দীপঙ্কর সাহা। নিজস্ব চিত্র
পুলিশের মারে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। অভিযোগের তির গল্ফ গ্রিন থানার দিকে। শুক্রবার কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনারের (এসএসডি) কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃত দীপঙ্কর সাহার (৩৪) পরিজনেরা।
দীপঙ্করের বাড়ি গল্ফ গ্রিন থানার আজাদগড়ে। পরিবারের অভিযোগ, গত রবিবার ওই যুবককে তুলে নিয়ে যায় গল্ফ গ্রিন থানার পুলিশ। মারধর করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জখম অবস্থায় বাড়ি ফেরেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে অবস্থা খারাপ হলে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নেওয়া হয় দীপঙ্করকে। সেখানেই শুক্রবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, পুলিশি অত্যাচারেই মৃত্যু হয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, এক জন ডেপুটি কমিশনার অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন। ওই যুবককে মারধরের প্রমাণ মিললে দোষী পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দিন সন্ধ্যায় তিন চিকিৎসকের নেতৃত্বে গড়া একটি দল এসএসকেএমে দীপঙ্করের দেহের ময়না-তদন্ত করে। যার ভিডিয়োগ্রাফিও করা হয়েছে। পরে দেহ পরিবারের হাতে দেওয়া হয়।
ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, ওই যুবকের নিতম্বে ও দুই হাতে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। আঘাতগুলি দু’-তিন দিনের পুরনো। দীপঙ্করের হার্ট ও লিভার বড় ছিল। ভিসেরা এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
দিলীপ সাহা ও আরতি সাহার ছোট ছেলে দীপঙ্কর। এ দিন আরতি বলেন, ‘‘রবিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ দু’জন উর্দিধারী এসে জানান, তাঁরা গল্ফ গ্রিন থানার পুলিশ। দীপঙ্করকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ওকে আটক বা গ্রেফতারির কোনও নথি ওঁরা দেখাননি।’’ আরতির আরও দাবি, ‘‘রাতে ফিরে দীপঙ্কর জানায়, পুলিশ ওকে বিনা কারণে প্রচণ্ড মারধর করেছে। সেই সঙ্গে হুমকি দিয়েছে, এ বিষয়ে কাউকে জানালে মাদকের কেস দিয়ে সারা জীবন জেলে পচাবে।’’ পরিবারের অভিযোগ, দীপঙ্করের নিতম্বে এবং ডান হাতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। রবিবার রাতে তিনি যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। বুধবার রাতে তাঁকে একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে দেখানো হয়। দাদা রাজীব বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে ওকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’’
লালবাজার জানিয়েছে, ওই যুবক মাদকাসক্ত ছিলেন। পরিবার দুপুরে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও পুলিশের দাবি, দীপঙ্কর-সহ পাঁচ জনকে রবিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, রাত ১০টা ২৬ মিনিটে থানায় ঢোকানো হয় তাঁদের। ১০টা ৫৬ মিনিটে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, দীপঙ্কর হেঁটে বেরোনোর সময়ে কোনও রকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা যায়নি। এক পুলিশকর্তার দাবি, ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
দীপঙ্করের মাদকাসক্তির অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে পরিবার। পিসতুতো বোন সাহানা সরকারের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই ও মাদকাসক্ত ছিল, তা হলেও কি পুলিশ এ ভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে পেটাতে পারে?’’ পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ বাড়ি থেকে দীপঙ্করকে তুলে সোজা থানায় নিয়ে যায়নি। তাঁকে গাড়িতে করে ঘোরানো হয়েছিল। দীপঙ্করের মেজো বৌদি শ্রাবণী সাহার দাবি, ‘‘দীপঙ্কর সন্ধ্যাতেও না ফেরায় কাকা প্রদীপ সাহা ওকে ফোন করেন। দীপঙ্কর জানায়, তখনও থানায় নেওয়া হয়নি। গাড়িতে ঘোরানো হচ্ছে। পরে আবার ফোন করা হলেও দীপঙ্কর ধরেনি।’’
দীপঙ্করেরা তিন ভাই, এক বোন। দীপঙ্করের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছিল। আগে পুদুচ্চেরিতে কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। পাঁচ বছর আগে ফিরে এখানে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে পারিবারিক স্টেশনারি দোকানে বসতেন তিনি। আরতি বলছেন, ‘‘ছেলে আর ফিরবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে কোনও মায়ের কোল এ ভাবে খালি না হয়, সেই জন্য দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy