Advertisement
E-Paper

শব্দবাজি বন্ধে কালীপুজোয় ‘ব্যর্থ’ পর্ষদ, ছটপুজোয়?

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতা, বিধাননগর, হাওড়া-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া মোট শব্দবাজির পরিমাণ ১৪৭৬৫.৪২ কিলোগ্রাম।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৫৫
Share
Save

কালীপুজোর ক’দিনে ‘ডাবল সেঞ্চুরি’। ছটপুজোয় কি সেই রেকর্ড ভাঙবে?— আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে কলকাতা-সহ রাজ্যের পরিবেশবিদ মহলের একাংশের মনে। প্রসঙ্গ, শব্দবাজির দাপট এবং সেই সূত্রে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে মোট ২০৩ জনকে গ্রেফতার।

পরিবেশবিদদের একাংশের অভিযোগ, শব্দবাজি বন্ধ নিয়ে যত আশ্বাস এবং দাবিই করুক না কেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, যতই পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করুক,আসলে শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে তারা ডাহা ‘ফেল’। যার ফল, আরও একটি শব্দ উপদ্রুত কালীপুজো এবং দীপাবলি পালন সাধারণ নাগরিকদের। পরিবেশকর্মী থেকে শুরু করে সচেতন নাগরিকদের একাংশ এই প্রশ্ন তুলছেন, আদালতের রায় থাকার পরেও কী ভাবে বাজারে এত বিপুল পরিমাণ বাজি পৌঁছতে পারে? যার ফলে বেহালা, কসবা, গরফা, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, টালিগঞ্জ, রাসবিহারী, কালীঘাট, ভবানীপুর, বেলেঘাটা, বিধাননগর, শ্রীভূমি, লেক টাউন-সহ শহর ও শহরতলি সংলগ্ন বিভিন্ন জায়গায় বাধাহীন ভাবে বাজি ফেটেছে। অবশ্য, একে বাজিতে রক্ষা নেই। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তারস্বরে মাইক এবং আদি ও অকৃত্রিম ডিজে-র উৎপাত।

পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বললেন, ‘‘শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে ডাহা ব্যর্থ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। যাঁরা শব্দবাজি বিক্রি করছেন বা যাঁরা তা কিনছেন এবং ফাটাচ্ছেন, তাঁদের উপরে যে প্রশাসনের বিন্দুমাত্রনিয়ন্ত্রণ নেই, সেটা স্পষ্ট। কালীপুজোয় হয়েছে, ছটপুজোতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে বলে আশঙ্কা করছি আমরা।’’ এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য-সচিব রাজেশ কুমারকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতা, বিধাননগর, হাওড়া-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া মোট শব্দবাজির পরিমাণ ১৪৭৬৫.৪২ কিলোগ্রাম। এফআইআর, জিডি-র সম্মিলিত সংখ্যা ৪৮৪। অবশ্য এই পরিসংখ্যানের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘এত পরিমাণ বাজি এল কোথা থেকে, পর্ষদ আগে সেই উত্তর দিক। যদি প্রায় ১৫ হাজার কেজি শব্দবাজি উদ্ধারই হয়ে থাকে, তা হলে বোঝা যাচ্ছে, আরও কত পরিমাণ বাজিবাস্তবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে!’’ পর্ষদ সূত্রে এ-ও জানা যাচ্ছে, শুধু শব্দবাজি নয়, তারস্বরে মাইক সংক্রান্তও একাধিক অভিযোগ এসেছে কন্ট্রোল রুমে।

যার পরিপ্রেক্ষিতে এক ইএনটি চিকিৎসক বলছেন, ‘‘লাউডস্পিকার, মাইক-সহ যে কোনও শব্দযন্ত্রে সাউন্ড লিমিটর লাগানোর কথা প্রথম আসে ২০০৪ সালে। পর্ষদই বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছিল, খোলা জায়গায় সাউন্ড লিমিটর ছাড়া মাইক্রোফোন ব্যবহার করলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে। তার পরে ১৮ বছর কেটে গিয়েছে। ২০২২ সালেও সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা গেল না।’’ পুরো বিষয়টি পর্ষদ যে দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করছে এবং যে ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, তার মধ্যেই গলদ দেখছেন অনেকে। কারণ, পর্ষদের তরফে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বার বার অনুরোধ এবং সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এমনকি, কালীপুজোর আগে পুলিশ ও আবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের সময়েও পর্ষদ সচেতনতা, অনুরোধ— এ সবের উপরে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতে শব্দদূষণ সংক্রান্ত মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘এ যেন অনেকটা দাগি অপরাধীদের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করা, আপনারা দয়া করে অপরাধ করবেন না। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমাদের সহযোগিতা করুন! পুরো ব্যাপারটা হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে পর্ষদ।’’

ফলে সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, তাতে কালীপুজো শেষ হলেও শব্দ-যন্ত্রণা শেষ হওয়ার ভরসা পাচ্ছেন না কেউই। আপাতত অপেক্ষা ছটপুজোর।

kali Puja 2022 Firecrackers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}