Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Barasat

হাসপাতালে মজুত রক্তের ফ্যাক্টর, না পেয়ে মৃত্যু

বারাসত হাসপাতালে বুধবার বিকেলে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন হিমোফিলিয়া সোসাইটির (কলকাতা শাখা) সদস্যেরা।

সুমন সাহা। ছবি: সুমন সাহা

সুমন সাহা। ছবি: সুমন সাহা

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২০ ০১:৫৯
Share: Save:

কোভিড পরিস্থিতিতে প্রায় সর্বত্রই অন্য রোগের চিকিৎসা যে অবহেলিত হচ্ছে আবারও তা দেখা গেল গত বুধবার এক হিমোফিলিয়া-আক্রান্ত যুবকের মৃত্যুতে।

একটি জেলা হাসপাতাল ও দু’টি মেডিক্যাল কলেজে ঘুরেও কোথাও গুরুতর অসুস্থ ওই যুবককে রক্তের ‘ফ্যাক্টর ৯’ দেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। শেষ পর্যন্ত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামানোর পরেই বারাসতের বাসিন্দা সুমন সাহা নামের বত্রিশ বছরের ওই যুবকের মৃত্যু হয়। কেন তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়নি তা জানতে চেয়ে বারাসত হাসপাতালে বুধবার বিকেলে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন হিমোফিলিয়া সোসাইটির (কলকাতা শাখা) সদস্যেরা।

মৃতের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বারাসত জেলা হাসপাতালে প্রতি বুধবার হিমোফিলিয়া রোগীদের ‘ফ্যাক্টর ৮’ ও ‘ফ্যাক্টর ৯’ দেওয়া হয়। সুমনবাবুও সেখান থেকে নিয়মিত ফ্যাক্টর-৯ নিতেন। হিমোফিলিয়া রোগীদের শরীরের যে কোনও জায়গা থেকে রক্তপাত হতে শুরু করে এবং তা সহজে থামতে চায় না। তাই তাঁদের রক্তের ‘ফ্যাক্টর’ দিতে হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে সুমনবাবুর তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। পরিবারের দাবি, পেটের ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় ব্যথা হচ্ছিল। তাঁর দিদি রিক্তা সাহার অভিযোগ, ‘‘দুপুর তিনটে নাগাদ বারাসত হাসপাতালে গেলে জানানো হয় সুপারের নির্দেশ রয়েছে, বুধবার ছাড়া ফ্যাক্টর দেওয়া যাবে না। ভাইকে ওঁরা কিছু ক্ষণ ইমার্জেন্সিতে রেখে অন্য কয়েকটি ইঞ্জেকশন দিয়ে আর জি করে রেফার করে দিলেন। তত ক্ষণে ভাই নেতিয়ে পড়েছে।’’

আর জি করে যে ফ্যাক্টরের ব্যবস্থা নেই এবং হেমাটোলজি বিভাগও সে ভাবে নেই তা রোগীর পরিজনেরা জানতেন। তাই তাঁরা সরাসরি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যান। রোগীর সঙ্গী হিমোফিলিয়া সোসাইটির সদস্যেরা জানিয়েছেন, কলকাতা মেডিক্যালের ইমার্জেন্সিতে জানানো হয়, সেটি কোভিড হাসপাতাল হওয়ায় অন্য পরিষেবা মিলবে না। রোগীকে শুধু স্যালাইন দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে তাঁরা তখন আর জি করে রোগীকে ভর্তি করেন।

কিন্তু সেখানে ফ্যাক্টর না থাকায় সুমনবাবুকে ভর্তি করার পরে এক রাত রেখে এক ইউনিট হোল ব্লাড দেওয়া হয়েছে। পরদিন সকালে রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হলে শেষ চেষ্টা হিসাবে তাঁকে এন আর এসে আনা হয়। কিন্তু সেখানে মৃত্যু হয় সুমনবাবুর।

অথচ, স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার অর্থাৎ যে দিন ফ্যাক্টর-৯ নেওয়ার জন্য সুমনবাবুকে রাজ্যের প্রথম সারির তিনটি হাসপাতালে ঘুরতে হয়েছে, সে দিন বারাসত হাসপাতালে ফ্যাক্টর-৯ (৫০০ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) ছিল ১০টি, আর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ১৯টি।

তা সত্ত্বেও কেন হিমোফিলিয়া রোগীকে তা দেওয়া হয়নি?

বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল প্রথমে বলেন, ‘‘রোগীকে পরীক্ষা করে ইমার্জেন্সির চিকিৎসকের মনে হয়নি যে ফ্যাক্টর-৯ প্রয়োজন। অকারণে তা দিলে খারাপ ফল হতে পারত।’’ কেন হেমাটোলজির আলাদা বিভাগ থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁকে ভর্তি করে রোগের প্রকৃত কারণ যাচাই করা হল না? সুপারের জবাব, ‘‘সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মনে করেছেন রোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসা করার মতো পরিকাঠামো বারাসত হাসপাতালে নেই!’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কেন রোগীকে ভর্তি করে ফ্যাক্টর দিল না?

কলকাতা মেডিক্যালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখন নন-কোভিড রোগী ভর্তি হচ্ছে না। প্রথমে রোগীকে ইমার্জেন্সিতে পর্যবেক্ষণে রেখে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে মাত্র ন’টি শয্যা। সব সময়ে তা ভর্তি হয়ে থাকে। রোগীকে ফ্যাক্টর-৮ বা ৯ দেওয়ার মতো পরিকাঠামো নেই। তাই ওই রোগীকে আর জি করে রেফার করা হয়েছিল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Barasat Barasat Hospital Hemophilia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy