বিধি-লঙ্ঘন: রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো (বাঁ দিকে) ও বাজি-দূষণ (ডান দিকে) রোধে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন।
জাতীয় পরিবেশ আদালত গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট। অথচ তাকেই কার্যত ‘অস্বীকার’ করে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোর অনুমতির জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ রাজ্য! ফলে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরেও করোনা আবহে সরকারের এই পদক্ষেপ, বাজি-দূষণ রোধে প্রশাসনিক সক্রিয়তা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মহলে সংশয় তৈরি করেছে।
পরিবেশবিদদের মতে, ছটপুজো ও বাজির দূষণ— দু’টি আলাদা বিষয় হলেও তা সরকারের পরিবেশনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। যেখানে পরিবেশ রক্ষায় আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিনিয়ত এত গবেষণা ও আলোচনা হচ্ছে, সেখানে পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশের শীর্ষ আদালতে রাজ্যের শাসকদলের দ্বারস্থ হওয়া কতটা নৈতিক, সে প্রশ্নও উঠেছে। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ কমিটিই যেখানে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো না করার সুপারিশ করছে।
চার বছর আগে একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে গঠিত পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি রবীন্দ্র সরোবরে ‘এনভায়রনমেন্টাল ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট স্টাডি রিপোর্ট’ (ইআইএ) তৈরি করেছিল। রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে রাতে আইএসএল ম্যাচ খেলার ফলে সেখানকার পরিবেশে তার কী প্রভাব পড়তে পারে, সেটা খোঁজাই ছিল ওই সমীক্ষার মূল উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন: সরোবরে ফিরছে বহু পাখি, বাজির ভয়ে কি পালাবে
আরও পড়ুন: বাজি আটকাতে পুলিশের সাহায্য চায় পরিবেশ দফতর
তার পরের বছরই অর্থাৎ, ২০১৭ সালে আট জনের আরও একটি কমিটি রবীন্দ্র সরোবরের একটি র্যাপিড ‘ইআইএ’ করেছিল। খেলা, পিকনিক, অন্য কারণে জনসমাগম-সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সরোবরের পরিবেশের উপরে কী প্রভাব পড়বে, তা উল্লেখের পাশাপাশি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে সে বছরের জুনে প্রকাশিত ওই চূড়ান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছিল,— ‘ছটপুজোর কারণে ৪০-৫০ হাজার মানুষ রবীন্দ্র সরোবরে প্রবেশ করেন। তার ফলে সেখানকার জীববৈচিত্র মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ তা ছাড়া ছটপুজোয় সরোবরের জলই যে শুধু দূষিত হয়, তা নয়। পুজোয় ব্যবহৃত ঘি, তেলের কারণে সেখানকার মাটিও দূষিত হয়। সংশ্লিষ্ট সমীক্ষায় তাই সুপারিশ করা হয়েছিল, সরোবরের পরিবর্তে অন্যত্র ছটপুজো করার বিষয়ে পুণ্যার্থীদের মধ্যে সচেতনতা ও উৎসাহ তৈরির জন্য।
কিন্তু জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি নিজেদেরই প্রকাশিত সেই প্রামাণ্য নথিকে অস্বীকার করে রাজ্য সরকারের সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হওয়ায় শুধু পরিবেশবিদ, পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনই নয়, প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশও রীতিমতো বিস্মিত! প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘এটা স্ববিরোধিতা ছাড়া আর কিছু নয়!’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে
প্রকাশিত ওই সমীক্ষার ‘চিফ এডিটর’ ছিলেন পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন। ফলে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’’
এই সূত্রেই বাজি-দূষণ রোধে সরকারের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। পরিবেশ আদালতে আইএসএল ম্যাচ সংক্রান্ত মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘অতীতের অভিজ্ঞতাই বলছে, কালীপুজোয় শব্দ ও আলোর দূষণ রুখতে সরকার পুরো ব্যর্থ! পরিবেশের কিসে ক্ষতি হল, তা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই।’’ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘বর্তমান আইনেই শব্দ ও বায়ুর দূষণ রোধে পদক্ষেপ করা যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবেশ আইনের পাশাপাশি মহামারি আইনেও দূষণ রোধে সরকার পদক্ষেপ করতে পারে। তবে এ জন্য সদিচ্ছার প্রয়োজন।’’
যদিও রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের আশ্বাস, ‘‘অন্য কোনও বিষয় নিয়ে বলতে পারব না, কিন্তু বাজি-দূষণ রোধে এ বার সরকার সব রকম চেষ্টা করবে, এটা বলতে পারি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy