Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Death on Cancer

ক্যানসারে মৃত ছাত্রের শ্রাদ্ধের দিন অ্যাকাউন্টে জমা পড়ল ট্যাব কেনার ১০ হাজার টাকা!

গত সোমবারই ছিল তার সেই স্বপ্নপূরণের দিন। সে দিনই ট্যাব কেনার টাকা ঢোকে অনীশের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু তা আর দেখা হয়ে ওঠেনি ওই পড়ুয়ার। অনীশের লড়াইটা চলছিল গত এক বছর ধরেই।

অনীশ সান্যাল।

অনীশ সান্যাল।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২২ ০৭:০৩
Share: Save:

আগামী বছরেই উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল তার। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন হলে মায়ের মোবাইল ব্যবহার করত দ্বাদশ শ্রেণির অনীশ সান্যাল (১৭)। তবে নিজের একটা মোবাইল কেনার স্বপ্ন ছিল তার অনেক দিনের। অপেক্ষায় ছিল, স্মার্টফোন বা ট্যাব কিনতে সরকারের দেওয়া ১০ হাজার টাকা কবে ঢুকবে তার নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

গত সোমবারই ছিল তার সেই স্বপ্নপূরণের দিন। সে দিনই ট্যাব কেনার টাকা ঢোকে অনীশের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু তা আর দেখা হয়ে ওঠেনি ওই পড়ুয়ার। ক্যানসার আক্রান্ত অনীশের লড়াইটা চলছিল গত এক বছর ধরেই। গত ৪ নভেম্বর সেই লড়াইয়ে ছেদ পড়ে। আর গত সোমবার ছিল অনীশের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। কান্নায় ভেঙে পড়ে মা টিনা সান্যাল বলছেন, ‘‘ছেলেটাই তো নেই। ট্যাব কেনার টাকা নিয়ে আমি আর কী করব?’’

মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশ নম্বর পাওয়া অনীশ আর পাঁচটা ছেলের মতোই ছিল ছটফটে। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে ওঠার পরে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। টিনা বলেন, ‘‘ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে জানা যায়, ওর ফুসফুস আর হৃদ্‌যন্ত্রের মাঝে একটা টিউমার হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা গেল, ওই টিউমার ম্যালিগন্যান্ট।’’

এর পরেই জীবন বদলে যায় অনীশের। ভেলোর থেকে শুরু করে এসএসকেএম— সর্বত্র চলে বিবিধ পরী‌ক্ষা-নিরীক্ষা, ১০টা কেমোথেরাপি। তবে এত কিছুর মধ্যেও কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতিতে ছেদ পড়তে দেয়নি সে। বরং, বাড়িতে বসেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে।

বাগুইআটির কলেজ মোড়ের বাসিন্দা অনীশ বাঙুরের নারায়ণ দাস বাঙুর মেমোরিয়াল হাইস্কুলের ছাত্র ছিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলছেন, ‘‘ওর পাশে আমরা সব সময়ে ছিলাম। এমনকি অনীশ প্রি-টেস্ট দিতে চেয়েছিল বলে বাড়িতে বসেই যাতে পরীক্ষা দিতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করেছিলাম। প্রি-টেস্টে ভালই ফল করেছিল অনীশ।’’ তবে শেষরক্ষা হয়নি। শেষের দিকে কেমো নিলেই রক্ত কমে যাচ্ছিল তার। ‘‘ক্যানসারের মতো অসুখের সঙ্গে যেন আর লড়তে পারছিল না ও’’— বলছেন টিনা।

অনীশেরা দুই ভাই। বড় ভাই আকাশ কলেজপড়ুয়া। সংসার চলে মূলত টিনার শাশুড়ির পেনশনের টাকায়। টিনা বলেন, ‘‘ছোট ছেলের স্বপ্ন ছিল নিজের মোবাইলের। করোনার সময়ে আমার ফোন দিয়েই পড়াশোনা চালিয়েছে। প্রায়ই বলত, টাকাটা ঢুকলেই দু’-এক দিনের মধ্যে স্মার্টফোন কিনবে। কিন্তু যখন সেই টাকা এল, তখন ও-ই আর পৃথিবীতে নেই।’’ কান্নায় গলা বুজে আসে সদ্য সন্তানহারা মায়ের।

অনীশের অ্যাকাউন্টে আসা ট্যাব কেনার এই টাকা কি সে ক্ষেত্রে ফেরত চলে যাবে শিক্ষা দফতরে? সঞ্জয় বলেন, ‘‘বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলে টাকাটার কী হবে, সেটা জানব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer Student Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy