ভুল ও নিয়মের জোড়া জাঁতাকলে পড়ে ছ’দিনের সেই সদ্যোজাতের ঠাঁই হল একটি হোমে। প্রতীকী ছবি।
নার্সিংহোমের ভুলে বাড়ির পরিবর্তে সদ্যোজাতের ঠাঁই হল সরকারি হোমে। পুত্রসন্তানকে নার্সিংহোম ভুল করে লিখেছিল, কন্যাসন্তান। পরে সেই ভুল সংশোধন করলেও, সরকারি নিয়ম দেখিয়ে সদ্যোজাতকে পরিজনদের হাতে তুলে দিতে রাজি হয়নি শহরের এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ফলে, ভুল ও নিয়মের জোড়া জাঁতাকলে পড়ে ছ’দিনের সেই সদ্যোজাতের ঠাঁই হল একটি হোমে!
সোমবার এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে ওই সদ্যোজাতকে শিশুকল্যাণ কমিটির কলকাতা শাখার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদেরই হোমে রাখা হয়েছে ওই শিশুটিকে। আজ, বুধবার বিষয়টির নিষ্পত্তি করে তাকে পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে বলে খবর। শিশুকল্যাণ কমিটির কলকাতা শাখার চেয়ারপার্সন মহুয়া শূররায় বলেন, ‘‘সদ্যোজাতের বাবা ও সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের সকলে এসেছিলেন। প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিয়েছেন। পুলিশের রিপোর্টও পেয়েছি। শিশুটির বাবা ও মামার বাড়িতে আমাদের প্রতিনিধিরা যাবেন। ওই রিপোর্ট আসার পরেই মা-বাবার হাতে সদ্যোজাতকে তুলে দেওয়া হবে।’’
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বারুইপুরের একটি নার্সিংহোমে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন কুলপির পদ্মপুকুরের বাসিন্দা রুমা হালদার। জন্মের পরেই সদ্যোজাতের মারাত্মক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন তাকে স্থানান্তরিত করা হয় এন আর এস হাসপাতালে। ৯ তারিখ গভীর রাতে শিশুটিকে নিয়ে আসেন রুমার এক বোন এবং অন্যেরা। তাকে সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে (এসএনসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেই সময়েই দেখা দেয় গোলমাল। এন আর এস সূত্রের খবর, সদ্যোজাতকে ভর্তি করার সময়ে বারুইপুরের নার্সিংহোমের দেওয়া যে ‘রেফার’ কাগজ জমা দেওয়া হয়েছিল, তাতে ‘কন্যা’ লেখা ছিল। কিন্তু হাসপাতালে আসা সদ্যোজাত আদতে ‘ছেলে’ হওয়ায় গোটা বিষয়টিতে সংশয় তৈরি হয়। তখন ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ বলে ভর্তি করা হয় ওই সদ্যোজাতকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, যে দু’জন শিশুটিকে ভর্তি করাতে এসেছিলেন, তাঁরাও নিজেদের পরিচয় ঠিক মতো জানাতে বা দেখাতে পারেননি। এ দিকে, ঘটনার সময়ে বারুইপুরের নার্সিংহোমেই ভর্তি ছিলেন রুমা।
সমাধানসূত্র বার করতে রাতেই এন আর এস হাসপাতালের তরফে ফোন করা হয় বারুইপুরের ওই নার্সিংহোমে। তখনই ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন মারাত্মক ভুলের বিষয়টি। তাঁদের দাবি, পরের দিনই, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি ভুল সংশোধন করে এন আর এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন তাঁরা। ওই সদ্যোজাতের বাবা স্বপন হালদার কর্মসূত্রে পুণেতে থাকেন। তিনিও ঘটনার কথা শুনে কলকাতায় ফিরে এন আর এসে গিয়ে নিজের পরিচয় দেন। পুলিশের কাছেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা করেন বলে তাঁর দাবি। কিন্তু সে সব কিছুই মানতে চাননি এন আর এস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বারুইপুরের ওই নার্সিংহোমের এক কর্তা সুদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের চিকিৎসকের তরফে মারাত্মক ভুল হয়েছিল, সেটা মানছি। কিন্তু বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিজেরা এন আর এসে গিয়ে সব কাগজ জমা দিই। পুলিশের কাছেও অজ্ঞাতপরিচয় বলে যে নথি ছিল, তাতে পরিবর্তন করিয়ে ‘বেবি অব রুমা হালদার’ করানো হয়। তার পরেও এন আর এস কর্তৃপক্ষ পরিজনের হাতে বাচ্চাকে দিতে রাজি হননি।’’
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাল্টা দাবি, যে দু’জন ওই সদ্যোজাতকে ৯ ফেব্রুয়ারি রাত দুটো নাগাদ ভর্তি করাতে এসেছিলেন, তাঁরা নিজেদের পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি। বাচ্চার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কও প্রমাণ করতে পারেননি। সেই কারণেই ওই শিশুটিকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসাবে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করতে হয়েছিল। কিন্তু নার্সিংহোমের তরফে ভুল সংশোধন করার পরেও সদ্যোজাতকে বাবা-মায়ের হাতে দেওয়া হল না কেন? এন আর এসের সুপার ইন্দিরা দে বলেন, ‘‘ওঁরা কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু বিষয়টি যে হেতু বিতর্কিত, তাই আমরা ঝুঁকি নিইনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম মেনে সদ্যোজাতকে সিডব্লিউসি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারাই সব যাচাই করে তাকে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy