Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Attack On Police

‘পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো ছেলেকে ধরিয়ে দিয়েছিলাম, বাকিরা শিখছে কই’

শনিবার ফের রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ধর্মতলা চত্বর। ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’-এর (আইএসএফ) অবস্থান বিক্ষোভে পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠি চালানোর অভিযোগ ওঠে।

সাহসী: অসিত সরকার ও পলি সরকার। রবিবার, হালতুর বাড়িতে।  ছবি: সুমন বল্লভ।

সাহসী: অসিত সরকার ও পলি সরকার। রবিবার, হালতুর বাড়িতে। ছবি: সুমন বল্লভ।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪০
Share: Save:

ছেলেকে পুলিশ খুঁজছে। বিজেপি-র নবান্ন অভিযানে পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সেই ছেলে! বাড়ির সকলে ঠিক করে রেখেছেন, ছেলেকে আপাতত দূরের কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সব ঠান্ডা হলে ফেরানো হবে কলকাতায়। বেঁকে বসেন সেই অভিযুক্তের মা। তিনিই ছেলেকে তুলে দেন পুলিশের হাতে। বলেন, ‘‘আমার ছেলে ভুল করেছে। আমি ঢাকলে অন্যায় হবে। তাই ধরিয়ে দিলাম। অপরাধ করলে দোষ স্বীকার করে নেওয়ার চেয়ে ভাল কিছু হয় না। অন্যদেরও বলতে চাই, গন্ডগোল করে কিছুই লাভ হয় না।’’

গত সেপ্টেম্বরে বিজেপি-র নবান্ন অভিযানে ধুন্ধুমার হয় কলকাতায়। পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর এবং আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে আহত হন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। টানা তদন্তে ১০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই সময়েই গ্রেফতার হন হালতুর বাসিন্দা দীপ সরকার। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরানোর সময়ে টি-শার্ট পরা দীপের ছবি ধরা পড়ে। পুলিশের তরফে তা প্রকাশ করা হয়।

ওই ঘটনার চার মাসের মাথায় শনিবার ফের রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ধর্মতলা চত্বর। ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’-এর (আইএসএফ) অবস্থান বিক্ষোভে পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠি চালানোর অভিযোগ ওঠে। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা লাঠি, বাঁশ নিয়ে হামলা চালানোহয় বলে অভিযোগ। দেদার ছোড়া হয় ইট-পাথর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে হয়। গুরুতর জখম হন বৌবাজার থানার ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি। সেই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই মিল পাচ্ছেন গত সেপ্টেম্বরের বিজেপি-র নবান্ন অভিযানের।

সেই মিল ধরা পড়েছে দীপের মা পলি সরকারের নজরেও। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘টিভিতে দেখেছি শনিবার সন্ধ্যায় ধর্মতলার ছবি। পরিস্থিতি কিছুই বদলায়নি। দেখলাম, আমার ছেলের মতোই কিছু বাচ্চা ছেলে আবার ভুল করছে। আমার ছেলে এখন নিজের দোষ বুঝেছে। অনুতাপ করে। কিন্তু যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো ছেলেকে ধরিয়ে দিয়েছিলাম, বাকিরা শিখছে কই?’’

হালতুর প্রসন্ন দাস রোডে বাড়ি দীপদের। তাঁর বাবা অসিত সরকার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক হিসাবে এলাকায় পরিচিত। বছর আটেক আগে বিয়ে করেন দীপ। তাঁর একটি মেয়েও রয়েছে। সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনার পর গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১ মাস তাঁকে বন্দি থাকতে হয়। প্রথমে লালবাজারের লকআপ, তার পরে প্রেসিডেন্সি জেল। তিনি এখন জামিনে মুক্ত। কিন্তু প্রায়ই তাঁকে জেতে হয় হাজিরা দিতে। মামলার শুনানির দিনে যান আদালতে। দীপের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই এলাকায় কেমন যেন একঘরে তাঁরা। অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেন। কেউ দীপের নাম করে খোঁজ করতে এলেই ভয় হয় সরকার পরিবারের। সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে, দীপের কাজ পাওয়া নিয়ে। আগের কাজ চলে গিয়েছে। দীপের বাবার কথায়, ‘‘ছেলে লোকের গাড়ি চালায়। নতুন কাজ খুঁজতে গেলে মেলে না। ভাল চাকরির সুযোগ এলেও পুলিশ যাচাই করতে এলেই আটকে যায়।’’

এত কিছুর মধ্যে কোনও ক্রমে মেয়ের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন দীপ ও তাঁর স্ত্রী। দীপের স্ত্রী শুধু বলেন, ‘‘লড়াই কঠিন। কিন্তু একসঙ্গেই লড়াই করছি।’’ আর দীপ বললেন, ‘‘সে দিন ভুল হয়েছিল। ঝামেলায় সমস্যার সমাধান হয় না। সমাধান আসে আলোচনার টেবিলে। সকলকে বলতে চাই, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার আগে এটা মাথায় রাখা দরকার।’’

অন্য বিষয়গুলি:

ISF BJP Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy