চিকিৎসা: রোগী সমরজিৎ দাসকে নিয়ে মল্লিকবাজারের হাসপাতালে পৌঁছল অ্যাম্বুল্যান্স। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ব্রেন ডেথের পরে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এর আগে গ্রিন করিডর হলেও, এই প্রথম সঙ্কটজনক রোগীর ক্ষেত্রে গ্রিন করিডর করা হল কলকাতায়। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার সেই আয়োজনেই প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে ট্র্যাফিকের লালবাতিতে মিনিট চারেক আটকে রইল অ্যাম্বুল্যান্স।
ট্যাংরার শীল লেনের বাসিন্দা, ৬৯ বছরের সমরজিৎ দাস বন্ধুদের সঙ্গে মানস সরোবর ঘুরতে গিয়েছিলেন। রোগীর ভাগ্নে প্রদীপ্ত রায় মঙ্গলবার জানান, দিন চারেক আগে ঘোরার সময়ে সমরজিৎবাবু ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাঁকে নেপালগঞ্জের এক নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় লখনউয়ের সঞ্জয় গাঁধী ইনস্টিটিউটে। ঘটনার সময়ে রোগীর নিকটাত্মীয় কেউ সঙ্গে ছিলেন না। সে কারণে কলকাতার বাসিন্দা ওই বাঙালি পর্যটককে এখানকার কোনও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানোর কথা ভাবা হয়।
মল্লিকবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার জানান, রোগীকে এখানে ভর্তি করানো যাবে কি না সে বিষয়ে সমরজিৎবাবুর পরিজনেরা সোমবার সন্ধ্যায় কথা বলেন। হৃষিকেশবাবু বলেন, ‘‘রোগীকে আনা হবে, সেই তথ্য ছিল। কিন্তু তার জন্য যে গ্রিন করিডর করা হয়েছে, সেটা আমাদের জানা ছিল না।’’ কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, বিধাননগর কমিশনারেটের তরফে বার্তা পেয়ে তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু গ্রিন করিডরের জন্য অনুরোধ কোথা থেকে এসেছিল, তা এ দিন অন্তত স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি বিধাননগর কমিশনারেট।
ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার দুপুরে সেই রোগীরই অ্যাম্বুল্যান্স উল্টোডাঙায় যানজটের গেরো এড়াতে পারল না। পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে কলকাতায় পৌঁছনোর পরে সকাল ১১টা নাগাদ সড়কপথে রোগীকে নিয়ে মল্লিকবাজারের ওই হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেয় অ্যাম্বুল্যান্স। এর জন্য সকাল থেকে ইএম বাইপাস এবং সংশ্লিষ্ট ট্র্যাফিক গার্ডগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছিল লালবাজার। ঠিক ছিল, ভিআইপি রোড ধরে উল্টোডাঙা উড়ালপুলে উঠবে অ্যাম্বুল্যান্স। সেখান থেকে বাইপাস, মা উড়ালপুল ধরে নিউ পার্ক স্ট্রিট হয়ে হাসপাতালে পৌঁছবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, উল্টোডাঙা উড়ালপুল ধরার মুখেই তাল কাটে গ্রিন করিডরের। অ্যাম্বুল্যান্স চলে যায় উল্টোডাঙার স্লিপ রোডে। সে সময়ে ওই রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা
হচ্ছিল। ফলে সেই ভিড়ে আটকে যায় রোগীর অ্যাম্বুল্যান্স। এই পরিস্থিতিতে যানজট ছাড়িয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের পথ মসৃণ করতে তৎপর হয় কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। প্রায় চার মিনিট মতো যানজটে আটকে ছিল অ্যাম্বুল্যান্সটি।
বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, উল্টোডাঙা উড়ালপুলে হাইট বার থাকায় অ্যাম্বুল্যান্সটি যে সেখানে আটকে যেতে পারে, সে কথা তাদের তরফে কলকাতা পুলিশকে জানানো হয়েছিল। যদিও কলকাতা পুলিশের তরফে দাবি, তাদের কাছে সেই বার্তা পৌঁছয়নি। অন্য দিকে অ্যাম্বুল্যান্সটির চালক তপু দাস জানিয়েছেন, তিনি পাইলট কার-কে আগেই জানিয়েছিলেন, উল্টোডাঙা উড়ালপুলের হাইট বারে আটকে যাবে তাঁর গাড়ি।
শেষমেশ সকাল ১১টা ৩৮ নাগাদ মল্লিকবাজারের হাসপাতালে পৌঁছয় অ্যাম্বুল্যান্স। এর পরে সমরজিৎবাবুকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা শুরু হতে বেলা ১২টা বেজে যায়। বিধাননগর কমিশনারেটের একাংশের বক্তব্য, বোঝাপড়ার অভাবে অ্যাম্বুল্যান্স উড়ালপুলের পরিবর্তে উল্টোডাঙার স্লিপ রোড ধরে। দ্রুত পদক্ষেপ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে।
এ দিনই সমরজিৎবাবুর অস্ত্রোপচার হয়। মেডিক্যাল বুলেটিনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, বৃদ্ধের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পরিজনেরা জানান, সমরজিৎবাবুর হার্টের অসুখ বা রক্তচাপের সমস্যা ছিল না। তবে পাহাড়ি এলাকায় অক্সিজেনের অভাবে ব্রেন স্ট্রোকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি চিকিৎসকেরা। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রোগীর অস্ত্রোপচার জরুরি ছিল। স্ট্রোকে মস্তিষ্কের যে অংশের ক্ষতি হয়েছে, তার চারপাশ ক্রমাগত ফুলে অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে প্রতিটা মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিন করিডর করে যে ভাবে রোগীকে আনা হয়েছে, তার জন্য পুলিশের প্রশংসা প্রাপ্য।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy