প্রতীকী চিত্র।
করোনার এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকহীন শিশুদের নাম করে বাড়ছে প্রতারণার ঘটনা। আর এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াকে। অনাথ শিশুদের ‘দায়িত্ব’ নেওয়ার আবেদনের মাধ্যমেই এই ব্যবসা চালাচ্ছে এক শ্রেণির প্রতারক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন দেদার ঘুরছে শিশুদের দত্তক নেওয়ার আবেদন জানানো বিভিন্ন পোস্ট। করোনা অতিমারিতে যার সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। সেই সব পোস্টে কোভিডে মৃত বাবা-মায়ের অনাথ শিশুদের কথা লেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ওই শিশুদের দত্তক নেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। দেওয়া থাকছে ফোন নম্বর। এই ধরনের পোস্ট শেয়ার করছেন নেট ব্যবহারকারীদের অনেকেই। কিন্তু ওই সব পোস্টের সঙ্গে দেওয়া নম্বরে ফোন করলে অনেক সময়েই কোনও উত্তর মিলছে না। কখনও আবার শিশু দত্তক দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হচ্ছে। গড়িয়ার বাসিন্দা এক দম্পতি বললেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের একটি পোস্ট দেখে নীচে দেওয়া নম্বরে ফোন করি। প্রথম দু’-এক দিন তো কেউ ধরলেনই না। তার পরে এক জন ফোন ধরে দত্তক দেওয়ার বিনিময়ে মোটা টাকা চাইলেন। সন্দেহ হওয়ায় আর এগোইনি।’’ উল্টোডাঙার বাসিন্দা আর এক মহিলার আবার দাবি, করোনায় মৃত বাবা-মায়ের অনাথ শিশুকে নেওয়ার জন্য অচেনা নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, তাঁর কাছেও মোটা টাকা দাবি করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পাতা এই ধরনের ফাঁদে পা দিতে বারণই করছে অভিজ্ঞ মহল। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অনাথ শিশুর ক্ষেত্রে পুলিশ অথবা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। তা ছাড়া, শিশু দত্তক নিতে চাইলে নির্দিষ্ট আইনি পদ্ধতি মেনেই তা করা উচিত। না-হলে পরবর্তী কালে জটিলতায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
শিশু দত্তক নেওয়ার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। আইনসম্মত ভাবে দত্তক নেওয়ার জন্য প্রথমেই ভারত সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের নির্দিষ্ট পোর্টালে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। সেখানে আবেদনকারীর বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। এর পরে সেই সব তথ্য খুঁটিয়ে দেখে এবং আবেদনকারীর বাড়ি পরিদর্শনের পরে সেই আবেদন মঞ্জুর অথবা খারিজ করা হয়। আবেদন মঞ্জুর হলে কিছু দিন পরে আদালতের তত্ত্বাবধানে সেই শিশুটিকে দত্তক নিতে চাওয়া ব্যক্তির বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের পোস্ট প্রসঙ্গে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন মহুয়া শূর রায় বললেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, যে নম্বরটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া হচ্ছে, তা বৈধ নয়। আমরা সকলকেই বলব, এ ভাবে কোনও রকম তথ্য যাচাই না-করে পোস্ট করবেন না বা সেটি শেয়ার করবেন না। বরং থানা অথবা চাইল্ডলাইনে যোগাযোগ করুন। আমরা খবর পেলেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুটিকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করব।’’
‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর ডিরেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের পোস্ট দেওয়া অপরাধ। দুষ্কৃতীরা এই ধরনের পোস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করতে পারে। পুলিশ চাইলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।’’
এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শিশুদের সুরক্ষার যে কোনও প্রশ্নে পুলিশ সর্বদাই তৎপর। যে কোনও ধরনের অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনাথ কোনও শিশুর খবর পেলে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। পুলিশই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy