বিদ্যুতের বিল নিয়ে সিইএসসি-র বিরুদ্ধে সরব অঙ্কুশ-যশ।
চলতি মাসের বিদ্যুতের বিল নিয়ে ক্ষুব্ধ কলকাতার একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েক মাসের তুলনায় চলতি মাসে অস্বাভাবিক বেশি বিদ্যুতের বিল এসেছে। এবং এই তালিকায় রয়েছেন শহরের সাধারণ বাসিন্দা থেকে শুরু করে অভিনেতা অঙ্কুশ বা যশ দাসগুপ্তের মতো নামও। কলকাতার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বিদ্যুৎবন্টন সংস্থা সিইএসসি এর আগে যে টাকার বিদ্যুতের বিল পাঠাত, এ বার তার থেকে কয়েক গুণ বেশি পাঠিয়েছে। গ্রাহকদের দাবি, প্রায় একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে অন্য সময়ের চেয়ে প্রায় চার-পাঁচ গুণ বেশি টাকার বিল এসেছে। তবে সিইএসসি-র পাল্টা দাবি, লকডাউনের কারণে তাদের কর্মীরা মিটার রিডিং নিতে বাড়ি বাড়ি যেতে পারেননি বলে বিল কম যেত। এ বার সঠিক রিডিংয়ের বিল পাঠানো হয়েছে বলে গ্রাহকদের তা বেশি মনে হচ্ছে। গোটা ঘটনায় এ বার সিইএসসি-র কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সিইএসসি আধিকারিকদের নিজের দফতরে ডেকে পাঠান তিনি। তা নিয়ে ব্যাখ্যাও তলব করেন শোভন। তবে শুধু জবাবদিহি করেই থেমে থাকেননি তিনি। সিইএসসি-কে তাঁর নির্দেশ, শহরের সমস্ত বড় সংবাদপত্রে রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে অস্বাভাবিক বিল পাঠানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। এবং সেই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, জনসাধারণ সেই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হলে ফের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠানো হবে তাঁর দফতরে।
শুক্রবার সকালে সিইএসসি-র বিরুদ্ধে অঙ্কুশই প্রথম মুখ খোলেন। সিইএসসি-র পাঠানো বিলের একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করেন তিনি। তাতে দেখা যায়, আগের মাসে বিদ্যুতের বিল বাবদ ৪ হাজার ১০ টাকা মিটিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চলতি মাসে সেই বিল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ১৪০ টাকায়। বিষয়টি নিয়ে সিইএসসিকে ট্যাগ করে অঙ্কুশ লেখেন, ‘‘৪ হাজার থেকে ২১ হাজার? বিশ্বাস করুন এই মহামারি পরিস্থিতিতে বাড়িতে কোনও ডিস্কো লাইট বা এইচএমআই লাগিয়ে ফূর্তি করিনি আমি। আমাদের সঙ্গে এমন করবেন না।’’
টুইট দেখে সিইএসসি-র তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বলে জানিয়েছেন অঙ্কুশ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘চড়া বিল নিয়ে অবান্তর যুক্তি দিচ্ছে সিইএসসি। ফোনে বলা হল, আগের মাসে বিলের টাকা কমিয়ে পাঠানো হয়েছিল। এ মাসে সেটা অ্যাডজাস্ট করে দেওয়া হয়েছে। তা হলে আগের মাসে কেন বিল কমিয়ে পাঠালেন? জিজ্ঞেস করলে বলেছে, লকডাউনে রিডিং নেওয়া যাচ্ছে না। তাই ২০১৯ সালে এই সময়ে যা বিল ছিল, তার উপর ভিত্তি করে বিল পাঠানো হচ্ছে। পরে টাকা অ্যাডজাস্ট করে দেওয়া হবে।’’
From 4000 to 21000?? @CESCLimited.. trust me in this pandemic situation i havnt put anyyy disco lights or HMI in my house to have fun.. Dont do this to us .. 🙏 pic.twitter.com/kFfJQAI6el
— ANKUSH #Magic (@AnkushLoveUAll) July 17, 2020
অঙ্কুশের টুইট।
আরও পড়ুন: সুশান্তের মৃত্যুতে সিবিআই তদন্ত চাওয়ার পর কি হ্যাক হল রিয়ার টুইটার অ্যাকাউন্ট?
অসংখ্য অনুরাগীও সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে অভিযোগ করেছে বলে জানিয়েছেন অঙ্কুশ। এমনকি তাঁর পরিচিত অনেকে মানুষ, যাঁদের বিল এত দিন কয়েকশো টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করত, আনলক পর্বে তাঁদের বিলেও টাকার অঙ্ক এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গিয়েছে বলে জানান অঙ্কুশ। তাই এত মানুষ যেখানে অভিযোগ জানাচ্ছেন, সিইএসসি-র তরফে এ নিয়ে সবিস্তার ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন বলে দাবি অঙ্কুশের।
অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত জানান, আগের মাসে বিদ্যুতের বিল বাবদ ৩ হাজার ২৮০ টাকা মিটিয়েছিলেন তিনি। এ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬৬০ টাকা। সিইএসসি-কে ট্যাগ করে টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘এটা নিউ নর্মাল হতে পারে না। গত কয়েক বছর ধরে যা দিয়ে আসছি, সেই তুলনায় অদ্ভুত ভাবে ১৭ হাজার ৬৬০ টাকার বিল পাঠানো হয়েছে আমাকে। সিইএসসি-কে অনুরোধ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হোক।’’ বিলের একটি ছবিও টুইটারে পোস্ট করেন তিনি।
যশের টুইট।
তবে শুধুমাত্র অঙ্কুশ বা যশ নন, গত কয়েক মাসে সিইএসসি-র বিরুদ্ধে এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়েছে। শুধুমাত্র শহর এবং শহরতলির মানুষই নন, শাসকদলের অনেক নেতামন্ত্রীও মর্জিমতো বিল পাঠানোর অভিযোগ তুলেছেন সিইএসসি-র বিরুদ্ধে। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতেও সম্প্রতি ১১ হাজার টাকার বিল পাঠায় সিইএসসি। বছরের এই সময় সাধারণত যে বিল পান, তার চেয়ে এই অঙ্কটা ঢের বেশি বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: অনলাইনের লড়াই জমজমাট, ১৭টি নতুন স্বাদের কনটেন্টের প্রিমিয়ার নেটফ্লিক্সে
একই অভিযোগ করেছেন সরশুনার কার্তিক নগরের বাসিন্দা বাসিন্দা হীরক বিশ্বাস। তাঁর বাবা ধীরেনচন্দ্র বিশ্বাসের নামে (কাস্টমার আইডি ১১০০০৭৩৫৮৪৯) মিটার রয়েছে। হীরকবাবুর কথায়, ‘‘লকডাউনের সময় এমনতেই রোজগার কম। গড়ে হাজার দেড়েক টাকা বিল আসে। কিন্তু এ মাসে তিনগুন বিদ্যুতের বিল এসেছে। এত টাকা দিতে পারব না। কী ভাবে সংসার চলবে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ, গ্রাহকদের স্বার্থটা দেখুক সরকার।’’
সরশুনা ব্যানার্জি পাড়া রোডের বাসিন্দা সোমনাথ চক্রবর্তী (কাস্টমার আইডি ১১০০১২১৮২৪৬)। তিনি বলেন, ‘‘সিইএসসি কোন যুক্তিতে এত বিল পাঠিয়েছে বুঝতে পারছি না। এক মাসে যেখানে মাসে ২-৩ হাজারের আশপাশে বিদ্যুতের বিল আসত, সেখানে ১৯ হাজার ২১০ টাকা বিল এসেছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবার এত টাকা কী করে দেবে। সবার কাছেই শুনছি, এত বিল এসেছে। সিইএসসি প্রাইভেট কোম্পানি হলেও, বিদ্যুৎমন্ত্রী তো রাজ্যের!’’
কিন্তু এই ভূরি ভূরি অভিযোগ নিয়ে সিইএসসি-র কী বক্তব্য? তাদের দাবি, লকডাউনের জেরে গত কয়েক মাসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটারের রিডিং নিতে পারেননি বিদ্যুৎকর্মীরা। যে কারণে সেই সময় বিল কম এসেছিল। তাই বিদ্যুৎ কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট গাণিতিক নিয়ম মেনে বিল পাঠানো শুরু হয়েছে। এপ্রিল, মে মাসে ভরা গরম থাকে। এই সময় বিদ্যুৎও বেশি খরচ হয়। তার উপর লকডাউনে সকলে ঘরবন্দি থাকায় বিদ্যুতের খরচ অনেকটাই বেড়েছে। সব মিলিয়ে তাই বিদ্যুতের বিল কিছুটা বেশি এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy