পি কে জি মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।
জমির চরিত্র বদল হয়নি। পুর সংস্থার তরফে দেওয়া হয়নি ভবন ব্যবহারের ছাড়পত্র। তার আগেই মেডিক্যাল কলেজের বোর্ড বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বোর্ডও বসিয়ে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের বাইরে। নিউ টাউনের পি কে জি মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ও সেটির মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে তাই শুরু হয়েছে বিতর্ক। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হিডকো ও নিউ টাউনের পুর সংস্থা এনকেডিএ। এ দিকে ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ না হওয়ায় অভিযুক্ত হাসপাতালকে শনিবার শো-কজ় করেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
অভিযোগ, জমির চরিত্র বদল না করেই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার জমিতে ওই হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়েছে। এমনকি। একাধিক জমি জুড়ে ভবন তৈরি হলেও সেগুলির সংযুক্তি হয়নি। তার জেরে নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) তাদের ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করেনি।
তা সত্ত্বেও সেখানে বহির্বিভাগে রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ে রোগী দেখা চলছে বলে অভিযোগ। যে কারণে ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট লাইসেন্স পরীক্ষা করতে স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি পাঠাতে চায় এনকেডিএ। কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের জমির চরিত্র বদলের প্রয়োজন নেই। অনৈতিক ভাবে ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ হচ্ছে না।
নিউ টাউনের ডি এইচ ব্লকে রয়েছে ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হিডকো এবং নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) দুই দফতরেরই দাবি, ওই হাসপাতালটির কাগজপত্র নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এমনকি এনকেডিএ-র তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জমির চরিত্র বদলের পরে হিডকোর সবুজ সঙ্কেত না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ করা হবে না। যে কারণে বেসরকারি ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে পঞ্চাশ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ে রোগী দেখাও বেআইনি বলে জানাচ্ছে হিডকো এবং এনকেডিএ।
জানা গিয়েছে, প্রদীপকুমার ঘোষ নামে এক অনাবাসী ভারতীয় ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি তৈরি করেছেন। কিন্তু কলেজ তৈরি করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যার যে হাসপাতালের পরিকাঠামো থাকা দরকার, তা সেখানে নেই। এক দুপুরে সেখানে গিয়ে খোঁজ করে জানা গেল, হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ এখনও চালু হয়নি। তা সত্ত্বেও রোগী ভর্তির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠছে।
এনকেডিএ সূত্রের খবর, গত মার্চে ওই মেডিক্যাল কলেজের ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। পরে নবীকরণ হয়নি। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই মেডিক্যাল কলেজের জমি বিভিন্ন প্লটে বিভক্ত। যেগুলি জোড়া হয়নি। জমিটি আদতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবসার জন্য। সেখানে মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হয়েছে। তার জন্য জমির চরিত্র বদল করা হয়নি। এমনকি, ওই বাড়িটি ব্যবহারের ছাড়পত্র নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি কর্তৃপক্ষ। তা সত্ত্বেও তাঁরা সেখানে হাসপাতাল চালাচ্ছেন। আমরা হিডকোকে বিষয়টি জানিয়েছি। তাঁদের ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি দেওয়া হবে।’’ আধিকারিকেরা জানান, তথ্য প্রযুক্তি এবং মেডিক্যাল— দু’টি ব্যবসার চরিত্র আলাদা। দু’টি ব্যবসার নিয়মও আলাদা। জমির চরিত্র যত ক্ষণ না বদল করা হচ্ছে এবং হিডকো সবুজ সঙ্কেত দিচ্ছে, তত ক্ষণ ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ হবে না।
পি কে জি মেডিক্যালের কলেজের প্রধান চিকিৎসক প্রদীপকুমার ঘোষের দাবি, ‘‘আমরা তথ্য-প্রযুক্তি চালিত পরিষেবার আওতায় পড়ি। জমির চরিত্র বদলের কোনও প্রয়োজন নেই। অনৈতিক ভাবে ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ আটকে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের সবটাই সেবামূলক কাজ হয়।’’
স্বাস্থ্য ভবন জানাচ্ছে, জমি নিয়ে জটিলতার জেরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন মেডিক্যাল কলেজের ছাড়পত্র দেয়নি। ওই ছাড়পত্র পেলে সব নিয়ম পালন হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ দিকে ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ না হওয়ায় পি কে জি মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালকে শনিবার শো-কজ় করেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কেন ওই হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট লাইসেন্স বাতিল করা হবে না, কর্তৃপক্ষকে পাঁচ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
প্রদীপকুমার ঘোষের অবশ্য দাবি, তিনি শো কজ়ের চিঠি পাননি। প্রাক্তন এক আমলার অনুরোধে তিনি ওই হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ তৈরির প্রকল্প শুরু করেন। তাঁর ট্রেড লাইসেন্স আটকানো হলে, তিনি প্রকল্প বন্ধ করে দেবেন। তাঁদের প্রকল্পের কাজ চলছে বলেই ভবন ব্যবহারের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy