ভানু বালা।
শহরে ফের ডেঙ্গিতে মৃত্যু। সোমবার গভীর রাতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গিয়েছেন বেলগাছিয়ার বাসিন্দা এক মহিলা। এ নিয়ে রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৮। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরও। তাদের জারি করা প্রোটোকল মেনেই ডেঙ্গির চিকিৎসা চলছে কি না, তা দেখতে এ বার সব হাসপাতাল পরিদর্শন শুরু করছে স্বাস্থ্য ভবন।
ডেঙ্গিতে মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, “পরিস্থিতি ভয়াবহ। ডেঙ্গি পরিচিত রোগ বলে মানুষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর অবস্থা অতি সঙ্কটজনক হলে হাসপাতালে আনা হচ্ছে।” সোমবার যে মহিলার মৃত্যু হয়েছে, তাঁর নাম ভানু বালা (৪০)। বেলগাছিয়ার দত্তবাগানের বাসিন্দা ওই বধূর ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোমের উল্লেখ রয়েছে। ওই দিন রাত সওয়া ১টা নাগাদ ভানুকে আর জি করে ভর্তি করা হয়। সওয়া তিনটে নাগাদ তিনি মারা যান। দত্তবাগানের সরকারি আবাসনের বাসিন্দা ভানুর স্বামী কৌশিক জানান, গত শনিবার তাঁর স্ত্রীর জ্বর আসে। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করিয়ে রবিবার রাতে জানা যায়, ভানু ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। সোমবার সন্ধ্যায় শৌচালয়ে যেতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান ভানু। রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোমবার ছিল ভানুর জন্মদিন। রাতে কেক কাটার পরিকল্পনাও ছিল স্বামী-স্ত্রীর। কিন্তু সন্ধ্যায় প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই মহিলা। কৌশিকের অভিযোগ, “রাতে হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন না। তাই কার্যত বিনা চিকিৎসায় আমার স্ত্রী মারা গেলেন।” যদিও অভিযোগ মানেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক কর্তার কথায়, “মহিলা শকে চলে গিয়েছিলেন। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হতে শুরু করেছিল। চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি।” সরকারি ও বেসরকারি, সব হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই একযোগে দাবি করছেন, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই তীব্র জ্বর, গা-হাত-পায়ে ব্যথার মতো সমস্যা না হলে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না। দেরি করে নিজেদের অজানতেই বিপদ বাড়াচ্ছেন। কম জ্বরের সঙ্গে কয়েক দিন ধরে পেটের সমস্যাতেও অ্যালাইজ়া পদ্ধতিতে ডেঙ্গি পরীক্ষা করানো প্রয়োজন বলে মত চিকিৎসকদের।
এ বছরে রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃতদের মধ্যে কলকাতা পুর এলাকার বাসিন্দা ১২ জন। দু’জন উত্তর কলকাতার ও বাকি দশ জনই দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে প্রতিদিন যত সংখ্যক ডেঙ্গি পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে ৪০-৪৫টি করে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছে। সেই রোগীদের ছয় থেকে আট জন ভর্তি হচ্ছেন। যাঁদের মধ্যে দু’-এক জন সঙ্কটজনক রোগীও থাকছেন। এম আর বাঙুর, বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল, বেলেঘাটা আইডি থেকে শুরু করে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজেই প্রতিদিন নতুন ডেঙ্গি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। একই অবস্থা বেসরকারি হাসপাতালেও। সেখানকার চিকিৎসা পদ্ধতি খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য অধিকর্তার নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের দল পরিদর্শন চালাচ্ছে। পাশাপাশি, ডেঙ্গিতে মৃত রোগী জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কত দিন পরে হাসপাতালে এসেছিলেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানান, প্রতিদিন ৬০০-৭০০ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে কয়েকটি জেলায় লেখচিত্র নিম্নমুখী। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি বন্ধ না হলে মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন তিনিও। তাঁর কথায়, “জমা জল অবিলম্বে না সরালে মশার বংশবিস্তার ঘটবে। তাই মানুষকে ও পুরসভা-পঞ্চায়েতগুলিকে সতর্ক হতে হবে।” এ দিন ভানুদের সরকারি আবাসনে গিয়ে দেখা গেল, চার দিকে আবর্জনা। জমে আছে নিকাশির জল। আবাসিকদের অভিযোগ, সাফাই ঠিক মতো হয় না। মশার তেলও নিয়মিত ছড়ানো হয় না। ওই আবাসনেই পাঁচ জন আক্রান্ত। স্থানীয় কাউন্সিলর দেবিকা চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘আবাসনের ভিতরে সাফাইয়ের কাজ পুরসভা করে না। তবে আবাসনের ভিতরে মশা মারার তেল নিয়মিত দেওয়া হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy