প্রতীকী ছবি।
অচেনা নম্বর থেকে আসা ভিডিয়ো কল ধরতেই ভেসে উঠেছিল এক মহিলার মুখ। একটু পরেই ফোনের ক্যামেরার সামনে থেকে সরে যান তিনি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিনি ফিরে আসেন নগ্ন অবস্থায়। কে আপনি? কোথা থেকে ফোন করছেন? প্রশ্নের মধ্যেই ভিডিয়ো কলটি রেকর্ড করে নেন সেই মহিলা!
অভিযোগ, এর পর থেকেই সেই ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হতে থাকে সদ্য কলেজ পাশ করা এক তরুণকে। এমনকি, টাকা না দিলে ওই তরুণের বাবা-মা এবং পরিচিতদের ফোনেও ভিডিয়ো পাঠানোর হুমকি দেওয়া হতে থাকে। দফায় দফায় টাকা পাঠানো হলেও তা বন্ধ হয়নি। শেষে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় সেই তরুণের!
৬ অক্টোবরের এই ঘটনায় গত সোমবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে মৃতের পরিবার। মৃতের বাবা তাঁর ছেলেকে যৌনচক্রে ফাঁসিয়ে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ দায়ের করেছেন। হরিদেবপুর থানার পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ব্ল্যাকমেল এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে। তদন্তে নেমেছে লালবাজারের সাইবার শাখাও। লালবাজারের অনুমান, এই ঘটনায় ভরতপুর গ্যাং জড়িত। ইতিমধ্যেই সেখানে পুলিশের দল পৌঁছেছে।
এ ভাবে প্রতারণার বহু অভিযোগ সম্প্রতি উঠেছে। কিছু দিন আগে সরব হয়েছিলেন এক পরিচিত চিকিৎসকও। অভিযোগ, মূলত হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো কল করা হচ্ছে। কথার মধ্যেই চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে নগ্ন ভিডিয়ো। সেই ভিডিয়ো কলের স্ক্রিন শট বা ফুটেজ ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দাবি করা হচ্ছে টাকা। এমনকি, কেউ আমল না দিলে অন্য নম্বর থেকে পুলিশ পরিচয়ে ফোন করা হচ্ছে। লালবাজার বা দিল্লি পুলিশে অভিযোগ এসেছে জানিয়ে বলা হচ্ছে, ধামাচাপা দিতে হলে টাকা দিতে হবে। ফাঁদে পড়ে অনেকেই দিয়ে ফেলছেন টাকা।
এই ঘটনায় মৃতের নাম আকাশ রং। বছর তেইশের আকাশ সদ্য নেতাজিনগর কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেছিলেন। তাঁদের মাছের ব্যবসা রয়েছে। হরিদেবপুর থানা এলাকার রামচন্দ্রপুরে বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে তিনি থাকতেন। আকাশের এক বন্ধু বুধবার জানান, একাদশীর রাতে তাঁকে ফোনে আকাশ জানান, টাকার দরকার। একটি মোবাইল নম্বরে অ্যাপ-নির্ভর ইন্টারনেট পেমেন্ট পদ্ধতিতে ১৫০০ টাকা পাঠাতে বলেন। কিছু পরে ওই নম্বরেই আরও চার হাজার টাকা পাঠাতে বলেন তিনি। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আরও এক হাজার টাকা পাঠানোর অনুরোধ করলে বন্ধু কারণ জানতে চান। ওই বন্ধু বলেন, ‘‘ভিডিয়ো কলের কথা বলে আকাশ আমাকে জানায়, ও ফেঁসে গিয়েছে। টাকা না দিলে ওই ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি ওকে পুলিশে যেতে বলি। ওর বাবাকেও বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দিই।’’ তিনি আরও জানান, রাতে তাঁকে আকাশ বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তিনিই এর পরে আকাশের বাবাকে বিষয়টি খুলে বলেন। তখনও হুমকি আসছিল বলে অভিযোগ।
আকাশের বাবা রবীন রং বলেন, ‘‘ফোনের সিম খুলে নিয়ে নিই আমি। পরদিন সকালে যা করার করব বলে জানাই। ছেলে শুতে চলে যায়। ভোরে ঠাকুরঘরে যেতে গিয়ে ওর মা ছেলের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়।’’ এ দিন আকাশদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর মায়ের কথা বলার মতো অবস্থা নেই। তিনি শুধু বললেন, ‘‘ছেলেটাকে এই ভাবে যারা শেষ করে দিল, তাদের শাস্তি চাই। এই জন্যই পুলিশে অভিযোগ করেছি।’’
গত বছরের মার্চে অভিনেতা অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার সহকারী পিন্টু দে-র আত্মঘাতী হওয়ার পিছনেও এমনই ঘটনা ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। তখন পুলিশের তরফে সচেতনতার প্রচারও চালানো হয়। কিন্তু তাতেও যে কিছু বদলায়নি, তা এই ঘটনাতেই প্রমাণ হল বলে মত অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy