Advertisement
E-Paper

দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সল্টলেকে ঘরে তালাবন্দি একা বৃদ্ধ, খোঁজ নেই মেয়ের

বিডি ব্লকের ২৫০ নম্বর বাড়িতে থাকেন ওই বৃদ্ধ সুনীল দত্তগুপ্ত। এক সময়ে কৃষি দফতরে চাকরি করতেন। বাড়িতে তাঁর সঙ্গে থাকতেন মেয়ে সর্বাণী দত্তগুপ্ত। ইদানীং তাঁকেও দেখা যাচ্ছে না।

A Photograph of an old man locked in the house

তালাবন্দি: বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই বৃদ্ধ (চিহ্নিত)। শুক্রবার।  নিজস্ব চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০০
Share
Save

মাঝেমধ্যে তাঁকে বারান্দায় ঘুরতে দেখছেন প্রতিবেশীরা। দিনে দু’বেলা বারান্দার গ্রিলে ঝোলানো ব্যাগে খাবার ভরে দিলে, তিনি তুলেও নিচ্ছেন। এক-এক দিন সন্ধ্যায় তাঁর কান্না শুনতে পাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এমনই পরিস্থিতি সল্টলেকের বিডি ব্লকের একটি বাড়িতে। সেখানে একাই রয়েছেন ‘তালাবন্দি’ বৃদ্ধ মালিক। কিন্তু, কেন তিনি তালাবন্দি, তা বলতে পারছেন না। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বৃদ্ধকে উদ্ধার করতে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।

বিডি ব্লকের ২৫০ নম্বর বাড়িতে থাকেন ওই বৃদ্ধ সুনীল দত্তগুপ্ত। এক সময়ে কৃষি দফতরে চাকরি করতেন। বাড়িতে তাঁর সঙ্গে থাকতেন মেয়ে সর্বাণী দত্তগুপ্ত। কিন্তু, ইদানীং তাঁকেও দেখা যাচ্ছে না। প্রতিবেশীদের দাবি, মেয়েই বাবাকে তালাবন্দি করে চলে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। পুলিশ ও স্থানীয় ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি রত্না ভৌমিকের সঙ্গে পড়শিরা যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু, বৃদ্ধকে উদ্ধার করা যায়নি। আপাতত তাঁকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন প্রতিবেশীরাই। এ দিন সর্বাণীর ফোন বন্ধ ছিল। উত্তর মেলেনি মেসেজেরও।

পুরপ্রতিনিধি জানান, আজ, শনিবার এ নিয়ে তিনি মহকুমাশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন। রত্না বলেন, ‘‘বৃদ্ধের মেয়ে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছেন। ফোন বন্ধ রাখায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। তালা ভাঙা নিয়ে আইনি সমস্যা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মহকুমাশাসকের সঙ্গে কথা বলব। আপাতত বৃদ্ধকে খাবার দিচ্ছেন পড়শিরা। তাঁর মানসিক কোনও সমস্যা আছে কি না, সেটাও দেখতে হবে।’’

বৃদ্ধকে নিয়ে উদ্বেগে প্রতিবেশীরাও। তাঁদের মতে, বন্ধ বাড়িতে বৃদ্ধের ভালমন্দ কিছু ঘটলে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক হবে। আশপাশের বাসিন্দারা জানান, বৃদ্ধ সম্ভবত মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। মেয়ে কোথায়, কেন বাবাকে তালাবন্ধ করে তিনি চলে গিয়েছেন— কিছুই জানাতে পারছেন না তিনি। প্রতিবেশী কিংশুক গুপ্ত বলেন, ‘‘রাতে মানুষটি খুব কান্নাকাটি করেন। খারাপ লাগে দেখে। উনি বারান্দায় এলে আমরা জিজ্ঞাসা করি, কেন এই অবস্থা? কিন্তু বৃদ্ধ অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। কখনও বলেন, মেয়ে বন্ধ করে রেখে গিয়েছেন। কখনও বলেন, দুষ্কৃতীরা আটকে রেখেছে।’’ প্রতিবেশীরা জানান, বৃদ্ধের বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। কারণ, বাড়িতে সম্ভবত জল নেই। বৃদ্ধ প্রাকৃতিক কাজকর্ম ঘরেই সারছেন। এ দিন বিধাননগর উত্তর থানায় খবর দেন বাসিন্দারা। বিকেলে লোহার গেটের বাইরে থেকেই পাম্প চালায় পুলিশ। এ দিন বিকেলে স্থানীয়েরা বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কি অসুস্থ? হাসপাতালে যেতে চান? বৃদ্ধকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি ভাল আছি। মেয়ে চলে আসবে।’’

পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বৃদ্ধ না চাইলে তাঁকে তালা ভেঙে বার করলে আইনি জটিলতা হতে পারে। ওই বাড়ির নীচে পুলিশের গাড়িও রয়েছে। পুলিশ নজর রেখেছে। বৃদ্ধ নিজেই বাড়ি থেকে বেরোনোর ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। তাঁর কোনও রকম মানসিক সমস্যা আছে কি না, বোঝা যাচ্ছে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Old Man Salt Lake police

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}