রবীন্দ্র সরোবরে খোঁজ মিলল ক্ষতিকারক কচ্ছপের। — নিজস্ব চিত্র।
তারা আদতে মেক্সিকো এবং আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বাংশের বাসিন্দা। কিন্তু রংচঙে চেহারা আর যে কোনও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার কারণে পোষ্য হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব জুড়ে। কিন্তু ‘রেড ইয়ারড স্লাইডার’ নামে এই কচ্ছপ মুক্ত পরিবেশে ‘অতি ক্ষতিকারক প্রজাতি’ হিসেবে চিহ্নিত। এ বার ওই প্রজাতির এক জোড়া কচ্ছপের দেখা মিলেছে কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরে। ফলে শঙ্কায় পরিবেশপ্রেমী এবং বন্যপ্রাণ বিশারদেরা।
প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠন ‘বায়োডাইভার্সিটি অফ রবীন্দ্র সরোবর’-এর সুদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘রবিবার সরোবরের একটি দ্বীপের সামনে পড়ে থাকা মরা গাছের কাণ্ডের উপর দু’টি ‘রেড ইয়ারড স্লাইডার’কে রোদ পোহাতে (বাস্কিং) দেখা গিয়েছে। সংগঠনের সদস্য তীর্থঙ্কর রায়চৌধুরী তাদের ছবিও তুলেছেন।’’ ঘটনাচক্রে, ২০২০ সালের গোড়ায় রবীন্দ্র সরোবরে প্রথম এই ক্ষতিকারক প্রজাতির কচ্ছপকে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন তীর্থঙ্কর। রবীন্দ্র সরোবরে নিয়মিত পাখি-প্রজাপতি-পোকামাকড়ের ছবি তুলতে যাওয়া তীর্থঙ্কর বলেন, ‘‘আগেও কয়েক বার এই প্রজাতির একটি কচ্ছপকে সরোবরের দ্বীপে রোদ পোহাতে দেখেছি। এ বার এক সঙ্গে দু’টিকে পেলাম।’’
জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জেডএসআই)-এর সরীসৃপ বিজ্ঞানী কৌশিক দেউটি বলেন, ‘‘স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে এই বহিরাগত কচ্ছপ প্রজাতিটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এরা অস্বাভাবিক দ্রুত হারে জলাশয়ের মাছ, পোকামাকড়, শামুক, কেঁচো খেয়ে ফেলে। ফলে বর্জ্য পদার্থ সহজে জলাশয়ের মাটিতে মিশতে পারে না। জলজ বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা ছাড়া এই কচ্ছপ সরীসৃপ প্রাণীদের প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টিকারী সালমোনেল্লা ব্যাকটেরিয়ার বাহক।’’
পশ্চিমবঙ্গে ২০১৫ সালে রাজারহাটের জলাভূমিতে প্রথম এই বহিরাগত কচ্ছপের সন্ধান পেয়েছিলেন সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চৌধুরী এবং তাঁর সঙ্গী অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। অনির্বাণ বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদের বাণিজ্য সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘সাইটস’-এর নিষিদ্ধ প্রজাতিগুলির তালিকায় ‘রেড ইয়ারড স্লাইডার’ নেই। ফলে আইন মেনে ভারতে পোষার উদ্দেশ্যে এই কচ্ছপ আমদানি করা যেতে পারে। তবে প্রস্তাবিত নতুন বন্যপ্রাণ আইনে বহিরাগত কোনও প্রজাতিকে ‘ক্ষতিকারক’ বলে চিহ্নিত করে আমদানি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি রয়েছে।’’
তিনি জানান, বহিরাগত ওই ক্ষতিকারক প্রজাতিটিকে অনেকেই ছোট অবস্থায় অ্যাকোয়ারিয়ামে পোষেন। কিন্তু বড় হয়ে গেলে জলাশয়ে ছেড়ে দেন। যদিও জীববৈচিত্র আইন অনুযায়ী বহিরাগত কোনও প্রজাতিকে মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া যায় না। অনির্বাণ জানান, ওই কচ্ছপ দু’টি যদি পুরুষ এবং স্ত্রী হয় এবং ভবিষ্যতে বংশবৃদ্ধি করতে পারে তবে জাতীয় সরোবরের বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের চালতাবেড়িয়ায় সুন্দরবন জীব পরিমণ্ডল (বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ) এলাকা থেকে একটি ‘রেড ইয়ারড স্লাইডার’কে উদ্ধার করা হয়েছিল। এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) মিলন মণ্ডল বলেন, ‘‘এই প্রজাতির কচ্ছপ জলাশয়ে মাছ, ভারতীর কচ্ছপ এবং অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষতি করে। তাই সেগুলি মুক্ত পরিবেশে ছাড়া ঠিক নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy