পরনে ছাপা শাড়ি, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। হিন্দিভাষী দু’জনেরই চোখমুখেও ভালমানুষের ছাপ। বিভিন্ন পাড়ায় ঘুরে এরা পুরনো শাড়ি-গয়নার নকশা খুঁজে বেড়ান। ভাল নকশা পেলে তার বিনিময়ে দেন স্টিলের বাসন বা টাকা। আপাত নিরীহ এমন মহিলা ফেরিওয়ালার কাছে শাড়ি বা শাড়ির নকশা দিয়ে বাসন কেনা বা টাকা নেওয়ার ঘটনা হামেশাই ঘটে। তেমনই দুই মহিলা ফেরিওয়ালার কাছে এ বার প্রতারিত হয়ে লক্ষাধিক টাকার গয়না খোয়ানোর অভিযোগ করলেন এক গৃহবধূ। নতুন এই প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে ঘাম ছুটেছে পুলিশের। কারণ ভিন্ রাজ্যের এই মহিলাদের না আছে স্থায়ী ঠিকানা না কোনও পরিচয়পত্র।
সম্প্রতি ঋতু জায়সবাল নামে বছর চল্লিশের এক গৃহবধূ ওয়াটগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন, ১৭ সেপ্টেম্বর দুই মহিলা ফেরিওয়ালা তাঁর বাড়িতে আসেন বাসন বিক্রি করতে। কথার ফাঁকে তাঁরা ঋতুদেবীকে জানান, যদি তিনি শাড়ির নকশা কাগজে তুলে নিতে দেন তা হলে বিনিময়ে তাঁকে টাকা বা বাসন দেওয়া হবে।
ঋতুদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি একটি পুরনো দামি শাড়ি বার করে দেন। শাড়ি নিয়ে দুই ফেরিওয়ালা জানান, নকশা তুলে নিতে তাঁরা শাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। আধ ঘণ্টা পরে এসে টাকা দেবেন। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য নিজেদের ঝোলা দু’টি রেখেও যান তাঁরা। সময় মতো এসে ২০০ টাকাও দেন। ঘণ্টাখানেক পরে শাড়ি ফেরত দিতে এসে ওই দুই ফেরিওয়ালা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, কোনও গয়নার নকশা আছে কি না। কয়েকটি নকল গয়নার নকশা দেখার পরে হঠাৎই সোনার গয়নার নকশা দেখতে চান তাঁরা। গয়নার নকশা দিলে বেশি টাকা দেওয়ার প্রলোভনও দেখান ওই দুই মহিলা। সেই ফাঁদে পড়েই ওই দু’জনের হাতে নিজের দু’টি গয়না তুলে দেন ঋতুদেবী।
ঋতুদেবী বলেন, “ওদের কথা শুনে দু’টো গয়না বার করে দিই। শাড়ি ফেরত দেওয়ার মতো গয়নার নকশা তুলে নিয়ে আধ ঘণ্টা পরে ফেরত আসবে বলে চলে যায় ওই দুই মহিলা। আমিও কিছু না ভেবে গয়না নিয়ে যেতে দিই।” ঋতুদেবী জানান, প্রথমে শাড়ি ফেরত পাওয়ায়, দ্বিতীয় বার তিনি সন্দেহ করেননি। কিন্তু ঝোলা রেখে গেলেও ওই দুই মহিলা ফেরেননি। এর পরে প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে ঋতুদেবী পুলিশে অভিযোগ জানান।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অবাঙালি ওই দুই মহিলা ছাড়াও দলে আরও কয়েক জন রয়েছে। এদের কাজ, বিভিন্ন পাড়ায় ঘুরে বাসন ফেরি করতে বেরিয়ে গৃহস্থের হাঁড়ির খবর বার করে আনা। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সাধারণত দুপুরের দিকেই এই মহিলারা বিভিন্ন পাড়ায় ঢোকেন। যে বাড়ি থেকে বাসন কেনার ডাক মেলে, সেখানে কথা বলতে বলতে জেনে নেন বাড়িতে কোনও পুরুষ থাকেন কি না, থাকলেও তাঁরা কখন বেরোন। যাতে কাজ সহজ হয়ে যায়।
এর পরেই নকশার বিনিময়ে বাসন বা টাকার লোভ দেখানো হয় গৃহবধূদের। পুলিশ আরও জানায়, মহিলা ফেরিওয়ালাদের ওই চক্রটি শহরের অন্য কয়েকটি জায়গায় একই কায়দায় বেশ কিছু জিনিস হাতিয়েছে। গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “সাধারণত ভিন্ রাজ্যের মহিলারাই দলে ভাগ হয়ে পালিশ করে দেওয়ার নাম করে গয়না হাতান। কিন্তু নকশা তোলার নাম করে এ ধরনের প্রতারণা নতুন। এখনও পর্যন্ত কোনও বড় চক্র এর পিছনে রয়েছে বলে জানা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy