‘মাতঙ্গিনী’: হাওড়া থেকে ব্রিগেডের সভায় নবতিপর গীতা মজুমদার। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
মনে আক্ষেপ থাকলেও, ‘দিদি’র ডাক উপেক্ষা করতে চান না ওঁরা। বরং যত দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাকবেন, তত দিন তাঁরা ভিন্ জেলা থেকে এসে শহরের সমাবেশে যোগ দেবেন বলেই দাবি। রবিবার ব্রিগেডের মূল মঞ্চ থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে এমনটাই বলছিলেন চন্দ্রমোহন, উত্তরা সিংহ সর্দার, স্বপন দত্তেরা। রোদে শুকিয়ে যাওয়া গলা ভেজাতে অল্প জল মুখে ঢেলে অশীতিপর বৃদ্ধা বললেন, ‘‘মনে ক্ষোভ থাকলেও দিদিকে ছেড়ে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা ভুল করছেন।’’
বসন্তের রবিবাসরীয় সকালে শহরে এসে পৌঁছেছিলেন বাঁকুড়ার চন্দ্রমোহন সিংহ সর্দারেরা। ধামসা-মাদল বাজানোর দলে তাঁরা জনা পনেরো ফোর্ট উইলিয়মের উল্টো দিকের এক ফুটপাতে কড়া রোদ মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ধর্মতলার দিক থেকে তখন ওই রাস্তা ধরে জনতার ব্রিগেডমুখী স্রোত। গাড়ি চলাচলের সুবিধার জন্য মাঝেমধ্যেই দড়ি ফেলে আটকে দেওয়া হচ্ছিল জনতাকে। সেই ভিড়ের একপাশে দাঁড়িয়ে উসখুস করছিলেন চন্দ্রমোহন, উত্তরা ও জবারানি সিংহ সর্দারেরা। জানালেন, স্থানীয় এক নেতা তাঁদের নিয়ে এসেছেন। কিন্তু সকালে এক বার ফোনে সেই ‘দাদা’র সঙ্গে কথা হলেও, আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। তাই মাঠে যাবেন কি না, তা নিয়েই আতান্তরে তাঁরা।
তাঁরা কি লোকশিল্পীর কার্ড পেয়েছেন? প্রশ্ন শুনে এক জন অপর জনের মুখের দিকে তাকাতে শুরু করলেন চন্দ্রমোহনেরা। পর মুহূর্তে দলে থাকা মহিলারা বলে উঠলেন, ‘‘এখনও আমরা কার্ড পাইনি। কেন পাইনি তাও জানি না। তাই বলে দিদির ডাকে আসব না, তা আবার হয় নাকি? লক্ষ্মীর ভান্ডার তো পাচ্ছি।’’
এ দিন লক্ষ্মীর ভাঁড়ের আদলে ঘট মাথায় নিয়েও ব্রিগেডে দেখা গেল পুরুলিয়ার আদিবাসী মহিলাদের। শরীরে জোড়া ফুলের পতাকা জড়িয়ে মাথা থেকে মুখ জাতীয় পতাকার রঙে রাঙিয়ে এসেছিলেন বনগাঁর স্বপন দত্ত। সেই রঙের মধ্যেই কালো কালিতে লেখা রয়েছে, ‘দিদি, এনআরসি-র হাত থেকে বাঁচাও’। কাজকর্ম তেমন কিছু করেন না বলেই জানালেন স্বপন। তা হলে নিশ্চয় বেকার ভাতা পান? ‘না, ও সব পাই না’ বেশ আক্ষেপের সঙ্গেই বললেন স্বপন। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, এই সাজের জন্য স্থানীয় নেতারা কিছু টাকা অবশ্য দেবেন। কিন্তু তিনি সেজেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ভালবাসা থেকে।
গাছতলায় জিরিয়ে নিচ্ছিলেন বছর সত্তরের কৃষ্ণপদ মাহাতো ও তাঁর সঙ্গীরা। কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে সেই দলে রয়েছেন পুরুলিয়ার জয়পুরের ওই বৃদ্ধ। বার্ধক্য ভাতার প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, ‘‘না, পাই না। কেন পাই না, বলতে পারব না। তবে ও সবের জন্য রাজনীতি করি না। যত দিন বাঁচব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাকলেই আসব।’’
রোদে মাথা পুড়িয়ে ভিন্ রাজ্যের নেতাদের বক্তব্য শুনতে মোটেই রাজি নন দক্ষিণ ২৪ পরগনার আলাউদ্দিন মোল্লা। রেগে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময়ে বললেন, ‘‘এঁদের কথা শুনতে আসিনি। দিদি আর অভিষেকের কথা শুনব বলেই সকালে এসেছি।’’
ব্রিগেডে আসবেন বলে সকালে উঠেই সাদা শাড়ি আর ফুল হাতা সাদা ব্লাউজে তৈরি হয়ে গিয়েছিলেন উত্তর হাওড়ার বিরানব্বই বছরের গীতা মজুমদার। এক তৃণমূল কর্মীর বাইকে চেপে এসেছেন ময়দানে। সম্প্রতি ধর্না মঞ্চের সামনে হাওড়ার নেতাদের কাছে ‘মাতঙ্গিনী’ নামে পরিচিত ওই বৃদ্ধাকে দেখে কাছে ডেকে নিয়েছিলেন মমতা। জোড়া ফুলের পতাকা শক্ত করে ধরে এ দিন বৃদ্ধা বললেন, ‘‘পুরনো লোকেরা চলে গিয়ে দলকে দুর্বল করার কথা ভাবছেন। দিদি-অভিষেক থাকতে তা হবে না। যাঁদের ক্ষোভ রয়েছে, তাঁদের বোঝাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy