যাদবপুর কাণ্ডে গ্রেফতার বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরী। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে তাঁর ‘ডাক নাম’ ছিল ‘মহাপাকা’! কারণ হস্টেল আঁকড়ে পড়ে থাকা এই প্রাক্তনী নাকি সবেতেই মাথা গলাতেন। গত ৯ অগস্ট রাতেও সেই নিয়ম বদলায়নি। মেন হস্টেলের এ২ ব্লকের তিনতলার বারান্দা থেকে আছড়ে পড়া ছাত্রকে যখন হাসপাতালে পাঠানোর তোড়জোড় চলছে, তখন ডি ব্লকের নীচে বিশেষ বৈঠক বক্তৃতা করছিলেন সেই প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরী। যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় যাঁকে প্রথমেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। হস্টেলের এক ছাত্রের বয়ানে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি হস্টেলের বারান্দা থেকে ছাত্রের পড়ে যাওয়ার পর বৈঠক ডেকেছিলেন সৌরভই? দুর্ঘটনা নিয়ে হস্টেলের সমস্ত পড়ুয়ার বয়ান যাতে এক হয়, সে জন্যই কি ডাকা হয়েছিল ওই বৈঠক?
হস্টেলেরই এক আবাসিক পুলিশকে জানিয়েছেন, সে দিন সেই ‘মহাপাকা’ সৌরভই তাঁদের জানিয়েছিলেন, প্রথম বর্ষের ওই ছাত্র হঠাৎ তিন তলা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন কী ভাবে। বৈঠকে সৌরভ বলেছিলেন, ‘‘ছেলেটি আগে থেকেই কোনও কারণে উত্তেজিত ছিল। এবং ‘আমি সমকামী নই’ বলে চিৎকার করতে করতে হস্টেলের নানা জায়গায় উত্তেজিত ভাবে ছোটাছুটি করছিল সে।’’ পুলিশের কাছে এমনই দাবি করেছেন মেন হস্টেলের এ২ ব্লকের ওই আবাসিক। ছাত্রটি জানিয়েছেন, সৌরভের ওই দাবিকে সে দিন বৈঠকে কিছুটা সমর্থনও করেছিলেন অর্থনীতির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দীপশেখর দত্ত। পুলিশ তাঁকেও ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে।
পুলিশকে দেওয়া বয়ানে হস্টেলের ওই আবাসিক জানিয়েছেন, তাঁর ঘর ছিল হস্টেলের চার তলায়। মৃত ছাত্রের ঘরের উপরের তলাতেই। তবে তিনি সিনিয়র হলেও তাঁর ঘরে সেদিন ইন্ট্রো দিতে আসেননি যাদবপুরের বাংলা বিভাগের ওই প্রথম বর্ষের ছাত্র। পুলিশকে ওই ছাত্র জানিয়েছেন, তিনি যখন প্রথমবর্ষে ছিলেন, তখন তাঁকেও প্রতি ঘরে গিয়ে ইন্ট্রো দিতে হয়েছিল। কিন্তু গত ৯ অগস্ট তিনি নিজের ঘরে পড়াশোনা করছিলেন বলে, কাউকে ঢোকার অনুমতি দেননি। তবে ১২টা নাগাদ যখন হস্টেলের সব ছাত্রদের নিয়ে বৈঠক হয়, তখন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ওই ছাত্র জানিয়েছেন, বৈঠকে সৌরভ তাঁদের বলেছিলেন, ছাত্রটির সঙ্গে আগেই কেউ খারাপ আচরণ করেছিল। যার জন্য সে দিন সে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। সৌরভের এই দাবিকে সমর্থন করে বৈঠকে দীপশেখরও বলেন, প্রথমবর্ষের ওই ছাত্রটির সঙ্গে কে, কী আচরণ করেছিল, তা ছাত্রটি তাঁদের জানিয়েছিলেন। তাঁর কথাতেই একটি চিঠিতে সে সব কথা লিখে দেন দীপশেখর। যদিও একই সঙ্গে ওই বৈঠকে দীপশেখর জানিয়েছিলেন, তিনি চিঠি লিখে দিলেও চিঠিতে সই করেননি।
৯ অগস্ট ওই বৈঠক অবশ্য এর পর কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়। কারণ বৈঠকটি ডি ব্লকের নীচে ফাঁকা জায়গায় হচ্ছিল। বৃষ্টি নামায় সবাই ভিতরে চলে যান। এর পর মূলতবি হওয়া বৈঠক আরও এক বার বসে। তার পরে ওই রাতে আরও এক বার বৈঠক ডাকা হয়। তবে এ বার আলোচনার বিষয় ছিল হস্টেল সুপারের ফোন। পুলিশকে দেওয়া বয়ানে হস্টেলের চার তলার ওই আবাসিক জানিয়েছেন, এই ঘটনার পর ফোন করে হস্টেল সুপার কিছু নির্দেশ দিয়েছিলেন। যা মেনে চলারই সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
উল্লেখ্য, গত ৯ অগস্ট রাত পৌনে বারোটা নাগাদ যাদবপুরের মেন হস্টেলের নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় যাদবপুরের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে। নদিয়ার বাসিন্দা ওই ছাত্র তার কিছুদিন আগে থেকেই হস্টেলের এক ছাত্রের ঘরে ‘অতিথি’ হিসাবে থাকতে শুরু করেছিলেন। ছাত্রের মৃত্যুর পর তাঁর বাবা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, হস্টেলের ছাত্রের ঘরে যে অতিথি হয়ে থাকা যায়, সে কথাও তাঁকে জানিয়েওছিলেন ওই প্রাক্তনী সৌরভই। তাঁর কথা শুনেই তাঁরই ব্যবস্থাপনায় হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘরে ছেলের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন মৃত ছাত্রের বাবা।
অর্থাৎ যে ছাত্রকে হস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন সৌরভ। সেই ছাত্রই হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে যাওয়ার পর বৈঠকে ঘটনার বিবরণও দিয়েছিলেন তিনিই। পুলিশকে দেওয়া হস্টেল পড়ুয়ার বক্তব্য অনুযায়ী, হস্টেলে কী হয়েছে থেকে শুরু করে, এর পরে কী করণীয়? এই সব কিছু নিয়ে ওই জরুরি বৈঠকে আলোচনা করেছিলেন সৌরভ। তদন্ত শুরু হতে প্রথম গ্রেফতার হন তিনিই। ফলে প্রশ্ন উঠছে, গোড়া থেকেই কি ঘটনাটি সাজিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন এই সৌরভ?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy