Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

পাটুলিতে বাড়ির পাশের ঝোপে উদ্ধার বৃদ্ধের দেহ

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, নিরঞ্জনবাবু আদতে অসমের বাসিন্দা। একটি বিদ্যুৎ সংস্থার প্রাক্তন কর্মী নিরঞ্জনবাবুর এক পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছেন। তাঁরা রাজ্যের বাইরে থাকেন।

উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরঞ্জন চৌধুরীর দেহ। বুধবার, পাটুলিতে। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরঞ্জন চৌধুরীর দেহ। বুধবার, পাটুলিতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রতিবেশী তরুণীকে ফোন করে বৃদ্ধ বলেছিলেন, ‘‘শরীরটা ভাল নেই। সকালে এসে একবার দেখে যাস।’’ সেই দেখে যাওয়ার অবশ্য সুযোগ হয়নি। বুধবার সকালে পাটুলির বি পি টাউনশিপে নিজের বাড়ির পাঁচিলের পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায় নিরঞ্জন চৌধুরী নামে ওই সত্তরোর্ধ্বের মৃতদেহ। পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এটি আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে করলেও ময়না-তদন্তের রিপোর্ট ছাড়া পুলিশ চূড়ান্ত কিছু বলতে নারাজ। কারণ, গত কয়েক বছরে এই ধরনের একাধিক বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মৃত্যুতে পরবর্তী কালে অন্য তথ্য সামনে এসেছে।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, নিরঞ্জনবাবু আদতে অসমের বাসিন্দা। একটি বিদ্যুৎ সংস্থার প্রাক্তন কর্মী নিরঞ্জনবাবুর এক পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছেন। তাঁরা রাজ্যের বাইরে থাকেন। নিরঞ্জনবাবুর স্ত্রী ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত ডিসেম্বরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এর পর থেকে সন্তানেরা নিরঞ্জনবাবুকে নিজেদের কাছে নিয়ে যেতে চাইলেও কলকাতার বাড়ি ছেড়ে যাননি তিনি। দু’বেলা পরিচারিকা আসতেন। এর পাশাপাশি, বয়স্কদের নিয়ে কাজ করা এক সংস্থার সদস্যেরা তাঁর খোঁজ-খবর নিয়ে যেতেন। এ দিন সকালে তাঁরাই এসে বৃদ্ধকে দেখতে না পেয়ে খোঁজ শুরু করেন। তখনই বাড়ির পাঁচিলের পাশে একটি ফাঁকা জমিতে ঝোপের মধ্যে নিরঞ্জনবাবুর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পাটুলি থানার পুলিশ। থানার আধিকারিক জানান, ওই ঝোপের মধ্যে একটি কলাগাছের পাশে পাশ ফেরা অবস্থায় পড়ে ছিল নিরঞ্জনবাবুর দেহটি। মাথা এবং কোমরের নীচের অংশে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা নিরঞ্জনবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন, মৃতদেহের মাথায় এবং কোমরের নীচের অংশে চোট রয়েছে। থানার পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘উপর থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে তিনি আত্মহত্যা করতে উপর থেকে লাফ দিয়েছিলেন, পড়ে গিয়েছেন, না কি তাঁকে কেউ ফেলে দিয়েছে সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।’’

এ দিন অবশ্য পুলিশ সকালে পৌঁছে দেখে, নিরঞ্জনবাবুর বাড়ি ভিতর থেকে বন্ধ। সামনের এবং পিছনের দরজায় তালা ঝুলছে। গাড়ি বারান্দায় তাঁর গাড়িটিও ছিল। এর পরে পুলিশ তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। তদন্তকারীরা দেখেন, দোতলা বাড়ির প্রতি তলায় চারটি করে ঘর রয়েছে। ছাদের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে আরও দু’টি ঘর রয়েছে। লোহার সিঁড়ি বেয়ে ছাদের ঘরগুলির উপরের ছাদেও ওঠা যায়। তিন তলা উচ্চতার ওই অংশ থেকেই নিরঞ্জনবাবু বাড়ির পাশের জমিতে পড়েছেন বলে তদন্তকারীদের অনুমান। এ ছাড়াও, ঘর থেকে তদন্তকারীরা একটি কাগজ পেয়েছেন বলে সূত্রের খবর। তাতে লেখা রয়েছে, ‘কাজের মেয়েটা ১৫০০ টাকা পায়। দিয়ে দিও। বেশি চাইলে, তা-ই দিও।’

নিরঞ্জনবাবুর এক প্রতিবেশী মধুবন্তী সেনগুপ্ত এ দিন বলেন, ‘‘ওঁরা সে ভাবে পাড়ায় মিশতেন না। স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে নিরঞ্জনবাবুকে আরও বাইরে দেখা যেত না।’’ আর এক প্রতিবেশীর দাবি, ইদানীং প্রায়ই কাজের লোক বদল করতেন নিরঞ্জনবাবু। পুলিশ বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গেও কথা বলছে। এ দিন সকালে তিনি কাজে এসেছিলেন কি না বা এলেও কখন এসেছিলেন, তা জানতে চাওয়া হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Old Man Patuli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy