রবিবেলার ইডেন গার্ডেন্সের ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে এমনই টিকিটের কালোবাজারি চলেছে বলে অভিযোগ।
বয়স ষাটের কোঠায়। সাধারণ পোশাকের প্রৌঢ়কে দেখে বোঝা যাবে না, কেন তিনি ইডেন গার্ডেন্স চত্বরে ঘোরাঘুরি করছেন! স্টেডিয়ামের লোহার গেটে হুমড়ি খেয়ে পড়া ভিড় থেকে কয়েক জনকে ডেকে ফাঁকায় নিয়ে গিয়ে প্রৌঢ় বললেন, ‘‘টিকিট চাই? লাইফ মেম্বারদের দুটো আছে।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘দু’বছর পরে ইডেনে খেলা। করোনাকে হারিয়ে ঐতিহাসিক ম্যাচ। টিকিটের দাম নিয়ে অত ভাবলে চলে!’’ যে টিকিট তিনি দিতে চাইছেন, তার আসল দাম অবশ্য জানার উপায় নেই। দরদামের শেষ মুহূর্তে প্রৌঢ় বলে ওঠেন, ‘‘নেওয়ার অনেক লোক আছে। দুটো টিকিট দশ হাজার পড়বে।’’
রবিবেলার ইডেন গার্ডেন্সের ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে এমনই টিকিটের কালোবাজারি চলেছে বলে অভিযোগ। যা শুরু হয়েছিল শনিবার দুপুর থেকে। এমনিতেই সরকারি ঘোষণা মতে, ৭০ শতাংশ দর্শক নিয়ে খেলা হয়েছে। ফলে ৬৮ হাজার দর্শকাসন বিশিষ্ট ইডেনে লোক বসতে পেরেছে ৪৭,৬০০। সিএবি-র এক কর্তা জানাচ্ছেন, ইডেনের সঙ্গে ক্লাবগুলি এবং লাইফ মেম্বারেরা নিজেদের ৩০ শতাংশ টিকিট প্রথমেই নিয়ে নিয়েছিলেন। গত মঙ্গলবার বিক্রি শুরু হওয়া প্রথম দেড় হাজার টিকিট উবে যায় ১৫ মিনিটেই! পরের দিকে ম্যাচের টিকিট ঘিরে হাহাকার আরও বাড়ে। সেই সুযোগে লকডাউন পরবর্তী এই ম্যাচ ঘিরে দেদার টিকিট দুর্নীতি চলেছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, পরিস্থিতি বুঝে আগেই গুন্ডা দমন শাখা ও ময়দান থানাকে সতর্ক হতে বলা হয়েছিল। শুক্রবার থেকেই ইডেন চত্বরে সাদা পোশাকের পুলিশের নজরদারি শুরু হয়। গেটের কাছে কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেখলেই ক্রেতা সেজে তাঁর কাছে পৌঁছে গিয়েছেন সাদা পোশাকের পুলিশকর্মী। প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘‘টিকিট আছে?’’ গরমিল বুঝলেই হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। ময়দান থানা সূত্রের খবর, এ ভাবে শনিবার ইডেন চত্বর থেকে ধরা পড়েছেন ছ’জন। এ দিন খেলার আগে ধরা হয় আরও পাঁচ জনকে। সব মিলিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৬২টি টিকিট। কিছু নগদ উদ্ধার হলেও সে সম্পর্কে পুলিশের তরফে রাত পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি।
খেলা শুরুর আগে ইডেন চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, টিকিট হাতে বহু লোকের জটলা। রাস্তায় পুলিশ পাহারায় থাকলেও ভয়ডরহীন তাঁদের চালচলন। খোঁজ করে জানা গেল, ৪৫০-৫০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকায়। লাইফ মেম্বারদের টিকিটের ক্ষেত্রে কেউ চাইছেন পাঁচ হাজার, কোনওটির দাম উঠছে বারো হাজারেরও বেশি। চোরাগোপ্তা টিকিট বিক্রিতে ব্যস্ত সেই প্রৌঢ় বললেন, ‘‘আমরা যাঁরা দল বেঁধে কাজ করি, তাঁরা বেছে বেছে কমবয়সিদের কাজে নিই না। কারণ, পুলিশ টিকিট ব্ল্যাক হচ্ছে বুঝলে ওই বয়সিদেরই বেশি ধরে। বয়স্ক দেখলে সন্দেহ কম হয়।’’ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাওয়া এক যুবকের আবার দাবি, ‘‘করোনায় কাজ চলে গিয়েছে। ইডেনের কাছেই খাবারের স্টল ছিল আমার। কবে আবার ম্যাচ হবে, এই ভেবে ক’টা টিকিট কেটে বেশি দামে বিক্রি করতে নেমে পড়েছিলাম।’’
পুলিশের দাবি, এই টিকিট দুর্নীতির সঙ্গেই এ দিন কিছু জায়গায় চলেছে ম্যাচের ফলাফল ধরে জুয়া খেলা। কয়েকটি জায়গায় হানা দিয়ে কয়েক জনকে আটকও করা হয়েছে। তবে রাত পর্যন্ত তাঁদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখার এক তদন্তকারী আধিকারিক বললেন, ‘‘ম্যাচের পরেও মাঠের বাইরে নজরদারি চলেছে। বহু দিন পরে মাঠে বল গড়ানোয় এমনটা যে হতে পারে, সেই আশঙ্কা ছিলই। কিছু ক্ষেত্রে সেটাই সত্যি হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy