—প্রতীকী চিত্র।
কখনও প্রতিবেশী দেশের সাংসদের মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে, কখনও ভিন্ রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা দুষ্কৃতীদের থাকার জায়গা হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে। কখনও শহরের ব্যবসায়ীর মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে, কখনও আবার দফায় দফায় গ্রেফতার হচ্ছে জঙ্গির দল।
অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ঠেক থেকে নানা অসামাজিক কাজকর্মের অকুস্থল হিসাবে বার বার চিহ্নিত হচ্ছে শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অতিথিশালাগুলি। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের সে দিকে নজর পড়ছে কি? কসবায় শাসকদলের পুরপ্রতিনিধিকে খুনের চেষ্টার ঘটনাতেও একই ভাবে একটি অতিথিশালায় বসেই সব পরিকল্পনা করার তথ্য সামনে আসায় নতুন করে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও অভিযোগ, এমন অতিথিশালাগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা তো দূর, আদতে তাদের সঙ্গে চলে আলাদা হিসাবের খেলা। সেই হিসাব মতো টাকা দিতে পারলেই সব ছাড়!
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে এমন অতিথিশালার সংখ্যা তাদের হিসাবে প্রায় পাঁচ হাজার। কিন্তু আদতে এর চেয়ে অনেক বেশি অতিথিশালা এই মুর্হূতে কলকাতায় রয়েছে বলে লালবাজারের দাবি। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের এক অফিসারের কথায়, ‘‘ঠিক কত অতিথিশালা কলকাতায় রয়েছে, তার ঠিক হিসাব পুরসভার কাছেও নেই। পুরসভাকে না জানিয়েই পাড়ায় পাড়ায় বসতবাড়িতে অতিথিশালা তৈরি করে ফেলা হচ্ছে।’’ ওই অফিসারের দাবি, পুলিশের হিসাবে পুরসভার নজরের বাইরে থাকা এমন অতিথিশালার সংখ্যা প্রায় চার হাজার।
যদিও পুর আইন অনুযায়ী, কোথাও অতিথিশালা চালাতে হলে পুরসভাকে কর দিতে হয়। পুরসভাকে না জানিয়ে অতিথিশালা চললে প্রতি বর্গমিটারের হিসাবে জরিমানা ধার্য করার বিধানও রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, জরিমানা আদায় তো দূর, বছরের পর বছর অনুমোদনহীন অতিথিশালা পুরসভার নজরের বাইরেই থেকে যায়। প্রতি বছর পুরসভার কর বাবদ ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা। কিন্তু পুলিশ কী করে? স্থানীয় থানা থেকেই বা কেন পদক্ষেপ করা হয় না?
নিয়ম অনুযায়ী, অতিথিশালা চালাতে হলে পুরসভার পাশাপাশি স্থানীয় থানায় চিঠি দিয়ে জানাতে হয়। প্রতিদিন আবাসিকদের হিসাব রাখতে হয়। সপ্তাহে এক দিন নিয়ম করে থানা থেকে অফিসার গিয়ে ওই হিসাব খতিয়ে দেখার কথা। এ ছাড়া, মাঝেমধ্যেই এলাকার অতিথিশালা পরিদর্শন করার কথা স্থানীয় থানার। কিন্তু বাস্তবে লালবাজার বা উঁচুমহল থেকে নির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত কোনও থানাই কোনও অতিথিশালার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে না বলে অভিযোগ।
পূর্ব যাদবপুর এলাকার এমনই এক অতিথিশালার উল্টো দিকের বাড়ির বাসিন্দার দাবি, ‘‘প্রায়ই মধ্যরাত পর্যন্ত ওখানে বক্স বাজিয়ে তাণ্ডব চলত। তরুণীর কান্নার শব্দও শোনা যেত। থানায় ফোন করায় বলা হয়েছিল, অভিযোগ থাকলে লিখিত আকারে দিন। কিন্তু ঝামেলায় পড়তে চাইনি। দিন কয়েক পরে দেখি, পুলিশ অতিথিশালা সিল করে দিয়েছে। শুনলাম, ভিন্ রাজ্যের তরুণীদের নিয়ে এসে আটকে রেখে কুকর্ম করানো হত। কথা মতো কাজ না করলেই জুটত মার।’’ বৈষ্ণবঘাটা পাটুলির এক বাসিন্দার আবার অভিযোগ, ‘‘বহু বয়স্ক মানুষ থাকেন আমাদের পাড়ায়। আশপাশের বহু বাড়ির মালিক অতিথিশালা চালানোর জন্য কাউকে ভাড়ায় দিয়ে রেখেছেন। যে কেউ এসে কোনও পরিচয়পত্র ছাড়াই এখানে থাকতে পারেন। বয়স্কদের নিয়ে পুলিশের করা অনুষ্ঠানেও ব্যাপারটা জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’’
খিদিরপুরের যে অতিথিশালায় দিন কয়েক আগেই দু’জন জঙ্গি উঠেছিল বলে পুলিশি তদন্তে সামনে এসেছে, সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সব চলছে আগের মতোই। কোনও পরিচয়পত্র দেখানোর বালাই নেই। যিনি থাকছেন, তাঁর নাম-পরিচয় লিখে রাখা হয় না খাতাতেও। এর পরেও পুলিশ কিছু বলে না? মালিকের দাবি, ‘‘পুলিশের সঙ্গে কথা বলা আছে।’’ একই রকম কথা শোনা গেল আনন্দপুরের গুলশন কলোনিতেও। সেখানেও গজিয়ে উঠেছে বেশ কিছু অতিথিশালা। তারই একটির মালিকের দাবি, ‘‘এই এলাকায় সহজে পুলিশ আসে না। এলেও দাদারা সব সেটিং করে রেখেছে।’’ লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘থানায় থানায় কড়া নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। কোন এলাকায় কত অতিথিশালা রয়েছে, তার তালিকা তৈরি হচ্ছে।’’ তার পরে কি পদক্ষেপ করা হবে? উত্তর মেলে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy