Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Tajpur Deep Sea Port

তাজপুর ছেড়ে যায়নি আদানিরা, ‘ভিন্ন’ সুরে ব্যাখ্যা দিলেন শশী, বন্দর ঘিরে নয়া বিতর্ক

গত মঙ্গলবার বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে তাজপুরের বন্দরে আদানিদের লগ্নি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। তার পর এই প্রথম সরকারের তরফে কেউ সে প্রসঙ্গে মুখ খুললেন।

গৌতম আদানি এবং শশী পাঁজা।

গৌতম আদানি এবং শশী পাঁজা। —ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২৭
Share: Save:

আদানি গোষ্ঠী তাজপুরের গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প থেকে এখনও বিদায় নেয়নি বলে জানালেন রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী শশী পাঁজা। রবিবার দিল্লিতে রাজ্যের মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাজপুরের গভীর সমুদ্র বন্দরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শর্তযুক্ত নিরাপত্তা ছাড়পত্র দিয়েছে। তার সঙ্গে কিছু ‘পর্যবেক্ষণ’-ও জানিয়েছে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর এখনও কথাবার্তা চলছে। শশী জানিয়েছেন, কেন্দ্রের প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও জাহাজ মন্ত্রকের ছাড়পত্র এসে গিয়েছে।

গত মঙ্গলবার কলকাতায় বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে তাজপুরের বন্দরে আদানিদের লগ্নি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। তার পাঁচ দিন পরে এই প্রথম তাজপুর নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে কেউ মুখ খুলে পরিস্থিতি স্পষ্ট করলেন। বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী শিল্পপতিদের সামনে তাজপুরের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, “আপনারা দরপত্রে অংশ নিতে পারেন।” তার পরেই প্রশ্ন ওঠে, তা হলে কি আদানি গোষ্ঠী ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত তাজপুর বন্দর প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়িয়েছে? কারণ গত বছরের অক্টোবরেই রাজ্য সরকার তাজপুর বন্দর নির্মাণের ‘প্রভিশনাল লেটার অব ইনটেন্ট’ বা প্রাথমিক আগ্রহপত্র আদানি গোষ্ঠীর প্রধান গৌতম আদানির ছেলে কর্ণ আদানির হাতে তুলে দিয়েছিল। দরপত্রে সর্বোচ্চ দর হেঁকেছিল বলেই আদানি গোষ্ঠীকে ওই আগ্রহপত্র দেওয়া হয়।

মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যে ধোঁয়াশা তৈরি হলেও এত দিন রাজ্যের তরফে কেউ এ নিয়ে মুখ খোলেননি।রবিবার দিল্লিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ উপলক্ষে শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী শশী পাঁজার সাংবাদিক বৈঠক ছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে আঁচ করে তিনি বিবৃতি তৈরি করেই এসেছিলেন। তাজপুর বন্দর নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই শশী বলেন, “তাজপুর বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক আগ্রহপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) দরপত্রে সর্বোচ্চ দর হাঁকা অ্যাপসেজ (আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনমিক জ়োন) সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল। তার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের চারটি মন্ত্রক—স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও জাহাজ মন্ত্রকের থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র চাওয়া হয়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শর্তযুক্ত নিরাপত্তা ছাড়পত্র দিয়েছে। তার সঙ্গে কিছু পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। এ নিয়ে রাজ্য সরকার ও আদানি গোষ্ঠী কাজ করছে, আলোচনা চালাচ্ছে। স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। কথাবার্তা চলছে।” কী সেই পর্যবেক্ষণ, তা অবশ্য বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, বিদেশ, প্রতিরক্ষা, জাহাজ—কেন্দ্রীয় সরকারের এই তিনটি মন্ত্রকের ছাড়পত্র এসে গিয়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে শিল্পমহলের সামনে নতুন করে দরপত্রের কথা কেন বলেছিলেন? এর কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য রাজ্যের মন্ত্রী দেননি। শশী শুধু বলেন, “আমি যা বলছি, মুখ্যমন্ত্রীর তরফেই বলছি।” রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করতে তিনি ওই বিবৃতি একাধিক বার বাংলা ও ইংরেজিতে পড়ে শোনান। আদানি গোষ্ঠী এখনও তাজপুর বন্দর নির্মাণের প্রক্রিয়ায় যুক্ত তো? মন্ত্রী উত্তরে স্পষ্ট করে বলেন, “হ্যাঁ। আমাদের আলোচনা চলছে।” রাজ্য প্রশাসন সূত্রের বক্তব্য, আগ্রহপত্র বা ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ পাওয়ার পরে আদানি গোষ্ঠীকে সম্মতিপত্র বা ‘লেটার অব অ্যাকসেপ্টেন্স’ দিতে হবে। কেন্দ্রের সমস্ত ছাড়পত্র পাওয়ার পরে রাজ্য ও আদানি সংস্থার মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরে প্রশ্ন উঠেছিল, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের লাগাতার আদানি গোষ্ঠীকে আক্রমণের ফলেই আদানি গোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছে কি না! এর আগে গত ১৪ নভেম্বর দিল্লিতে এসেই শশী পাঁজা বলছিলেন, রাজনীতির সঙ্গে উন্নয়নের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের আদানি গোষ্ঠীকে নিশানা ও তা ঘিরে বিতর্ক এবং রাজ্য সরকারের সঙ্গে শিল্পপতিদের সম্পর্ক তথা বা রাজ্যে আদানিদের লগ্নি, এই বিষয়গুলো রাজ্য সরকার আলাদা ভাবে দেখছে বলেও জানিয়েছিলেন শশী। কিন্তু তার পরে মুখ্যমন্ত্রীর তাজপুর নিয়ে মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক প্রশ্নও তৈরি হয়। সেই সঙ্গে বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে গৌতম আদানি, তাঁর ছেলে কর্ণ আদানি বা আদানি গোষ্ঠীর কেউ হাজির ছিলেন না। তাতেও জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। আদানিদের অনুপস্থিতি নিয়ে আজ শশী বলেন, “আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কেন কেউ ছিলেন না, তা ওঁদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন।”

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ তুলেছিলেন, তাজপুরে বন্দর নিয়ে আদানি গোষ্ঠী কোনওদিনই আগ্রহী ছিল না। আদানিরা ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গে আম-লিচুবাগানের মধ্যে তার, খুঁটি পাততে হবে বলে রাজ্যের সাহায্য চেয়েছিল। তার বিনিময়ে রাজ্য সরকার আদানি গোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়েছিল। অন্য দিকে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। রাজ্যের বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় আবার দাবি করেছিলেন, তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দরের বদলে আদানি গোষ্ঠী মন্দারমণিতে স্থল বন্দর গড়তে আগ্রহী। এ জন্য জমি চিহ্নিতকরণের কাজও হয়ে গিয়েছে। রাজ্যকে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। শশী তার জবাবে বলেন, “বিরোধীদের এ সব কথায় কান দেবেন না। ওঁরা বিষয়টাই জানেন না। না জেনে বলছেন। একটা প্রকল্পের বন্দরের এলাকা রয়েছে। কিছু বোঝেনও না। হাওয়ায় কথা বলছেন। এই সব ভিত্তিহীন কথার জবাব হয় না।” সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, তাজপুরের প্রস্তাবিত বন্দরের এলাকাই মন্দারমণিতে শেষ হচ্ছে। সেখানে আলাদা কিছু হওয়ার নেই।

রাজ্যের মন্ত্রীর ব্যাখ্যার পরেও বিরোধীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য স্ববিরোধী। সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তাজপুরে নতুন করে টেন্ডার হবে। শশী পাঁজা বলছেন, আদানি গোষ্ঠী আছে। আসলে একটু আদানির বিরুদ্ধে বলতে হবে। আবার বিজেপিকেও খুশি রাখতে হবে। তাতে অবশ্য রাজ্যের মানুষের কোনও লাভ হচ্ছে না। গত ১২ বছরে রাজ্যে কোনও শিল্প আসেনি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Adani Group Shashi Panja BGBS 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy