Advertisement
০১ জুলাই ২০২৪
Kanchanjunga Express Accident

এ বার অন্তত নজর পড়ুক রেল-সুরক্ষায়, না হলে ভরসা ভগবানই

কামরার অবস্থা তখন ভয়াবহ। সহযাত্রীরা আতঙ্কে চিৎকার জুড়েছেন। বাচ্চারা ভয়ে কাঁদছে। ছিটকে পড়ে অনেকেরই আঘাত লেগেছে। পায়ের চোট উপেক্ষা করে অনেকের সঙ্গে লাফিয়ে নামলাম ট্রেন থেকে।

শিয়ালদহে রওনা হওয়ার পরে মেডিক্যাল দল মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথের ডান পায়ের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে।

শিয়ালদহে রওনা হওয়ার পরে মেডিক্যাল দল মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথের ডান পায়ের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।

মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথ (কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের আহত যাত্রী)
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ০৭:২৩
Share: Save:

গতকাল সত্যিই যেন মৃত্যুকে জয় করলাম।

তখন সকাল পৌনে ৯টা। ছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের এস-২ বগিতে। ট্রেনটা তখন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন ছাড়িয়েছে। মিডল বার্থে শুয়ে ভাবছিলাম নেমে ব্রাশ করব, চা খাব। আচমকা ট্রেনে প্রবল ধাক্কা, সঙ্গে বিকট আওয়াজ। কিছু বোঝার আগেই আরও দু’টি ধাক্কা। প্রবল ঝাঁকুনিতে মিডল বার্থ থেকে ছিটকে পড়লাম। ঝিমঝিম করে উঠল গোটা শরীর। ডান পায়ের হাঁটুর নীচে প্রবল জ্বালা করছিল। দেখলাম, অনেকটা কেটে গিয়েছে। দু’হাতে, কাঁধে অসহ্য যন্ত্রণা।

কামরার অবস্থা তখন ভয়াবহ। সহযাত্রীরা আতঙ্কে চিৎকার জুড়েছেন। বাচ্চারা ভয়ে কাঁদছে। ছিটকে পড়ে অনেকেরই আঘাত লেগেছে। পায়ের চোট উপেক্ষা করে অনেকের সঙ্গে লাফিয়ে নামলাম ট্রেন থেকে। তার পরে যা দেখলাম, সেটাকেই বোধহয় নরক বলে! দেখি, আমাদের এস-২ বগির পাঁচ-ছ’টি বগি পরের তিনটি বগি মালগাড়ির ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। যেন খেলনা রেলগাড়ি! একটি কামরা উঠে পড়েছে আর একটি কামরার উপরে। মনে হচ্ছে যেন শূন্যে ভাসছে। দলা পাকানো কামরাগুলিতে আটকে রয়েছেন অনেকে। একটি কামরার জানলায় দেখলাম, এক রক্তাক্ত যুবকের মুখ। জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে সাহায্য চাইছেন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালগাড়ির ইঞ্জিনটা ভিতরে ঢুকে গিয়েছে। সেখানে আটকে মালগাড়ির চালক।

ভাবলে এখনও শিউরে উঠছি। আমি যে বেঁচে ফিরেছি, এটাই অনেক।

আমার বাড়ি ত্রিপুরার আগরতলায়। পাথরের ব্যবসা রয়েছে। ছোট ভাই কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে চাকরি করে, বাবা-মা সেখানে গিয়েছেন। কলকাতা হয়ে বাবাকে আনতে কেরলে যাওয়ার কথা আমার। তাই আগরতলা থেকে এই ট্রেনে উঠি। দুর্ঘটনার পরে মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকায় বাড়িতে খবর দিতে পারিনি। পরে জানতে পারি, দুর্ঘটনার খবরে বাড়ির লোকেরা উদ্বেগে ছিলেন। স্থানীয়েরাই প্রথমে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। কয়েক জন জখম যাত্রীকে উদ্ধারও করেন তাঁরা। উদ্ধারকারী দল পৌঁছয় প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস শিয়ালদহে ফের রওনা হওয়ার পরে মেডিক্যাল দল ডান পায়ের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে দেয়। শিয়ালদহে পৌঁছলে মেডিক্যাল দলের সদস্যেরা আমার ক্ষতস্থানের চিকিৎসা করেন। সরকারের ব্যবস্থা করা বাসে করে চেতলার গৌড়ীয় মঠে এসে উঠেছি। মঙ্গলবার রাতে তিরুঅনন্তপুরম যেতে শালিমার থেকে শালিমার এক্সপ্রেসে উঠব। আতঙ্ক নিয়েই ট্রেনে চাপব। রেলকর্তাদের কাছে অনুরোধ, এ বার অন্তত সুরক্ষায় নজর পড়ুক। না-হলে ট্রেনে ওঠার পরে ভগবানই ভরসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE