প্রতীকী ছবি।
নিজে চালাতে জানলে গাড়ি ভাড়ায় পাওয়া যায়— এমন একটি অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া নিয়ে তা বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শহরে। এমনকি, গাড়ির মালিকের নামে ভুয়ো আধার কার্ডও বানিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত গাড়িটি উদ্ধার হলেও দেখা যায়, যাঁর কাছে গাড়িটি বিক্রি করা হয়েছিল, তিনিও এক অর্থে প্রতারিত হয়েছেন। ‘মা অসুস্থ, দ্রুত টাকার প্রয়োজন’ বলে জানিয়ে তাঁকে বিক্রি করা হয়েছে চোরাই গাড়িটি। পুলিশ যদিও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। উদ্ধার হয়নি গাড়ি বিক্রির টাকাও।
পুলিশ সূত্রের খবর, মৌসুমী সান্যাল দাশগুপ্ত নামে এক অভিনেত্রীর দাবি, বর্তমানে প্রতিদিন শুটিংয়ে যাওয়ার প্রয়োজন না থাকায় ২০১৭ সালে কেনা সেডান গোত্রের গাড়িটি ভাড়া খাটাবেন বলে স্থির করেছিলেন তিনি। নিজে চালানোর জন্য গাড়ি ভাড়া নেওয়া যায়, এমন একটি অনলাইন গাড়ি ভাড়া দেওয়ার সংস্থা তাঁদের জানায়, সংস্থার অ্যাপে নথিভুক্ত করালে আগামী তিন মাস প্রতি ঘণ্টায় ৪০ টাকা করে দেওয়া হবে তাঁদের। গাড়ি ভাড়া না হলেও তাঁরা প্রতি ঘণ্টায় ওই ৪০ টাকা পাবেন। গাড়িতে একটি ট্র্যাকিং যন্ত্র লাগানোর কথাও বলা হয়, যা দিয়ে গাড়ির মালিক জানতে পারবেন, সেটি কোথায় ভাড়া খাটছে।
মৌসুমীদের অভিযোগ, ওই ট্র্যাকিং যন্ত্র লাগানোর পরে ১১ তারিখেই তাঁদের কাছে ছ’ঘণ্টার জন্য একটি ভাড়া আসে। কিন্তু দুই যুবক গাড়িটি নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই ট্র্যাকিং যন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এর পরে ভাড়া নেওয়ার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও গাড়ি আর ফেরেনি। মৌসুমীরা ওই অ্যাপ সংস্থায় ফোন করলে জানানো হয়, গোপনীয়তার স্বার্থে গ্রাহক চাইলে ট্র্যাকিং যন্ত্র বন্ধ করতে পারেন। চুক্তি অনুযায়ী, যে কোনও গ্রাহক সর্বাধিক ৬০ ঘণ্টা নিজের কাছে গাড়িটি রাখতে পারেন। তাই এর আগে কিছুই বলা সম্ভব নয়। এ ভাবে প্রায় দেড় দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরে গাড়িটি যাঁরা ভাড়ায় নিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মৌসুমীরা। অভিযোগ, তাঁরা জানান, জরুরি কাজে গাড়ি রেখে দেওয়া হয়েছে। পরের দিন দুপুরের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু তার আগেই মৌসুমীদের বাড়িতে কয়েক জন এসে গাড়ির আসল কাগজপত্র চান। তাঁদের দাবি, মৌসুমীর স্বামী অরিজিৎ সান্যাল তাঁদের কাছে গাড়িটি ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন এবং দু’লক্ষ টাকা নগদ নিয়ে গিয়েছেন। বাকি ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ির আসল কাগজপত্র নিয়ে যেতে এসেছেন তাঁরা!
এ কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে মৌসুমীদের। দ্রুত বাঁশদ্রোণী থানায় গেলে জানা যায়, গাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন রাহুল সিংহ রায় নামে এক যুবক। খড়দহে নিয়ে গিয়ে গাড়িটি তিনি মোহিত দেমলানিকে বিক্রি করে দেন। মোহিতবাবুর গাড়ির সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘গাড়িটি নিয়ে এসে এক যুবক নিজেকে অরিজিৎ সান্যাল বলে পরিচয় দেন। বলেন, কাজের সূত্রে কলকাতার বাইরে গিয়েছিলেন। তাঁর মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে খবর এসেছে। তাঁকে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দ্রুত টাকার প্রয়োজন, তাই গাড়ি বিক্রি করে দিতে চাইছেন। এখন দু’লক্ষ টাকা পেলেই হবে। পরের দিন যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডের কাছে এলে গাড়ির আসল কাগজপত্র দেওয়া হবে। তখন বাকি টাকা দিলেই হবে।’’ মোহিতবাবুর দাবি, সেই কথামতো যাদবপুরে গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ফোন করা হলেও ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। গাড়ি বিক্রির সময়ে আধার কার্ডের যে প্রতিলিপি মোহিতবাবুকে দেওয়া হয়েছিল, তাতে মৌসুমীদের বাড়ির ঠিকানা লেখা ছিল। এ ভাবেই মৌসুমীদের বাড়ি অবধি পৌঁছন তাঁরা।
তদন্তে নেমে পুলিশ যোগাযোগ করে ওই গাড়ি ভাড়া দেওয়া সংস্থার সঙ্গে। গাড়ি ভাড়া নিলে ওই সংস্থায় গ্রাহককে নিজস্ব ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি-সহ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে হয়। কিন্তু পুলিশ দেখে, সেই ড্রাইভিং লাইসেন্সে দেওয়া ঠিকানার কোনও অস্তিত্ব নেই। অস্তিত্ব নেই ওই যুবকের আধার কার্ড নম্বরেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy