সব্যসাচী মণ্ডল।
সম্পত্তিঘটিত কারণে তিনি যে খুন হতে পারেন, পরিচিতদের সে কথা প্রায়ই বলতেন হাওড়ার নিহত ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডল (৩৮)। সেই আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, তার প্রমাণ মিলল শুক্রবার রাতে। বন্ধুদের নিয়ে রায়নার বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে নৃশংস ভাবে খুন হলেন বড়বাজারের ওই ব্যবসায়ী। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিক ভাবেই প্রবল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সম্পত্তিগত কারণে ওই যুবককে বার বার খুনের চেষ্টা করা হলেও পুলিশ তাঁর নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন? কেনই বা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়নি?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সব্যসাচী যে পরিবারের সদস্য ছিলেন, পূর্ব বর্ধমানের রায়নার সেই সম্ভ্রান্ত মণ্ডল পরিবার কলকাতায় ব্যবসা করার জন্য হাওড়ায় বাড়ি করে চলে আসে। বর্তমানে নবীন সেনাপতি লেনে ছ’কাঠা জমির উপরে একটি তেতলা বড় বাড়ি রয়েছে ওই পরিবারের। এর পাশাপাশি, ওই এলাকায় প্রায় একই পরিমাণ জমি নিয়ে একটি একতলা বাড়িও রয়েছে তাদের। তবে এখন ওই দু’টি বাড়িই ফাঁকা পড়ে আছে।
নবীন সেনাপতি লেনের তেতলা বাড়িটিতে মাঝে মাঝে একা বা সপরিবার এসে বসবাস করতেন সব্যসাচী। ওই পরিবারের দুই শরিকের মধ্যে এক জন তিনি। গত ৮ অগস্ট ভোরে তিনি যখন এক বন্ধুর সঙ্গে ওই বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন, তখন মোটরবাইক নিয়ে আসা এক দুষ্কৃতী তাঁর ঘর লক্ষ্য করে পর পর দু’টি পেট্রল বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়। সেই ঘটনার পরেও তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দা দফতরের পদস্থ কর্তা-সহ বম্ব স্কোয়াডের অফিসারেরা ছুটে আসেন। শুরু হয় তদন্ত।
সেই ঘটনার পরে ওই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই সব্যসাচী সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের পরিবারেরই এক সদস্য সমস্ত সম্পত্তি দখল করার জন্য আমাকে খুন করতে চাইছেন। এর আগেও তিন বার আমাকে খুনের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু পুলিশকে বার বার অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি।’’
পেট্রল বোমা ছোড়ার সেই ঘটনার পরে হাওড়ার শিবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সব্যসাচী। বোমা ছোড়ার ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও দিয়েছিলেন পুলিশকে। কিন্তু তার পরেও পুলিশ ওই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে মূল চক্রান্তকারীর কাছে পৌঁছতে পারেনি বলে অভিযোগ। পুলিশ সেই তদন্ত শেষ করার আগেই অবশ্য খুন হয়ে গেলেন সব্যসাচী।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বার বার পুলিশকে জানানোর পরেও ওই যুবককে খুন হতে হল কেন? এটা কি পুলিশের চরম ব্যর্থতা নয়? হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তার সাফাই, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। এত তাড়াতাড়ি দুষ্কৃতীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। শীঘ্রই খুনিরা ধরা পড়বে।’’
ওই ঘটনার পরে নিরাপত্তার স্বার্থে কলকাতা থেকে হাওড়ার নেতাজি সুভাষ রোডের যে ফ্ল্যাটে সব্যসাচী বাবা, মা, স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে উঠে এসেছিলেন, সেই ফ্ল্যাটে গিয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাঁরা দরজা খুলতে চাননি। তবে বন্ধ দরজার ও-পার থেকে নিজেকে নিহত যুবকের দিদি বলে পরিচয় দিয়ে মিতা বিশ্বাস নামে এক মহিলা বললেন, ‘‘শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ ওরা হাওড়া থেকে বেরিয়েছিল। ওর সঙ্গে যাঁরা রায়নায় গিয়েছিলেন, তাঁদেরই এক জন রাতের দিকে ফোন করে জানান, সব্যসাচী খুন হয়ে গিয়েছে।’’ এর পরেই ওই মহিলা বললেন, ‘‘এই খুনের ঘটনায় আমাদের পরিবারের এক জন সরাসরি জড়িত। সম্পত্তির লোভে তিনি অনেক দিন ধরেই ভাইকে ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে খুন করার চেষ্টা করছিলেন।’’ ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে খবর আসার পরেই সব্যসাচীর বাবা দেবকুমার মণ্ডল একাই বর্ধমানের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy