Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
De-Addiction Center

নামেই মুক্তিকেন্দ্র, লাঠির ঘা আর গোপনীয়তায় বন্দি নেশা

রোগীর আত্মীয়দের দাবি, সেখানে সবই চলে গোপনীয়তা মেনে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ০২:৩৩
Share: Save:

পরিকাঠামো, এবং বৈধ কাগজ ছাড়াই শহর এবং শহরতলি জুড়ে রমরমিয়ে নেশামুক্তি কেন্দ্র চলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। টানা লকডাউনে সেই সব আবাসিকেরা কেমন আছেন? গত শুক্রবার, ২৬ জুন ছিল আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস। ওই দিন থেকে রবিবার পর্যন্ত একাধিক নেশামুক্তি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেল, নিয়ম না মানার পুরনো রোগ নিয়ে করোনা সতর্কতা বিধিও হেলায় উড়ছে সেখানে!

রোগীর আত্মীয়দের দাবি, সেখানে সবই চলে গোপনীয়তা মেনে। আবাসিকদের পরিজনদেরও কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। করোনা সংক্রমণের দোহাই দিয়ে সেই প্রবণতা আরও বেড়েছে। অভিযোগ, সেই গোপনীয়তার সুযোগে রোগীকে নির্দিষ্ট ওষুধ বার বার দিয়ে উল্টে সেই ওষুধেরই নেশা ধরানো হচ্ছে, কোথাও আবার চিকিৎসাধীন রোগীকে মারধর করে বাধ্য করা হচ্ছে মালিকের বাড়ির কাজ করতে!

ওঁদের খোঁজ নিতে প্রথম গন্তব্য ছিল, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে একটি পুরনো বাড়ি। যার দু’টি তলের চারটি ঘর ভাড়ায় নিয়ে চলছে একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র। কেন্দ্রের মালিক মিন্টু কর্মকার একটি ঘরে থাকেন। বাকি তিনটিতে ছ’জন করে আবাসিকের ভিড়। সকলেরই ভরসা একটি শৌচালয়! ঢোকার আগেই পথ আটকান প্রাক্তন আবাসিক পরিচয় দেওয়া মাস্ক ছাড়া তিন যুবক। আত্মীয়কে রাখার জন্য ভিতরের বন্দোবস্ত দেখতে চাওয়ায় তাঁরা ডাকেন মিন্টুবাবুকে। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বাস করেই রাখতে হবে। ভিতরে দেখতে দেওয়া যাবে না।’’ করোনা-বিধি কী ভাবে মানা হয়? মিন্টুবাবু বলেন, ‘‘নেশা করেন যাঁরা, তাঁদের আবার করোনা!’’ কেন্দ্রের কাগজ রয়েছে? তাঁর অকপট উত্তর, ‘‘নেশামুক্তি কেন্দ্রের রেজিস্ট্রেশন হয় না। সোসাইটি অ্যাক্ট আছে, কিন্তু তাতে নেশামুক্তি কেন্দ্র খোলা যায় না।’’

নিয়মকানুন

• মানসিক সমস্যায় ভোগা রোগী আর নেশাগ্রস্তদের আলাদা রাখা বাধ্যতামূলক

• ন্যূনতম ১৪ ফুট বাই ১২ ফুটের ঘর থাকতেই হবে। ঘরে সর্বাধিক তিন জন আবাসিককে রাখা যাবে

• ভবনের দমকলের ছাড়পত্র, ফুড লাইসেন্স থাকা প্রয়োজন

• সর্বক্ষণ থাকতে হবে এক জন চিকিৎসক ও দু’জন নার্স

• রাখতেই হবে সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তাকর্মী

• স্থানীয় থানায় নতুন আসা আবাসিকদের সম্পর্কে তথ্য জানাতেই হবে

পরের গন্তব্য ভিআইপি রোড। রাস্তা সংলগ্ন একটি বাড়ির একতলার হল ঘর ভাড়ায় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে নামহীন নেশামুক্তি কেন্দ্র। থাকছেন ১২ জন। নাম ছাড়াই কেন্দ্র চলছে? মালিক সোনু ঝাঁ বললেন, ‘‘আয় বেশি নেই, নাম দিয়ে কী হবে! করোনার জন্য নতুন কাউকে নিচ্ছি না। যাঁরা আছেন, তাঁদেরই ডাক্তার দেখাতে পারছি না!’’ এর পরেই সোনুর স্বীকারোক্তি, ‘‘খুব নেশা উঠলে লাঠি পিটিয়ে বা বেঁধে শায়েস্তা করতে হচ্ছে। এ ভাবে কত দিন পারব জানি না। লকডাউনের পর থেকে বহু রোগীর বাড়ির লোক এখনও টাকা পাঠাননি।’’

গড়িয়ার একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে আবার দেখা গেল, নেশাগ্রস্তদের সঙ্গেই থাকছেন মানসিক সমস্যায় ভোগা কয়েক জন! করোনা সতর্কতা দূর, নিয়ম মেনে সেখানে সর্বক্ষণের নার্সও নেই। মালিক স্নেহময় দত্তের নির্বিকার মন্তব্য, ‘‘মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে নিই। তার মধ্যে নার্স রাখলে আর কী থাকবে!’’

আরও পড়ুন: করোনা প্রতিরোধে বাড়তি বর্ম ফৌজে

সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, নেশামুক্তি কেন্দ্রের অনুমতি দেন না তাঁরা। ‘সোসাইটি অ্যাক্ট ১৯৬১’-এর ভিত্তিতে এই ধরনের কেন্দ্র চালানোও যায় না। মানসিক রোগীদের রেখে কাজ করার অনুমোদন নিলে তবেই সেখানে নেশামুক্তির কাজ চালানো যায়। সে ক্ষেত্রেও নেশাগ্রস্তদের আলাদা রাখাই বাধ্যতামূলক। ১৪/১২ ফুটের ঘরে সর্বাধিক তিন জনকে রাখার নিয়ম। ভবনের জন্য দমকলের ছাড়পত্র এবং ফুড লাইসেন্স থাকাও আবশ্যিক। সর্বক্ষণের এক জন চিকিৎসক ও দু’জন নার্স রাখাও বাধ্যতামূলক।

এ সব ছাড়া নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলি চলছে কী করে? রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘বিষয়টি পুলিশই ভাল বলতে পারবে।’’ কলকাতা পুলিশের কোনও কর্তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক শুধু বলেন, ‘‘সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

De-Addiction Center Addiction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy