অকুস্থল: শনিবার ই এম বাইপাসের এক আবাসনের সামনে, এই রাস্তাতেই তরুণীকে বাঁচাতে যান নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায় (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র
রাতের অন্ধকারে গাড়ি থেকে ভেসে এসেছিল বিপদে পড়া এক তরুণীর চিৎকার। কোভিডের পরিবেশেও ছোঁয়াচের আশঙ্কার কথা ভুলে তরুণীকে উদ্ধার করতে গাড়ির দিকে ছুটেছিলেন এক দম্পতি। অভিযুক্ত গাড়ির চালক সেই মুহূর্তে তরুণীকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। কিন্তু তত ক্ষণে গাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছিলেন ওই মহিলা। চালক গাড়ি নিয়ে পালাতে গিয়ে ধাক্কা মারে মহিলাকে। রাস্তায় ছিটকে পড়লে মহিলার পায়ের উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে চম্পট দেয় সে।
শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ই এম বাইপাসে, আনন্দপুর থানা এলাকার আর আর প্লটে একটি আবাসনের সামনে। গাড়ির চাকায় পায়ের হাড় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে মহিলার। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির ভিতর থেকে ছিটকে পড়া ওই তরুণীও আতঙ্কে রয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, গাড়ির চালকের নাম অমিতাভ বসু। পাঁচ দিন আগে তার সঙ্গে তরুণীর পরিচয় হয়। শনিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁরা বেরিয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই ঘটনা ঘটে।
কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গাড়িটিকে খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে। তরুণী এখনও আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন। তাঁর মাথায় ও মুখে চোট রয়েছে।
পুলিশ জানায়, মায়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান সেরে ওই আবাসন থেকে বেরিয়ে স্বামী দীপ শতপথী ও মেয়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। সেই সময়ে আবাসনের কাছেই তাঁদের গাড়ির পিছনে দাঁড়ানো একটি গাড়ির ভিতর থেকে ওই তরুণীর চিৎকার শোনেন দীপ ও নীলাঞ্জনা। নিজেদের গাড়িটিকে তাঁরা পিছনের গাড়ির সামনে আড়াআড়ি ভাবে দাঁড় করিয়ে দেন। নীলাঞ্জনা গাড়ি থেকে নেমে পিছনের গাড়ির দিকে যেতেই সেটির ভিতর থেকে ওই তরুণীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
দীপ রবিবার জানান, নীলাঞ্জনা দৌড়ে গিয়ে ওই তরুণীকে ধরে তুলতে যান। ইতিমধ্যে তিনিও গাড়ি থেকে নেমে ওই গাড়ির দিকে এগোতে গেলে সেটি জোর গতিতে বাঁক ঘুরিয়ে নিতে যায়। নীলাঞ্জনা সেটিকে ধাওয়া করতে গেলে তাঁকে ধাক্কা মারে গাড়িটি। পালানোর সময়ে নীলাঞ্জনার পায়ের উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দেয় চালক। আহত ওই মহিলা রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে থাকেন।
দীপের কথায়, ‘‘পায়ের বদলে মাথার উপর দিয়ে গাড়ির চাকা গেলে সব শেষ হয়ে যেত।’’ একা রাতের অন্ধকারে বাইপাসের উপরে দাঁড়িয়ে কাছেই এক বেসরকারি হাসপাতালে দীপ ফোন করেন অ্যাম্বুল্যান্সের
জন্য। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে তিনি ১০০ ডায়াল করেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে কসবা ট্র্যাফিক গার্ডের এক সার্জেন্ট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কলকাতা পুলিশের ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নীলাঞ্জনাকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছে আনন্দপুর থানার পুলিশ ওই তরুণীকেও উদ্ধার করে।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ওই তরুণী নয়াবাদ এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত। ১ সেপ্টেম্বর তাঁর সঙ্গে অমিতাভ বসু নামে ওই ব্যক্তির আলাপ হয়। তরুণী পুলিশকে জানান, শনিবার সাড়ে আটটা নাগাদ অমিতাভ গাড়ি নিয়ে এসে ফোন করলে তিনি বেরিয়ে আসেন। এবং দু’জনে মিলে গাড়িতে করে বেরোন। পরে আরও রাতে তিনি অমিতাভকে অনুরোধ করেন তাঁকে তাঁর ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে দিতে। কিন্তু অমিতাভ রাজি হচ্ছিলেন না। তরুণী পুলিশকে জানান, তিনি গাড়ি থেকে নামার জন্য জোর করতে থাকেন। অভিযোগ, তখনই অমিতাভ গাড়ির মধ্যে তাঁকে যৌন হেনস্থা করে। তাঁর জামা-কাপড়ও ছিঁড়ে দেয়।
উদ্ধারকারী দীপ জানান, গাড়ি থেকে যখন তরুণীকে ফেলে দেওয়া হয় তখন তাঁর পোশাক ছেঁড়া ছিল। চোখে-মুখে মারধরের চিহ্নও ছিল। নীলাঞ্জনার মাথায় ছ’টি সেলাই পড়েছে। বাঁ পায়ের হাঁটুর পিছনে হাড় ভেঙে গিয়েছে। শিনবোন টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। আজ, সোমবার তাঁর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা।
দীপের অভিযোগ, তাঁরা ঘটনার পরে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করতে চাইলেও পুলিশ তা নিতে রাজি হয়নি। যদিও পুলিশের পাল্টা দাবি, একসঙ্গেই দু’টি ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy