যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত সৌরভ চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ধৃত সৌরভ চৌধুরীকে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আলিপুর আদালত। তাঁকে জেলে গিয়ে জেরা করতে পারবে পুলিশ। শুক্রবার সৌরভকে আদালতে হাজির করানো হয়। আদালতে সরকারি আইনজীবী গোপাল হালদার বলেন, ‘‘পিক অ্যান্ড চুজ় করে ছাত্রকে মারা হয়েছে।’’ এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেন সৌরভের আইনজীবী।
আদালতে সরকারি কৌঁসুলি জানান, ছাত্রের দেহে গামছা জড়ানো ছিল, সেটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই গামছায় রক্তের দাগ রয়েছে। পুলিশের দাবি, ‘জেইউএমএইচ’ নামে একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিলেন সৌরভরা। হস্টেলে সৌরভ থাকেন কি না, সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে কী বলা হবে, সেই নিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ওই গ্রুপে। পরে ওই গ্রুপটি ডিলিট করে দেওয়া হয়। এই নিয়ে বিস্তারিত জানতে সৌরভের সঙ্গে এক ধৃতের মুখোমুখি জেরা করা হয়। সেই সূত্রে দু’টি মোবাইলের হদিস পান তদন্তকারীরা। সেই ফোনগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
আদালতে সৌরভের আইনজীবীর সঙ্গে সরকার পক্ষের আইনজীবীর সওয়াল-পাল্টা সওয়াল চলে। সৌরভের আইনজীবী জানান, তদন্তে সৌরভ সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। যদিও পুলিশ দাবি করেছে, এই মামলায় অনেক অগ্রগতি হচ্ছে। দাগী বন্দিদের সঙ্গে যাতে জেলে সৌরভকে না রাখা হয়, সেই আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। এই প্রসঙ্গে সরকার পক্ষের আইনজীবী জানান, এই নিয়ে যা নিয়ম রয়েছে, তা মেনে চলা উচিত। সৌরভের আইনজীবী বলেন, ‘‘পিক অ্যান্ড চুজ় করা হচ্ছে।’’ প্রত্যুত্তরে সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘পিক অ্যান্ড চুজ় করে দল বেঁধে মারা হয়েছে।’’ পাল্টা সৌরভের আইনজীবী বলেন, ‘‘এটা এখনই কী করে বলছেন!’’
শুক্রবার আদালতে প্রবেশের সময় সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রশ্নেরই জবাব দেননি সৌরভ। যাদবপুরে কি গাঁজার কারবার হয়? সংবাদমাধ্যমের এই প্রশ্নের মুখোমুখি হন সৌরভ। কিন্তু কোনও জবাব দেননি তিনি।
গত ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে এক ছাত্র নীচে পড়ে যান বলে অভিযোগ। পরের দিন ভোরে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। র্যাগিংয়ের জেরে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। তদন্তে নেমে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় প্রাক্তনী এবং পড়ুয়া মিলিয়ে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় প্রথম সৌরভকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। সৌরভকেই ‘কিংপিন’ বলে দাবি করেছে পুলিশ। যদিও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন সৌরভ। গত মঙ্গলবার আদালতে প্রবেশের সময় সৌরভ বলেছিলেন, ‘‘আমি অপরাধী নই। অপরাধী সাজানো হয়েছে আমাকে।’’ আদালতে সরকারি কৌঁসুলি জানিয়েছিলেন, চার জনকে নিয়ে হোয়াট্সঅ্যাপে একটি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন সৌরভ। তাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘মা অসুস্থ হলে আমি আসি। না হলে হস্টেলে আসি না।’’ যাঁদের মেসেজ পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের এক জনের মোবাইল থেকে পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। সরকারি কৌঁসুলির দাবি, পুলিশকে বিভ্রান্ত করতেই এই কথা লেখা হয়েছিল।
অন্য দিকে, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় র্যাগিংয়ের প্রমাণ মিলেছে বলে লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে। লালবাজার সূত্রে খবর, হস্টেলের ৭০ নম্বর ঘরে ওই ছাত্রকে বিবস্ত্র করানো হয়েছিল। তার পর তাঁকে বারান্দায় বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয়। কী ভাবে র্যাগিং হয়েছে, তার নথি মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে জমা করেছে পুলিশ। গত ৯ অগস্ট রাতে ওই ছাত্রকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল বলে দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy