অনুজ শর্মা।—নিজস্ব চিত্র।
বারবার সতর্ক করছেন তিনি। সচেতন করারও চেষ্টা করছেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ কমিশনারের সেই নির্দেশ বারংবার অমান্য করছেন তাঁরই বাহিনীর অফিসারেরা। রবিবার রাতে একটি শিশু চুরির ঘটনায় ফের পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠায় এ বার কঠোর ভাষায় গোটা বাহিনীর উদ্দেশ্যে বার্তা পাঠালেন অনুজ শর্মা। জানালেন, পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা বা গাফিলতির অভিযোগ কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না। অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তখন রাতের ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফেরার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন পুলিশকর্মীরা। হঠাৎ তাঁদের ডেকে পাঠালেন থানার আধিকারিকেরা। জরুরি ভিত্তিতে ডাক পড়ল এলাকায় টহলরত অফিসারদেরও। থানায় পুলিশকর্মীরা সকলে উপস্থিত হতেই তাঁদের কর্তব্য পালন নিয়ে বাহিনীর শীর্ষ কর্তার তৈরি করা কার্যবিধি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) পড়ে শোনালেন আধিকারিকেরা। পুলিশকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা এবং গাফিলতির অভিযোগ উঠলে যে রেয়াত করা হবে না, সে বিষয়ে সতর্ক করে দিলেন থানার কর্তারা।
সোমবার গভীর রাতের এই ঘটনা দক্ষিণ শহরতলির একটি থানার। একই চিত্র দেখা গিয়েছে বন্দর এলাকা থেকে শুরু করে কলকাতা পুলিশের অধিকাংশ থানায়। সর্বত্রই থানার আধিকারিকেরা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক করেছেন কর্তব্যে গাফিলতি ও নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে।
লালবাজার জানাচ্ছে, থানার আধিকারিকদের এই তৎপরতার পিছনে রয়েছে সোমবার রাতে থানার ওসি-দের প্রতি পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার পাঠানো একটি কড়া বার্তা। রবিবার রাতে পার্ক সার্কাস ময়দান থেকে একটি শিশু নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। অভিযোগ, শিশুটির মা বেনিয়াপুকুর থানায় গেলে এক অফিসার তাঁকে বলেন, ওই ঘটনা সেই থানার এলাকায় ঘটেনি। ওই ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে পুলিশ কমিশনার তাঁর বার্তায় জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক অপরাধ বৈঠকেও বলা হয়েছিল, থানার এলাকা নিয়ে হিসেবনিকেশ না করে দ্রুত অভিযোগ নথিভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু রবিবার রাতেও ওই শিশুটির মাকে একই কারণ দেখিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এসআই-কে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং থানার ওসি-র বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।’’ লালবাজারের একটি অংশের দাবি, পুলিশ কমিশনার ওই ঘটনায় বেজায় ক্ষুদ্ধ। তাই তিনি থানার ওসি-দের সাফ জানিয়েছেন, দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে নির্দেশ অমান্য করলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দ্বিতীয় দফায় কলকাতা পুলিশের দায়িত্ব নিয়েই বাহিনীকে কর্তব্য পালন করা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন অনুজ শর্মা। তার পরেও রাতের শহরে প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া-ইউনিভার্স ঊষসী সেনগুপ্তকে হেনস্থার ঘটনা ঘটায় পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় এক অফিসারকে সাসপেন্ড এবং অন্য দুই অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পুলিশকর্মীদের জন্য কমিশনারের নির্দেশে তৈরি করা হয়েছিল কার্যবিধি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর)। কিন্তু তার পরেও গত শুক্রবার পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল বন্দর এলাকায় এক মহিলা বক্সারকে নিগ্রহের ঘটনায়। সেই রেশ কাটার আগেই রবিবার রাতের ঘটনা। যেখানে বেনিয়াপুকুর থানার ডিউটি অফিসার নিজের এলাকা নয় বলে শিশুটির নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগটুকুও নেননি বলে অভিযোগ।
লালবাজার সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরে ওই ঘটনা নজরে আসার পরেই পুলিশকর্তাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান কমিশনার। এর পরেই তাঁর নির্দেশ অমান্য করার জন্য প্রথমে অভিযুক্ত সাব ইনস্পেক্টরকে সাসপেন্ড এবং পরে ওই থানার ওসি-কে শো-কজ করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে কলকাতা পুলিশে কাজ করা এক অফিসারের কথায়, ‘‘কমিশনার পুলিশকর্মীদের দায়িত্ব নিয়ে বারবার সচেতন এবং সতর্ক করার চেষ্টা করছেন।’’ বাহিনীর একটি অংশ জানাচ্ছে, সিপি যে পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে হাল্কা ভাবে নেবেন না, তা গত শনিবারের অপরাধ বৈঠকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। সে দিনের বৈঠকে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, গোয়েন্দা বিভাগের বিরুদ্ধেও যে কোনও সময়ে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy