Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
SSKM

PG hospital: প্রশ্নে বিদ্ধ পিজিতে এ বার স্বজনপোষণের অভিযোগও

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক পরীক্ষা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে এসএসকেএম হাসপাতাল।

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২২ ০৬:৩২
Share: Save:

শাসকদলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক পরীক্ষা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে এসএসকেএম হাসপাতাল। এই প্রতিষ্ঠান ও সেখানকার চিকিৎসকদের ভাবমূর্তি নিয়ে যে ভাবে সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে, তাতে বেজায় বিব্রত ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। তাঁরা বলছেন, “নিজেদের প্রতিষ্ঠানের অবমাননা এ ভাবে মানা যায় না।” তবু বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না পিজির।

পিজির রিপোর্টকে মান্যতা না দিয়ে প্রথমে পার্থের শারীরিক পরীক্ষা করাতে তাঁকে ভুবনেশ্বর এমসে পাঠানোর নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে পিজি-কে প্রভাবশালীদের ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ হিসাবেও উল্লেখ করেন বিচারপতি। এর পরে সোমবার ভুবনেশ্বর এমস জানায়, পার্থকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার প্রয়োজন নেই। তবে পুরনো ক্রনিক অসুখগুলির জন্য তাঁকে চিকিৎসা ও ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। এর পর থেকেই কড়া সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে পিজি। কী করে সেখানে পার্থকে ভর্তি রাখা হল— সেই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষও। চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি সমাজের একটা বড় অংশের এই ‘অসম্মান’ ও ‘অবিশ্বাসে‌’ মর্মাহত পিজির বেশির ভাগ চিকিৎসক। প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে না চাইলেও তাঁদের দাবি, শারীরিক অবস্থা দেখে প্রয়োজন মনে হওয়ার কারণেই ভর্তি করা হয়েছিল পার্থকে। সেখানে চিকিৎসকদের কাঠগড়ায় তোলা ঠিক নয়।

তবে অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে আরও একটি প্রশ্ন— কেউ অসুস্থ হলে যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল, তাঁর কাছেই তিনি যেতে বা ভর্তি হতে পছন্দ করেন। কিন্তু পুরনো রোগের জন্য আগে পিজিতে চিকিৎসা করাননি পার্থ। তা হলে ইডি-র হাতে গ্রেফতারের পরে তিনি সেখানে ভর্তি হতে চাইলেন কেন?

অনেকের এ-ও প্রশ্ন, ‘প্রভাবশালী’ মন্ত্রী হিসেবে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগের জন্যই কি পিজি-কে বেছে নিয়েছিলেন পার্থ? সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, “চিকিৎসক সমাজের অতি ক্ষুদ্র অংশ, যাঁরা রাজনৈতিক চাপ বা অন্য কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যে পেশাগত ঋজুতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাঁদের পর্যালোচনা দরকার। তেমনই সরকার ও শাসকদলের মতো রাজনৈতিক শক্তি যারা অনভিপ্রেত চাপ দেওয়াকে নিয়মে পরিণত করেছেন, তারাও এই অসম্মানের দায় এড়াতে পারে না।”

পার্থকে ভর্তি করার ক্ষেত্রে দুই হাসপাতালের ভিন্ন মত নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনই এই পরিস্থিতিতে পিজি হাসপাতালের কার্ডিয়োলজি বিভাগে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠছে খোদ চিকিৎসকদের সংগঠন থেকেই। কী ভাবে এক জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-চিকিৎসক বহু বছর ধরে বিভাগীয় প্রধানের পদে রয়েছেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। পিজির কার্ডিয়োলজি বিভাগের প্রধান শঙ্করচন্দ্র মণ্ডল ২০১৭ সালে অবসর নিয়েছেন। সূত্রের খবর, তাঁকে কয়েক বার পুনর্নিয়োগ করা হয়। প্রতি বারই তিনি বিভাগীয় প্রধান হয়েছেন। আগামী মাসে তাঁর পুনর্নিয়োগের দু’বছরের মেয়াদ শেষ হবে। সূত্রের খবর, ফের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছেন ওই শিক্ষক-চিকিৎসক। যদিও সরকারি নথি অনুযায়ী গত এপ্রিলে তাঁর ৭০ বছর বয়স হয়েছে।

মানসবাবুর কথায়, “কোন বরিষ্ঠ শিক্ষক-চিকিৎসক বিভাগীয় প্রধান হবেন, তা ঠিক করেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২০২০-তে শঙ্করবাবুকে সরাসরি বিভাগীয় প্রধানের পদে পুনর্নিয়োগ দেয় স্বাস্থ্য ভবন, যেটা নিয়মবিরুদ্ধ।” তাঁর আরও বক্তব্য, “যেখানে শিক্ষক-চিকিৎসক বা মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন চলছে, তরুণ চিকিৎসকেরা রাস্তায় নামছেন, সেখানে এক জন বিশেষ চিকিৎসককে বারবার পুনর্নিয়োগ করা হবে কেন? প্রতি বার পোস্টিং পিজিতেই হবে কেন? বিশেষ কাউকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিলে প্রশ্ন উঠবেই।”

‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের কথায়, “শঙ্করবাবু কোনও মেডিক্যাল বোর্ডে থেকে যদি কাউকে শংসাপত্র দেন, তা হলে সেটা আইনত কতটা বৈধ তা নিয়েই বড় প্রশ্ন থেকে যায়। এ ভাবে অন্য যোগ্যতম ব্যক্তিদের বঞ্চিত করা হলে কর্মসংস্কৃতি থাকে না।”

রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা তথা পিজির প্রাক্তন অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের কথায়, “অবসরের পরে বিভাগীয় প্রধান থাকা পুরোপুরি নিয়মবিরুদ্ধ। ওঁর বয়সও অনেক, তা-ও কী করে থাকছেন জানা নেই।” তিনি আরও জানাচ্ছেন, অবসরের পরেও বার বার পুনর্নিয়োগ ও পদে থাকার ঘটনা এ রাজ্যে বিরল নয়। তাতেই চিকিৎসক মহলের একাংশের প্রশ্ন, রাজ্যের উত্তর প্রান্তের চিকিৎসকদের ক্ষমতাশালী কোনও গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই কি বিশেষ সুযোগ পেয়ে চলেছেন ওই অবসরপ্রাপ্তেরা?

যদিও শঙ্করবাবুর প্রতিক্রিয়া, “কে কী বলছেন, জানি না। সরকার যে ভাবে কাজ করতে বলছে, সে ভাবেই করছি। মানুষের জন্য কাজ করছি। এর মধ্যে অন্য কিছু নেই।”

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy