চিট্টু ওরফে মোহন কুশওয়াহা। —ফাইল চিত্র।
মিতভাষী তরুণ ঘাড় হেলিয়ে মিষ্টি হাসেন। হিন্দিতে অস্ফুটে বড়জোর দু’চার কথা বলেন। এটুকুই! নিজের ডাকনাম ‘চিট্টু’ ছাড়া কিছুই বলে উঠতে পারেননি। ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’-র আমতলার হোমের আবাসিক তরুণের বিষয়ে এটুকু সূত্র হাতে নিয়েই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরেরা।
২০১২ সালে শিয়ালদহ স্টেশনে ছেলেটির হদিস মিলেছিল। ২০১৩ সালে তাঁর নিখোঁজ রহস্যেই কিচ্ছু তথ্য মেলেনি বলে হাত তুলে নেয় কলকাতা পুলিশ। কলকাতার শিশু কল্যাণ সমিতি (সিডব্লিউসি)-কে তারা লিখিত ভাবে জানিয়েও দেয় সেটা। এত দিন বাদে হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের সূত্রেই নিজের হারানো ঘর, জীবনের মুছে যাওয়া অতীত খুঁজে পেতে চলেছেন ‘চিট্টু’!
হোমের সঙ্গে যুক্ত সন্ন্যাসিনীর অনুরোধে ছেলেটির পরিজনের খোঁজে নামেন হ্যাম রেডিয়োর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস। চিট্টুর সঙ্গে কথা বলে অম্বরীশের অভিজ্ঞ কানে ধরা পড়ে, ছেলেটির দেহাতি হিন্দিতে খানিকটা মধ্যপ্রদেশের টান। তিনি বলেন, “শিয়ালদহ থেকে সরাসরি মধ্যপ্রদেশে যাতায়াতের তেমন ট্রেন নেই। তাই বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশের হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের নেটওয়ার্কেও খবরটা পাঠাই। তবু মনে হচ্ছিল, মধ্যপ্রদেশ থেকেই ইতিবাচক সাড়া মিলবে।” কয়েক ঘণ্টাতেই তা-ই ঘটেছে বৃহস্পতিবার।
চিট্টুর ছবি দেখে চিনতে পারেন তাঁর পিঠোপিঠি বয়সের মামা রাজেশ কুমার। শুক্রবার সকালে চিট্টুর সঙ্গে তাঁর মা পার্বতী দেবীর ভিডিয়ো কলে কথাও হয়েছে। গত ১২ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক চিট্টুর এখন গোঁফ গজিয়েছে। তবু ছেলেকে মা চিনতে ভুল করেননি। পার্বতী দেবী ফোনে আনন্দবাজারকে ধরা গলায় বলেন, “হম পহচান গয়া, হমারি বালক হ্যায়!” মায়ের আদরের ‘বালক’ চিট্টুও মা ও মামাকে দেখে আপ্লুত। মুখে বিশেষ কথা না-সরলেও বাড়ি ফেরার কথা শুনলেই তাঁর কণ্ঠেও খুশির ছোঁয়া। চিট্টুর মা, বাবার ছবিও হোম কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছেছে। তাতেও চিট্টু এবং তাঁর বাবার মুখের মিল স্পষ্ট।
চিট্টুর ভাল নাম মোহন কুশওয়াহা। বাড়ি মধ্যপ্রদেশের হোসাঙ্গাবাদ জেলায় (অধুনা নর্মদাপুরম) কালমেশরা গ্রামে। থানা সোহাগপুর। মা পার্বতী দেবী, বাবা দরিয়াভ সিংহ কুশওয়াহা ও দাদা রূপেশ প্রধানত মজুরের কাজ করেন। পার্বতী বলছিলেন, “চিট্টু বরাবরই সাদাসিধা। স্কুল ওর ভাল লাগত না। ২০১২ সালে গ্রামের এক ছেলে সূর্যকুমার ভুলভাল বুঝিয়ে ছেলেটাকে নিয়ে যায়।” সূর্যকুমারের সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের কাটনিতে চিট্টু গিয়েছিল বলে জানতে পারে স্থানীয় পুলিশ। আর কিছু জানা যায়নি। চিট্টুর আধার কার্ড, সোহাগপুর থানার নিখোঁজ ডায়েরি এবং স্থানীয় থানার কাছ থেকে পাওয়া প্রমাণপত্রসুদ্ধ এখন দ্রুত কলকাতায় আসার তোড়জোড় করছেন চিট্টুর পরিজন।
অম্বরীশের কথায়, “হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের মধ্যে যোগাযোগেই এত দ্রুত মধ্যপ্রদেশের অজ গাঁয়ে ছেলেটির বাড়ির খোঁজ মিলল। ছেলেকে ফিরে পেতে চিট্টুর বাড়ির লোকের আন্তরিক উৎসাহেও কাজটা সহজ হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy