—প্রতীকী ছবি।
বিজয়ায় ছোঁয়াচবিহীন কোলাকুলি বা দূর থেকে প্রণাম পর্যন্ত ভাবা গিয়েছিল। সে না-হয় ছোঁয়াছুঁয়ির একটা বাতিক মিশেই আছে এ দেশের প্রাচীন পরম্পরায়। তা বলে দূর থেকে স্পর্শ এড়িয়ে ভাইফোঁটা হবেটা কী করে?
এত দিন দূর বিদেশে ভিন্ন টাইম জ়োনের ফারাক বাঁচিয়ে যা করা চলত, এ বার তা কলকাতা শহরের অন্দরেই যুগধর্ম হয়ে উঠছে। এত দিন গুরুগম্ভীর ওয়েবিনারে মস্ত বইয়ের তাক সাজিয়ে পরিপাটি করে যা হয়েছে, এ বার ফোঁটা নিতেও প্রায় তেমনই আয়োজন। স্মার্টফোনের স্ক্রিনে ভাইয়ের মুখের সামনে ধানদুব্বোর ডালা থেকে মিষ্টির থালা, সবই তুলে ধরা হচ্ছে। যা দেখে ভাইয়ের চোখ চকচকিয়ে ওঠে আর কী! ফোঁটাটা সারা হচ্ছে আন্দাজমতো, ফোনের স্ক্রিনে কপালটায় আঙুল ঠেকিয়ে। তা বলে মিষ্টি বা নোনতাটা মিছিমিছি নয়। অ্যাপ মারফত খাবার ডেলিভারির যুগে এখন শহরের ভিতরে একটু দূরে খাবার পাঠাতেও অসুবিধা নেই। ঠিক খাওয়ার সময়েই নানা সুখাদ্যের সম্ভার জায়গা মতো পৌঁছে যাচ্ছে। খাবার সরবরাহের একটি সর্বভারতীয় অ্যাপের সূত্রে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, এই সোমবার গড়পড়তা সোমবারের তুলনায় খাবারের চাহিদায় এগিয়ে রয়েছে কলকাতা। ভাইফোঁটার খিদেয় কলকাতা দেশের প্রথম সারিতে। দূরত্বময় এই ভাইফোঁটায় রেস্তরাঁর ভিড়ও আগের থেকে অনেক কম। তবে নামী বিরিয়ানি চেন বা মিষ্টির দোকানে নানা বরাত যাচ্ছে।
ভবানীপুরের মিষ্টির দোকান, বোন বা ভাইদের উদ্দেশ্যে সাজানো ডালায় রকমারি মিষ্টি নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দিয়েছে।
এই যে একটি বার কাছাকাছি থেকেও ফোঁটায় ছেদ পড়ল, তাতেও প্রমাদ গুনছেন না শাস্ত্রজ্ঞেরা। ঠাকুরমশাই সুশান্ত ভট্টাচার্য যেমন কালীপুজোর কাজে কোচবিহার গিয়েছিলেন। দিদি পড়ে আছেন নবদ্বীপে। ফোনেই ভাইফোঁটা সেরেছেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘ভাইফোঁটা ব্যাপারটাই তো মঙ্গল কামনায়। ভাই-বোন কি কেউ কারও অমঙ্গল চাইবেন! তাই স্বাস্থ্য-বিধি মেনে সতর্কতায় একটি বছর ফোঁটায় বিরত হলেই বা কী!’’ পারস্পরিক বা সামাজিক দূরত্ব রাখা না-গেলেও ফোঁটা অবশ্য মাস্ক, পিপিই পরেও দেওয়া সম্ভব। কিন্তু মনে হতেই পারে মহাকাশযানে ভিন্-গ্রহীদের মধ্যে বৈঠক বসেছে। তা ছাড়া, চন্দনের গন্ধ ছাপিয়ে স্যানিটাইজ়ারের সুরভি প্রবলতর হলেও ২০২০-র ভাইফোঁটার স্মৃতি সহজে ভোলা যাবে না।
সিডনিতে বসা কৃষ্ণনগরের যুবক মাহফুজ় আলি ওরফে মালির ভাইফোঁটা নিয়ে কার্টুন অবশ্য নেট-রাজ্যে হাতে হাতে ঘুরছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মোষের পিঠে যমরাজের দুয়ার কাঁটায় কাঁটায় ছয়লাপ। সেই কাঁটা সাফ করতে বেচারি কাঁচুমাচু করোনাভাইরাসরাও নাজেহাল, গলদঘর্ম। জাত-ধর্মের বেড়া ভেঙে পাতানো ভাই-বোনেদের মনে ভাইফোঁটার এমনই মহিমা।
এমনিতে বাঙালিদের আট আনাই এখন দেশান্তরী। ঘরে ঘরে ভাই-বোনেদের মধ্যে দূরত্বের দেওয়াল। কেউ পড়ে বেঙ্গালুরু, তো কেউ বস্টনে। কোনও কোনও বোন কান্না গিলে, চুপচাপ ফ্ল্যাটের দেওয়ালে ফোঁটা দিয়েই ভালবাসাটুকু উজাড় করে দেন। এ বার কলকাতাতেও ঘরে ঘরে সেই ছবি। তবে পারিবারিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে উথলে উঠছে ভাইফোঁটার মধুর স্মৃতি। রকমারি অ্যাপে ভিডিয়ো কলে ফোঁটা তো থাকেই। আবার অনেক ভাই-বোনই বিচ্ছেদের ভাইফোঁটায় পারতপক্ষে ফোনে কথা বলেননি। কী দরকার! মনখারাপিয়া আমেজ ঝরে পড়ে, চোখে বেমক্কা জল এসে গলা বুজে গেলেই চিত্তির।
আগামী বছরের আশা বুকে বেঁধে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই কেটে গেল অতিমারি দিনের ভাইফোঁটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy