, “ভর্তি প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। এপ্রিলের শেষেই আমাদের একাদশ শ্রেণির অনলাইন ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। কাউন্সিল দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ঠিকই করেছে। যদি আরও দেরি করে পরীক্ষা হত, তা হলে একাদশ শ্রেণির সিলেবাস শেষ করতে দেরি হয়ে যেত। সে ক্ষেত্রে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির সময় কম পেত পড়ুয়ারা।”

করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত ঠিক বলে মেনে নিয়েও শ্রী শিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘‘আমাদের দেশ জুড়ে অনলাইন পরীক্ষার জন্য আরও ভাল পরিকাঠামো গড়ে উঠবে না কেন?’’ তাঁর কথায়, “অনলাইনে পড়াশোনার পরিকাঠামো ভাল ভাবে তৈরি করার ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয় সরকারেরই একটা দায়িত্ব আছে। গ্রামে-গঞ্জে মোবাইল নেটওয়ার্ক উন্নত করার পাশাপাশি সব ধরনের পড়ুয়ার জন্য কম দামের স্মার্টফোন বাজারে আনা ও পড়ুয়াদের জন্য খুব কম দামে নেট প্যাকের ব্যবস্থা করা— এ সব পরিকাঠামো প্রশাসনকেই গড়ে তুলতে হবে। কারণ, করোনা চলে গেলেও ক্লাসরুমের বিকল্প হিসেবে অনলাইন মাধ্যমকে গুরুত্ব দিতেই হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy