অপেক্ষা: শুরু হল ৪৫ বছর ও তার বেশি বয়সিদের প্রতিষেধক দেওয়া। বৃহস্পতিবার, চেতলায় পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ছবি: সুমন বল্লভ
সচেতনতা ও প্রতিষেধক— করোনা-যুদ্ধে এই দু’টিতেই জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের কথায়, “সংক্রমণ রুখতে মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি মেনে চলা যেমন জরুরি, তেমনই হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করতে বড় সংখ্যক মানুষের প্রতিষেধক নেওয়াও প্রয়োজন।”
সেই লক্ষ্যেই দেশ জুড়ে করোনা প্রতিষেধক নেওয়ার নয়া বিধি চালু করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। যা মেনে বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল থেকে ৪৫ বছর বয়সি যে কেউ প্রতিষেধক নিতে পারছেন। তার জন্য কোমর্বিডিটি থাকতে হবে না। এ দিন তাই শহরের সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রবীণদের পাশাপাশি ৪৫ বছর বয়সিদেরও অনেককে প্রতিষেধক নিতে দেখা গিয়েছে।
গত ১২ জানুয়ারি রাজ্যে এসেছিল করোনার প্রতিষেধক। ১৬ জানুয়ারি থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তা দেওয়া শুরু হয়। ১ মার্চ ৪৫-৫৯ বছরের কোমর্বিডিটি আছে, এমন লোকজন এবং প্রবীণদের প্রতিষেধক দেওয়া চালু হয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়েছে, ৪৫ বছর হলেই যে কেউ প্রতিষেধক নিতে পারবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রক বৃহস্পতিবার আরও একটি নির্দেশিকায় জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রতিদিনই প্রতিষেধক দেওয়া হবে। ছুটির দিনেও তা বন্ধ থাকবে না।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “রাজ্যে প্রতিদিন অন্তত এক লক্ষ মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছিল। কোনও কোনও দিন তার অনেক বেশিও হচ্ছে। লক্ষ্য, দ্রুত বেশি সংখ্যক মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া।” তিনি জানান, ৪৫-৫৯ বছর বয়সিরা ‘কো-উইন’ পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করে প্রতিষেধক পাবেন। বিকেল তিনটের পরে আধার কার্ড নিয়ে স্পট রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমেও পেতে পারেন।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাত সাড়ে ন’টা পর্যন্ত কো-উইন পোর্টাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ দিন ২৬৭৩টি কেন্দ্রে মোট ১ লক্ষ ২৯ হাজার ১২৮ জন প্রতিষেধক নিয়েছেন। তার মধ্যে ৪৫ থেকে বিভিন্ন বয়সের ৯১ হাজার ৫৬০ জন রয়েছেন। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “এ দিন প্রতিষেধক নেওয়ার পরে কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। রাজ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৫২ লক্ষ ৬৭ হাজার জন প্রতিষেধক নিয়েছেন।”
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল বলেন, “প্রথম লক্ষ্য ছিল, সামনে থেকে করোনার মোকাবিলা করছেন যাঁরা, তাঁদের প্রতিষেধক দেওয়া। দ্বিতীয় লক্ষ্য, মৃত্যুহার কমানো। তাই প্রবীণ ও নির্দিষ্ট বয়সের কোমর্বিডিটি আছে, এমন মানুষকে দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় লক্ষ্য, হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করা। তাই ৪৫ থেকে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে।”
পিয়ারলেস হাসপাতালের তরফে সুদীপ্ত মিত্র বলেন, “৪৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সিদের মধ্যে প্রতিষেধক নিতে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। এ দিন ওই বয়সের ১৪৫ জন প্রতিষেধক নিয়েছেন।” কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তাও জানাচ্ছেন, ওই বয়সিদের মধ্যেই প্রতিষেধক নেওয়ার উৎসাহ এ দিন ছিল বেশি। যদিও ৪৫-৫৯ বছর বয়সিদের তুলনায় তাঁদের হাসপাতালে প্রবীণদের ভিড় অনেক বেশি ছিল বলেই জানাচ্ছেন আমরি হাসপাতাল গোষ্ঠীর কর্তা রূপক বড়ুয়া। তাঁর কথায়, “প্রথম দিন বলে হয়তো কম। আশা করি, ওই বয়সিরাও প্রতিষেধক নিতে আসবেন।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের মতে, “প্রতিষেধক নেওয়ার পরে মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের মধ্যে যদি ইমিউনিটি তৈরি হয়, তবেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই সহজ হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy