E-Paper

পুরসভার ‘অস্তিত্বহীন’ স্কুলে শৌচালয় সংস্কারে গরমিল ৩৮ লক্ষ টাকা! রিপোর্ট তলব কর্তৃপক্ষের

পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিভিন্ন পুর বিদ্যালয়ে ৬৩টি শৌচালয় সংস্কার বাবদ প্রতিটির জন্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছিল।

An image of a toilet of a school

শোচনীয়: সন্তোষ মিত্র স্কো‌য়ারের কাছে পুরসভার একটি স্কুলে শৌচাগারের অবস্থা এমনই।  ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ০৫:১৩
Share
Save

চেতলার ২২, সব্জিবাগান রোডের ঠিকানা থেকে পুরসভা পরিচালিত স্কুল অন্যত্র সরে গিয়েছে সেই ২০১১-’১২ সালে। অথচ, পুরনো ঠিকানায় ‘অস্তিত্বহীন’ সেই স্কুলেই দু’টি শৌচালয়ের সংস্কার হয়েছে বলে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচের হিসাব দেখিয়েছে পুরসভার শিক্ষা বিভাগ! কোনও স্কুলে একটি শৌচালয় সংস্কার করে খাতায়কলমে দু’টির হিসাব দেখানো হয়েছে। কোথাও আবার স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও দু’টি শৌচালয় সংস্কারের বিল ধরানো হয়েছে। কলকাতা পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির শৌচালয় সংস্কার বাবদ সর্বশিক্ষা মিশন থেকে নেওয়া প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকার গরমিলের অভিযোগ পেয়েছে পুরসভারই ভিজিল্যান্স বিভাগ। ইতিমধ্যেই ওই বিভাগ দু’বার এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে পুর শিক্ষা বিভাগের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে।

পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিভিন্ন পুর বিদ্যালয়ে ৬৩টি শৌচালয় সংস্কার বাবদ প্রতিটির জন্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছিল। নিয়মমতো, এর জন্য টাকা স্কুলের উন্নয়ন কমিটির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকার কথা। স্কুলে শৌচালয় সংস্কারের কাজে নজরদারি চালানোর কথা ছিল সেই কমিটির। কিন্তু অভিযোগ, নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রতিটি শৌচালয় সংস্কার বাবদ ঠিকাদারদের সরাসরি প্রায় ৬০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এমনকি, একাধিক ঠিকাদারকে সুবিধা পাইয়ে দিতে কারও নামে ১৩টি, কারও নামে ৯টি, কারও নামে ৪টি শৌচালয় সংস্কারের বিল দেখানো হয়েছে।

পুরসভা সূত্রের খবর, খাতায়কলমে বিদ্যালয়ের প্রতিটি শৌচালয় সংস্কার বাবদ মোটা টাকার বিল দেখানো হলেও আদৌ সেগুলি সংস্কার করা হয়নি। কোনও স্কুলে শৌচালয়ে একটি দরজা পাল্টানো হলেও বিলে দু’টির হিসাব দেওয়া হয়েছে। পুরসভার অধিকাংশ স্কুলে প্রাতঃ ও দিবা বিভাগ চলে। অভিযোগ, হিসাবের খাতায় একই স্কুলের একাধিক শৌচালয় সংস্কারের কথা দেখানো হলেও আদতে তা হয়নি। যেমন, বৌবাজার এলাকায় ১৬, যদুনাথ দে রোডের ঠিকানায় প্রাত: ও দিবা বিভাগে পঠনপাঠন চলে। ওই রাস্তার অদূরে থাকা শ্রীনাথ দাস লেনের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই স্কুলের পড়ুয়ারাও যদুনাথ দে রোডের ঠিকানায় প্রাতঃবিভাগে আসে। অভিযোগ, বাস্তবে শ্রীনাথ দাস লেনের ঠিকানায় কোনও স্কুল না চললেও সেখানে শৌচালয় সংস্কার করা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। আবার যদুনাথ দে রোডের ঠিকানায় দোতলা স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে শৌচালয়ের সংখ্যা দু’টি। কিন্তু সেগুলির কোনও রকম সংস্কার হয়নি। পুর শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ওই স্কুলের একটি শৌচালয়ে টাইল্‌স বসানোর কাজ হয়েছিল। বাকি আর কোনও কাজ হয়নি। মুচিপাড়া সংলগ্ন ২৭/১, শশিভূষণ দে স্ট্রিটের ঠিকানায় পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলায় শৌচালয় সংস্কার করতে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা বিল দেখানো হয়েছে। অথচ বাস্তবে ওই ঠিকানায় গিয়ে চোখে পড়ল শৌচালয়ের ভগ্ন দশা। তার এমনই অবস্থা যে, দুর্গন্ধে টেকা দায়! ১৫, গোবিন্দ খটিক রোডে পুর বিদ্যালয়ের বাড়িটি বিপজ্জনক ঘোষিত হওয়ায় পুরসভা সেটি শীঘ্রই ভেঙে দেবে। ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেল, স্কুলবাড়িতে তালা ঝোলানো। ভিতরে স্তূপ করে রাখা আলুর বস্তা। অথচ, এই স্কুলেই শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে বলে বিল দেখানো হয়েছে।

ঘটনার সময়ে পুর শিক্ষা বিভাগের মেয়র পারিষদ পদে ছিলেন বর্তমান মেয়র পারিষদ (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘যা করার আধিকারিকেরা করেছেন। আমি শুধু সই করেছি।’’ ২০১২ সালের অগস্ট থেকে পুর শিক্ষা বিভাগের এডুকেশন অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন রুমানা খাতুন। তাঁকে ২০২১ সালের জুলাইয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বালিগঞ্জের পুর ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে বদলি করা হয়। এ প্রসঙ্গে রুমানার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তদানীন্তন চিফ ম্যানেজার (শিক্ষা) পরমেশ্বর সাহুও কথা বলতে চাননি। বর্তমান মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) সন্দীপন সাহা বলেন, ‘‘ভিজিল্যান্স হয়েছে শুনেছি। এগুলো সব আগে হয়েছে। ভিজিল্যান্স যা যা তথ্য চেয়েছে, তা দিতে শিক্ষা বিভাগের আধিকারিকদের পূর্ণ সহযোগিতা করতে বলেছি। কেউ ভুল করে থাকলে ভিজিল্যান্স যা পদক্ষেপ করার করবে। আমাদের পুর বোর্ড এমন কাজ সমর্থন করে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

poor condition Government Schools Financial Irregularities

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।