শুক্রবার গভীর রাতে এই জাগুয়ারটিই ধাক্কা দেয়। ইনসেটে গাড়ির চালক আরসালান পারভেজ। —নিজস্ব চিত্র।
রাতের কলকাতার সুনসান মোড়ে ধাবমান বড় গাড়ির পেটে আচমকাই ধাক্কা মেরেছিল আর একটি বড় গাড়ি। শুক্রবার গভীর রাতে লাউডন স্ট্রিটের মোড়ে তীব্র গতিতে আসা জাগুয়ার গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে যায় ছাইরঙা মার্সিডিজ় বেন্জ়। গাড়ির আরোহীরা বেঁচে গেলেও বৃষ্টির মধ্যে ফুটপাতের পুলিশ কিয়স্কের ছাউনিতে অপেক্ষমাণ দুই তরুণ-তরুণী মারা গিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, মৃত দু’জন বাংলাদেশের নাগরিক। নাম কাজী মহম্মদ মইনুল আলম (৩৬) ও ফারহানা ইসলাম তানিয়া (৩০)। এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়।
শুক্রবার রাতের দুর্ঘটনায় ধৃত জাগুয়ার গাড়ির চালক আরসালান পারভেজ কলকাতার একটি নামী বিরিয়ানি চেনের অন্যতম মালিকের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ (বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো), ৪২৭ (সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করা) এবং ৩০৪(২) (অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানো) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, বেকবাগানের বাসিন্দা ২২ বছর বয়সি আরসালান স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছুটিতে তিনি বাড়ি এসেছিলেন। ২০১৬ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া চলাকালীন অডি গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছিল বায়ুসেনার অফিসার অভিমন্যু গৌড়ের। এই দুর্ঘটনা সেই স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে। অভিমন্যুর মৃত্যুতে অভিযুক্ত ছিলেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর ছেলে সাম্বিয়া সোহরাব।
মৃত ফারহানা ইসলাম তানিয়া এবং কাজী মহম্মদ মইনুল আলম।
পুলিশের দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানা গিয়েছে, রাত ১টা ৫০ মিনিটে শেক্সপিয়র সরণি থানার উল্টো দিকে লাউডন স্ট্রিটের মোড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। জাগুয়ারটি তারামণ্ডলের দিক থেকে কলামন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। মার্সিডিজ়টি যাচ্ছিল পার্ক স্ট্রিট থেকে মিন্টো পার্কের দিকে। লাউডন স্ট্রিটের মোড়ে জাগুয়ারের চালক তীব্র গতিতে এসে মার্সিডিজ়ের পেটে ধাক্কা মারেন। মার্সিডিজ়টি ধাক্কা মারে মোড়ের পুলিশ কিয়স্কে। অঝোর বৃষ্টিতে কিয়স্কের ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলাদেশের তিন নাগরিক। মার্সিডিজ়টি তাঁদের মধ্যে দু’জনের ঘাড়ে গিয়ে পড়ে। সংঘর্ষের তীব্রতায় কংক্রিট স্তম্ভের উপরে থাকা কিয়স্কটিও উপড়ে যায়। বিকট শব্দ শুনে থানার এক কনস্টেবল ছুটে যান। তিনি জানান, তত ক্ষণে জাগুয়ারের চালক পালিয়েছেন। মার্সিডিজ়ের দুই জখম আরোহীকে উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন সূত্রের খবর, মইনুলের বাড়ি ঝিনাইদহে। তিনি বাংলাদেশের ‘গ্রামীণ ফোন’-এর কর্মী। তানিয়া বাংলাদেশের সিটি ব্যাঙ্কের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর বাড়ি ঢাকার মহম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের লালমাটিয়ায়। তাঁদের সঙ্গেই কিয়স্কের সামান্য দূরে দাঁড়িয়েছিলেন কাজী সফি রহমতউল্লা। মইনুল তাঁর তুতো ভাই। মইনুল ও রহমতউল্লার বন্ধু ছিলেন তানিয়া। দুর্ঘটনায় সামান্য চোট পান রহমতউল্লা। এসএসকেএম হাসপাতালের ডাক্তারেরা প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেন।
বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন সূত্রে খবর, ১৪ অগস্ট বেড়াতে ও চিকিৎসা করাতে কলকাতায় এসে মার্কুইস স্ট্রিটের একটি হোটেলে উঠেছিলেন মইনুলরা। রহমতউল্লা জানান, তাঁরা খেতে বেরিয়েছিলেন। হোটেলে ফেরার সময় জোরে বৃষ্টি নামায় কিয়স্কে আশ্রয় নেন। আজ, রবিবার তিন জনেরই বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিল।
হাইকমিশন সূত্র জানায়, দু’টি দেহ সড়কপথে বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy