স্থানান্তর: টালা সেতুর নীচে থাকা এই সব বাড়ি খালি করে দেওয়া হচ্ছে। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
টালা সেতু নিয়ে ভেবেচিন্তে পা ফেলতে চাইছে রাজ্য সরকার। সেতুটির স্বাস্থ্যের হাল যে ভাল নয়, এটা যেমন সত্যি, আবার অন্য দিকে পুজোর মুখে ওই সেতু পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে সাধারণ মানুষ যে প্রবল ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন, সেটাও অস্বীকার করা যায় না। লালবাজার জানিয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার টালা সেতুর ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হওয়ার কথা। যেখানে স্বয়ং মুখ্যসচিব ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার-সহ প্রশাসনের একাধিক কর্তা উপস্থিত থাকবেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, তৃতীয় কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে টালা সেতুর পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা করানো হতে পারে। ইতিমধ্যেই ওই সেতু দিয়ে ভারী গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পুলিশের তরফে।
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, টালা সেতুতে কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। সেতুর গার্ডারগুলির সংযোগকারী কিছু কেব্ল নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, একই সমস্যা ছিল মাঝেরহাট সেতুতেও। তবে এখনই ওই সমস্যা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সমস্যা বাড়লে অবশ্য হঠাৎ কোনও দিন বিপত্তি ঘটতে পারে। সেই কারণে টালা সেতুর স্বাস্থ্যোদ্ধারে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পূর্ত দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, বিশেষজ্ঞ সংস্থা রাইটস এর আগে টালা সেতুর উপরে সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনিক কর্তাদের যুক্তি, পুজোর আগে টালা সেতু পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে যানজটের সমস্যা প্রবল ভাবে বেড়ে যাবে। সেই কারণে আপাতত শুধু হাইট বার বসানো হচ্ছে সেতুর দু’দিকে।
পূর্ত দফতরের বক্তব্য, এই মুহূর্তে ফের ওই সেতুর পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা করা জরুরি। সেই কারণে অন্য কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে সংস্কারের পদ্ধতি স্থির করা হবে। সেতুটি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মেরামতিতে কোন প্রযুক্তির ব্যবহার উপযুক্ত হবে— পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষার শেষেই তা বোঝা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতা এবং উত্তর শহরতলির মধ্যে মূল সংযোগকারী ওই সেতুটি বন্ধ হলে উত্তরমুখী, অর্থাৎ কাশীপুর, বরাহনগরের দিকে যাওয়া গাড়িকে চিৎপুর সেতু ও চিৎপুর রোড দিয়ে পাঠানোর ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। ওই গাড়িগুলি চিৎপুর থানার কাছ থেকে কাশীপুর রোড হয়ে বরাহনগর বা খগেন চ্যাটার্জি রোড ধরে বি টি রোডে যেতে পারবে।
এ ছাড়া, পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী দমদম চিড়িয়ামোড় থেকে কলকাতার দিকে আসা গাড়িগুলিকে দমদম রোড, নাগেরবাজার হয়ে যশোর রোড দিয়ে শহরে পাঠানো হতে পারে। আবার দমদম রোড থেকে সেভেন ট্যাঙ্কস, নর্দার্ন অ্যাভিনিউ, ইন্দ্র বিশ্বাস রোড হয়ে আর জি কর রোড দিয়ে যেতে পারবে। বি টি রোডের পাইকপাড়া মোড় থেকে টালার ভিতর দিয়ে বেলগাছিয়া হয়ে কলকাতামুখী গাড়িগুলিকে পাঠানোর
সম্ভাবনা রয়েছে।
বুধবার টালা সেতুর নীচের ঝুপড়িগুলিকেও ফাঁকা করে দেওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় বরো অফিস সূত্রের খবর, ওই সেতুর নীচে থাকা প্রায় ১২০ ঘরের বাসিন্দাদের সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের জন্য সেতুর পাশের ফাঁকা রাস্তায় অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করা হচ্ছে। কলকাতা পুরসভার এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, ‘‘ঝুপড়ির বাসিন্দাদের আমরা জায়গা করে দিচ্ছি। সরকারের নির্দেশ সকলকে মানতে হবে। কিছু ঘটে গেলে কে সামলাবে?’’ ওই ঝুপড়ির বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, তাঁদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি ঘর ছাড়ার আগে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy