Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Old Man Died

মায়ের পারলৌকিক কাজে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু বৃদ্ধের

জানা গিয়েছে, ওই এলাকার একটি তেতলা বাড়িতে সপরিবার থাকতেন ওই বৃদ্ধ। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূ।

স্বপন বিশ্বাস।

স্বপন বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৫৭
Share: Save:

দশ দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধা মায়ের। কলাপাতায় খাদ্যদ্রব্য সাজিয়ে বছর সত্তরের ছেলে তেতলা বাড়ির ছাদে উঠেছিলেন মায়ের পারলৌকিক কাজ সারতে। তখনই কোনও ভাবে ছাদ থেকে সরাসরি নীচে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল তাঁর। শনিবার বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে মানিকতলা থানা এলাকার বিপ্লবী বারীন ঘোষ সরণিতে। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতের নাম স্বপন বিশ্বাস (৭০)। ঘটনার সময়ে একতলায় কল থেকে জল ভরার কাজ করছিলেন এক মহিলা। বৃদ্ধ পড়ে যাওয়ার সময়ে তাঁর শরীরের খানিকটা অংশ গিয়ে পড়ে ওই মহিলার গায়ের উপরে। গুরুতর জখম মহিলাকে এর পরে ভর্তি করানো হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।

জানা গিয়েছে, ওই এলাকার একটি তেতলা বাড়িতে সপরিবার থাকতেন ওই বৃদ্ধ। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূ। এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পর পর গা ঘেঁষাঘেষি করে উঠেছে বাড়ি। একাধিক টালির চালের ঘরও রয়েছে আশপাশে। বৃদ্ধ যে বাড়িতে থাকেন, সেটির একতলায় একাধিক ঘর রয়েছে। তারই একটিতে স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন ওই বৃদ্ধ। জানা গিয়েছে, বাড়িটির একাধিক শরিক রয়েছেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে বাড়ি ভাগাভাগি করে ছাদ ঢালাই করেছেন। তাই ছোট জায়গার মধ্যেই রয়েছে একাধিক সিঁড়ি। কোনও রকম রেলিং ছাড়া সেই সিঁড়ির ধাপের উচ্চতাও সমান নয়। মৃত বৃদ্ধের পুত্রবধূ অঙ্কিতা বিশ্বাস বললেন, ‘‘একতলার ঘরে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি থাকলেও দোতলা ও তেতলায় আমাদের ঘর রয়েছে। দোতলার ঘরে আমার স্বামীর ঠাকুরমা থাকতেন। তেতলায় আমরা থাকি। ঠাকুরমার মৃত্যুর পরে ওই ঘরেই ১০ দিনের নিয়মকাজ চলছিল। সেখান থেকেই ছাদে কলাপাতায় খাবার দিতে গিয়েছিলেন আমার শ্বশুর। তাতেই এই কাণ্ড!’’

অঙ্কিতা জানান, একতলায় সে সময়ে কল থেকে জল ভরছিলেন একতলার একটি ঘরের বাসিন্দা শুভ্রা সরকার। হঠাৎ জোরে কিছু নীচে পড়ার শব্দ পেয়ে সকলে বেরিয়ে এসে দেখেন, ওই বৃদ্ধ উল্টো হয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছেন। পাশেই পড়ে রয়েছেন শুভ্রাও। ওই মহিলাই এর পরে কোনও মতে সকলকে জানান, বৃদ্ধ উপর থেকে তাঁর গায়ের উপরে এসে পড়েছেন। দ্রুত এর পরে দু’জনকে উদ্ধার করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা বৃদ্ধকে মৃত ঘোষণা করেন।

এর পরে কোনও মতে ছাদ পর্যন্ত ওঠার সময়ে দেখা যায়, প্রতি তলে ঘুপচি ঘর করা হয়েছে। বাড়ির মাঝখানে থাকা ছোট্ট বারান্দা ঘিরে তৈরি হয়েছে ঘরগুলি। বারান্দার ওই ফাঁকা জায়গা রয়েছে ছাদেও। সেখানেই একপাশে পড়ে কলাপাতা, কাকের দল ঘিরে রয়েছে সেটিকে। তা দেখিয়েই ওই বৃদ্ধের স্ত্রী দুর্গা বিশ্বাস বললেন, ‘‘এই ভাবে সব শেষ হয়ে যাবে ভাবিনি।’’ পাশে দাঁড়ানো এক প্রতিবেশী বললেন, ‘‘বাড়িওয়ালারা নিজেদের মধ্যে এমন ভাবে ভাগাভাগি করেছেন যে, ঘরের উপরে ঘর উঠেছে। সিঁড়ির এমন বিপজ্জনক অবস্থা, যে কোনও দিন বিপদ ঘটতে পারত।’’ এর মধ্যেই কান্না থামিয়ে অঙ্কিতার দাবি, ‘‘বাচ্চা নিয়ে নামার সময়ে আমিও এই সিঁড়ি দিয়ে একবার পড়ে গিয়েছি। কোনও মতে সে বার রক্ষা পেয়েছি।’’

ঘটনাস্থল কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার পুর প্রতিনিধি অমল চক্রবর্তী বললেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা। বাড়ির নির্মাণের দিক থেকে কিছু সমস্যা থাকলে দ্রুত দেখে নেওয়া হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Manicktala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy