E-Paper

মুছে গিয়েছে স্মৃতি, কয়েদি নম্বরের সূত্রে ২০ বছর পরে বাড়ি ফিরবেন সুরেশ

হ্যাম রেডিয়ো সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশ সেন্ট্রাল জেল থেকে তিন বছর আগে ছাড়া পেয়েছিলেন সুরেশ। ভগিনীপতিকে খুনের অভিযোগে সুরেশ গ্রেফতার হন। কারাবাসের নির্দেশ হয়।

সুরেশ মুরাইয়া।

সুরেশ মুরাইয়া। —ফাইল চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩০
Share
Save

চটির উপরে লেখা ‘২৪’। রাস্তায় বসে থাকা, হিন্দিভাষী ভবঘুরের সেটাই ছিল একমাত্র পরিচয়। আবার একমাত্র সূত্রও বটে। শেষ পর্যন্ত সেই ২৪ সংখ্যার সূত্রেই তাঁর নিখোঁজ-রহস্যের সমাধান হল।

সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রমণ কাহিনিতে এক কয়েদি শুধুই বলতেন, ‘মা খু চিহাল ও পঞ্জম হস্তম’, অর্থাৎ তিনি ৪৫ নম্বরের কয়েদি। সারা জীবন তিনি ওই ৪৫ নম্বরেই আচ্ছন্ন ছিলেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার দাঁড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঠাকুরানিবেড়িয়ায় ক্যানিং-১ ব্লকের একটি গ্রামের রাস্তায় বসে থাকা সুরেশ মুরাইয়াও কেউ কিছু জানতে চাইলে চটির উপরে লেখা ২৪ নম্বরটি দেখাতেন। নাম কী, কোথায় বাড়ি, পরিবারে কারা রয়েছেন— কিছুই বলতে পারতেন না স্মৃতিভ্রংশতায় আক্রান্ত, জেলফেরত সুরেশ। গত তিন মাস ধরে ওই ২৪ নম্বর লেখা চটি সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় বসে ছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের সুরেশ। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় পঞ্চায়েত খবর দেয় পুলিশকে। হিন্দিভাষী সুরেশের বাড়ি খুঁজে পেতে পুলিশ যোগাযোগ করে হ্যাম রেডিয়োর সঙ্গে।

জেল থেকে দেওয়া সুরেশের সেই জুতো।

জেল থেকে দেওয়া সুরেশের সেই জুতো। —নিজস্ব চিত্র।

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস জানালেন, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী রেকাউল মণ্ডল তাঁর সঙ্গে সুরেশের কথা বলিয়ে দেন। অম্বরীশের কথায়, ‘‘ওই ব্যক্তির হিন্দি শুনে বুঝতে পারি, তিনি সম্ভবত মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা। সে কথা জিজ্ঞাসা করায় উনি সহমত হন। তবে, তার বেশি কিছু বলতে পারেননি। ওঁর ছবিতে দেখি, চটির উপরে ২৪ নম্বর লেখা। পুলিশের সূত্রে জানতে পারি, বন্দিদের চটির উপরে সাধারণত ওই ভাবে নম্বর লেখা থাকে। তার পরে খানিকটা আন্দাজে মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জেলে খোঁজ নিয়ে সুরেশের ইতিহাস জানতে পারি।’’

হ্যাম রেডিয়ো সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশ সেন্ট্রাল জেল থেকে তিন বছর আগে ছাড়া পেয়েছিলেন সুরেশ। ভগিনীপতিকে খুনের অভিযোগে সুরেশ গ্রেফতার হন। কারাবাসের নির্দেশ হয়। কিন্তু আর্থিক কারণে মামলা লড়ে তাঁর সাজা কমানোর চেষ্টায় অপারগ ছিল পরিবার। ২০ বছর পরে, ২০২১ সালে সুরেশ সাজা খেটে জেল থেকে বেরোন। জেলে তাঁর কয়েদি নম্বর ছিল ২৪। কুঠুরির নম্বরও ছিল ২৪। অম্বরীশ জানান, ডায়াবিটিসে আক্রান্ত সুরেশ যাতে খালি পায়ে রাস্তায় চলতে গিয়ে পায়ে আঘাত না পান, তার জন্য জেল থেকে ওই চটি জোড়া সুরেশকে দিয়ে
দেওয়া হয়।

হ্যাম রেডিয়োর তরফে মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুরে সুরেশের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অম্বরীশ জানান, জেলে কয়েদিদের আধার কার্ড তৈরির সময়ে সুরেশের সম্পর্কে ঠিকঠাক তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর ঠিকানা চিহ্নিত করতে সমস্যা হচ্ছিল। জেল কর্তৃপক্ষের কথা মতো কয়েকটি থানায় ছবি পাঠানোর পরে নরসিংহপুরের স্থানীয় এক দোকানদার সুরেশকে চিনতে পারেন। তার পরেই হ্যাম রেডিয়োর লোকজন সুরেশের মা কান্তিবাই মুরাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ছেলে যে পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছে গিয়েছেন, তা জেনে অবাক হন পরিবারের লোকজন। ছেলের খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কান্তিবাই। মায়ের ছবি দেখে চিনতে পেরে সুরেশও বাড়ি ফেরার জন্য উতলা হয়ে উঠেছেন। মধ্যপ্রদেশ থেকে সুরেশের আত্মীয়েরা তাঁকে ফিরিয়ে নিতে আসছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jail Inmates police custody police Ham Radio

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।