Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Manicktala

হাসপাতাল ফেরত বৃদ্ধকে করোনা-রোগী সন্দেহে ‘মার’

দীর্ঘক্ষণ পরে পাড়ারই এক ব্যক্তি চিনতে পারেন বৃদ্ধকে। মানিকতলারই ক্যানাল ইস্ট রোডের পাশের পাড়ায় তাঁর বাড়ি।

উদ্ধার হওয়ার পরে নারায়ণ চৌরাসিয়া। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার হওয়ার পরে নারায়ণ চৌরাসিয়া। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২২
Share: Save:

পাড়া জুড়ে হুলস্থুল। চার দিক থেকে চিৎকার, “করোনা রোগী! করোনা রোগী! পাড়ায় করোনা রোগী ঢুকে পড়েছে!” কেউ লাঠি হাতে তেড়ে গেলেন তাঁকে তাড়াতে। কেউ আবার বাড়িতে ঢুকে পড়া আটকাতে তিনি কাছাকাছি যেতেই বন্ধ করে দিলেন দরজা-জানলা!

শেষে ক্লান্ত হয়ে মাঝ রাস্তাতেই বসে পড়লেন সেই রোগী। বয়স আনুমানিক সত্তরের বেশি। দু’হাতেই স্যালাইনের চ্যানেল করা। মাথায় সার্জিক্যাল ক্যাপ, মুখে মাস্ক। ডান হাতটা ফুলে রয়েছে। ভিড় থেকে এক জন বেরিয়ে এসে বললেন, “নির্ঘাত করোনার রোগী। কোনও হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছে। খোলা রাখলেই যাকে-তাকে ছুঁয়ে দেবে। তাই বেঁধে রাখা ভাল।” পাড়া খুঁজে দড়ি নিয়ে এসে প্রাণশক্তি প্রায় ফুরিয়ে আসা সেই বৃদ্ধকে এর পরে বেঁধে রাখা হল গাছের সঙ্গে! তাঁকে মারধরও করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

সোমবার সন্ধ্যায় এমনই ঘটনা ঘটেছে মানিকতলার ১৫ নম্বর বস্তিতে। দীর্ঘক্ষণ পরে পাড়ারই এক ব্যক্তি চিনতে পারেন বৃদ্ধকে। মানিকতলারই ক্যানাল ইস্ট রোডের পাশের পাড়ায় তাঁর বাড়ি। করোনায় নয়, লিভারের সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন তিনি। অনেকের মতে, জনমানসে করোনা নিয়ে সচেতনতার কতটা অভাব, এই ঘটনাই ফের তা সামনে নিয়ে এল।

দিন কয়েক আগেই করোনার ভয়ে গিরিশ পার্কের এক রোগীকে জ্বর থাকায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এক অ্যাম্বুল্যান্স চালকের বিরুদ্ধে। তবে করোনার ভয়ে কাউকে বেঁধে রাখার এবং মারধরের এমন অভিযোগ এই প্রথম।

এলাকার লোকজন জানান, খবর দেওয়া হয়েছিল মানিকতলা থানাতেও। সেখানকার পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বলেন, “এই ধরনের রোগীকে আমাদের ধরাটা ঠিক হবে না। লালবাজারের অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হয়েছে। সেই অ্যাম্বুল্যান্সই যেখানে নেওয়ার নিয়ে যাবে।”

তত ক্ষণ অবশ্য বাঁধাই থাকেন বৃদ্ধ। পরে এলাকার এক ব্যক্তি চিনতে পারেন তাঁকে। বৃদ্ধের পাড়ার লোক তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পরে পুলিশও চলে যায়। মানিকতলা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক অবশ্য এ ব্যাপারে দাবি করেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে অবশ্যই দেখছি।”

এ দিন সত্তরোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধের পাড়ায় গিয়ে জানা গেল, তাঁর নাম নারায়ণ চৌরাসিয়া। টালির চালের ঘরে তিনি একাই থাকেন। স্ত্রী-কন্যারা ক্যানাল ইস্ট রোডের কাছেই অন্যত্র থাকেন বহু বছর ধরে। লিভারের সমস্যায় ভোগা বৃদ্ধকে সম্প্রতি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন পাড়ারই লোকজন। খবর পেয়ে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন স্ত্রী। সোমবার সকালেই বৃদ্ধকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে পরিবারের লোকজন চলে যেতেই বেরিয়ে পড়েন বৃদ্ধ। হাঁটতে হাঁটতে চলে যান ১৫ নম্বর বস্তিতে।

কাল কী হয়েছিল, কিছু মনে আছে? তখনও মুখে মাস্ক, হাতে স্যালাইনের চ্যানেল থাকা বৃদ্ধের কথা জড়িয়ে আসে। শুধু বললেন, “করোনা হয়নি আমার, বলেছিলাম আমি। কেউ শোনেনি।” বৃদ্ধের মাথার ক্ষত আর দু’হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে পাড়ার এক জন বললেন, “আমরা গিয়ে দেখি, ওঁকে বেঁধে রেখেছে। খুব মেরেছে। এই বৃদ্ধের কথা ছেড়েই দিলাম। কারও যদি করোনাও হয়, তাঁকে ধরে কি এ ভাবে মারা যায়?”

অন্য বিষয়গুলি:

Manicktala Coronavirus RG Kar Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy