অঘটন: পরিত্যক্ত এই পাম্প হাউসের ছাদ ভেঙ্গেই মৃত্যু হয় এক জনের। বুধবার, দক্ষিণ কলকাতার পুর্ণদাস রোডে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
জরাজীর্ণ ঘর। ঘরের উপরের দিকে দেওয়াল ফুঁড়ে বেরিয়েছে গাছ। কলকাতা পুরসভার পরিত্যক্ত এই পাম্প হাউসের ছাদ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। বুধবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে রবীন্দ্র সরোবর থানা এলাকার পূর্ণদাস রোডে। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত যুবকের নাম পাপ্পু দাস (৩৬)। তাঁর আদি বাড়ি ঝাড়খণ্ডের কোডারমায়। এই ঘটনায় পুরসভার ওই পরিত্যক্ত পাম্প হাউসের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই পুরসভার পরিত্যক্ত পাম্প হাউসগুলি খুঁজে বার করে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
পুলিশ জানিয়েছে, পরিত্যক্ত ওই ঘরটিতে থাকতেন পাপ্পুর জামাইবাবু দেবনারায়ণ দাস। দেবনারায়ণ জানান, তিনি কলকাতা পুরসভার সাফাইকর্মী হিসাবে কাজ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ওই পরিত্যক্ত ঘরে থাকতাম। পাপ্পু থাকতেন গোপালনগরে। তিনিও সাফাইয়ের কাজ করতেন। এ দিন তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।’’
তবে, দুর্ঘটনার সময়ে তিনি ওই ঘরে ছিলেন না বলেই জানিয়েছেন দেবনারায়ণ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিকেলের দিকে পাপ্পু ওই ঘরে একাই ছিলেন। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। আচমকা ওই ঘরটির ছাদের একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা বিট্টু পাল বলেন, ‘‘আচমকা একটা বিকট শব্দ। এসে দেখি, এই অবস্থা।’’ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ এবং দমকল বাহিনী। গুরুতর জখম পাপ্পুকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভেঙে পড়া ওই ঘরের মধ্যে রয়েছে হাঁড়ি, জলের বোতল-সহ গেরস্থালির নানা সামগ্রী। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রাতে দেবনারায়ণ-সহ বেশ কয়েক জন ওই ঘরে থাকতেন।
কিন্তু পুরসভার জরাজীর্ণ এবং পরিত্যক্ত ওই পাম্প হাউসের কেন এত দিন কোনও রকম রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি? কেন ওই রকম একটি বিপজ্জনক ঘরে মানুষজন থাকছিলেন? এ দিনের ঘটনার পরে এই সমস্ত প্রশ্ন উঠেছে। ওই পাম্প হাউসটি পুরসভার ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সেই ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সৌরভ বসু এ দিন বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভার পরিত্যক্ত ওই পাম্প হাউসে ব্লিচিং পাউডার, ঝাঁটা ইত্যাদি রাখা থাকত। সেখানে কাউকে থাকতে নিষেধ করা হয়েছিল।’’ রাতের দিকে ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় বিধায়ক দেবাশিস কুমার। তিনি বলেন, ‘‘এখানে কারও থাকার কথা নয়। এটা ভেঙে দেওয়ার কথা। কিন্তু এই ঘরটি পুরসভার পাম্প হাউস। তাই এটি ভেঙে ফেলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে, যতটা তৎপরতার সঙ্গে এই জরাজীর্ণ ঘরটি ভেঙে ফেলা দরকার ছিল, তা করা হয়নি।’’
খবর পেয়ে রাতের দিকে এসএসকেএম হাসপাতালে আসেন পাপ্পুর বড় বৌদি মন্দ্রিতা দাস এবং মন্দ্রিতার দুই ছেলে বিকাশ দাস ও আকাশ দাস। খবর পেয়ে হাসপাতালে যান মেয়রও। মন্দ্রিতারা থাকেন তারাতলায়। বিকাশ জানান, ঝাড়খণ্ডের বাড়িতে পাপ্পুর স্ত্রী মধু দেবী এবং তাঁদের ছোট ছোট এক ছেলে এবং তিন মেয়ে রয়েছে।
কিন্তু তিনিই বা কেন ওই জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত পাম্প হাউসে থাকতেন? এই অঘটন তো তাঁর সঙ্গেও ঘটতে পারত? এই প্রশ্নের উত্তরে হাসপাতালে দাঁড়িয়ে দেবনারায়ণের আক্ষেপ, ‘‘এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যাবে জানলে কি আর থাকতাম ওই ঘরে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy