তুলি নস্কর
বেড়াতে ভালবাসতেন খুব। কয়েক মাস আগেই পুরী বেড়াতে গিয়েছিলেন স্বামী ও ছেলের সঙ্গে। ফের শীতের ছুটিতে কাছে-পিঠে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু সব পরিকল্পনা স্তব্ধ করে দিল মাত্র চার দিনের জ্বর। গত মঙ্গলবার জ্বর নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তেঘরিয়ার বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের গৃহবধূ, তুলি নস্কর। শনিবার রাতে সেখান থেকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আনা হলে তাঁর মৃত্যু হয়।
তুলির পরিবার সূত্রের খবর, ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে তুলিদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এক দিনের মধ্যে প্লেটলেট নেমে গিয়েছিল ১০ হাজারে। শুধু তুলিদেবী নয়, তাঁর স্বামী জয়গোপাল নস্করও ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে তেঘরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।
রবিবার সকাল থেকে তেঘরিয়া মোড়ে তুলিদেবীদের দোতলা বাড়িতে সকাল থেকে আত্মীয়দের ভিড়। এক আত্মীয় মল্লিকা নস্কর বলেন, “সোমবার থেকে ওঁর জ্বর এসেছিল। মঙ্গলবার রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ার পরেই ভিআইপি রোড সংলগ্ন একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুধবার প্লেটলেটের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ ৭০ হাজার। পরের দিনই তা নেমে যায় ১০ হাজারে। বৃহস্পতিবার সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আনা হয় ওঁকে। সেখানেও পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। কাল রাতে সব শেষ।”
পরিবার সূত্রের খবর, তুলিদেবীর ডেঙ্গি হওয়ার দু’দিনের মধ্যেই তাঁর স্বামী জয়গোপাল বাবুরও জ্বর আসে। তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তুলিদেবীর আর এক আত্মীয় অনুভা নস্কর বলেন, “আমারও ক’দিন আগে ডেঙ্গি হয়েছিল। এই বছরই আমাদের পরিবারের তিন জনের ডেঙ্গি হয়েছে। ভেবেছিলাম কাকিমাও (তুলিদেবী) কয়েক দিন পরে আমার মতোই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু এমনটা ঘটবে, কল্পনাও করতে পারিনি।”
তুলিদেবীর প্রতিবেশীরা জানান, তেঘরিয়ায় তাঁদের পাড়ার অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তবু পুরসভার টনক নড়েনি। নামমাত্র ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো ও মশার তেল ছড়ানো হয় কেবল। বিধাননগর পুরসভার ন’নম্বর ওয়ার্ডে ওই এলাকার আগাছা, জঞ্জাল কোনও দিনই সাফ হয় না। বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, “কাউন্সিলরের কাছ থেকে খবর নিয়ে জেনেছি, ওই বাড়ির আশপাশে কোথাও জল জমা নেই। কোনও অপরিষ্কার নর্দমাও নেই। কী করে এমন ঘটল, খতিয়ে দেখছি।”
শনিবার রাতে তুলিদেবীর মৃত্যুর খবর জানতে পারে পরিবার। তার পর থেকেই আগলে রাখা হচ্ছে তুলিদেবীর সাত বছরের ছেলে হিমাদ্রিকে। হিমাদ্রি এখনও মায়ের মৃত্যুর কথা জানে না। খবর দেওয়া হয়নি তুলিদেবীর স্বামী জয়গোপালকেও। এক আত্মীয় বরুণ নস্কর বলেন, ‘‘জয়গোপাল নিজেই তো ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। বারবার স্ত্রী কেমন আছে জিজ্ঞেস করছেন। ওঁকে কী ভাবে যে খবরটা দেব!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy