Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Camera

চালকের ‘ভুলে’ ট্যাক্সিতে ক্যামেরা, ফেরালেন মেয়ে

এ দিকে সেই ট্যাক্সিচালকেরই মেয়ে ফোনে যোগাযোগ করে হারানো সামগ্রী ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন অভিযোগকারী যুবকের হাতে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৮
Share: Save:

এক যুবকের প্রায় তিন লক্ষ টাকার ক্যামেরা, লেন্স এবং দেড় লক্ষ টাকার ল্যাপটপ ভরা ব্যাগ নিয়ে চলে যাওয়ার অভিযোগে এক ট্যাক্সিচালককে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। চষে ফেলা হচ্ছিল একাধিক ট্যাক্সিস্ট্যান্ড। খতিয়ে দেখা হচ্ছিল রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরার কয়েক হাজার ফুটেজ। এ দিকে সেই ট্যাক্সিচালকেরই মেয়ে ফোনে যোগাযোগ করে হারানো সামগ্রী ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন অভিযোগকারী যুবকের হাতে।

শনিবার এমনই ঘটনা ঘটেছে মানিকতলা থানা এলাকায়। এক তরুণীর এমন পদক্ষেপ দেখে তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন পুলিশকর্মী থেকে আশপাশের বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, অপরাধের ঘটনা শুনতে শুনতে যেখানে প্রায়ই হীনম্মন্যতা তৈরি হয়, সেখানে এমন পদক্ষেপ আশাব্যঞ্জক।

পুলিশ সূত্রের খবর, বছর আঠাশের অভিযোগকারীর নাম অনিকেত ভুঁইয়া। মেদিনীপুরের বাসিন্দা অনিকেত কলকাতায় থেকে অনুষ্ঠান বাড়িতে ছবি তোলার কাজ করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর কলকাতার তেলেঙ্গাবাগান এলাকায় একটি বিয়ে বাড়িতে কাজ সেরে রাত ১২টা নাগাদ সাদা ট্যাক্সি ধরেন। সঙ্গে একটি ব্যাগে ছিল বিয়ে
বাড়িতে ছবি তোলার তাঁর একটি দামী ক্যামেরা ও লেন্স। অন্য আর একটি ব্যাগে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার ল্যাপটপ। উল্টোডাঙা মোড়ে পৌঁছে ট্যাক্সি থেকে নেমে তিনি রাস্তার ধারের একটি পান-বিড়ির দোকানে যান। অভিযোগ, ফিরে তিনি দেখেন ট্যাক্সি উধাও।

সামনের সিগন্যাল পর্যন্ত ছোটাছুটি করেও না পেয়ে মানিকতলা থানায় যান অনিকেত। লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশকে গাড়ির সম্পূর্ণ নম্বর বলতে পারেননি তিনি। পুলিশ তাঁর থেকে স্রেফ দু’টি নম্বর জানতে পেরেছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ পান-বিড়ির দোকানের কাছের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে শুরু করে। যদিও ট্যাক্সিটিকে চিহ্নিত করা যায়নি। শুক্রবার দিনভর অনিকেতকে নিয়ে একাধিক ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে ঘুরেও খোঁজ মেলেনি ট্যাক্সিটির।

এর পরে শুক্রবার রাতেই অনিকেতের সঙ্গে একটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে যোগাযোগ করেন মনীষা যাদব নামে এক তরুণী। তিনি ওই ট্যাক্সিচালকের মেয়ে বলে নিজের পরিচয় দেন। জানা যায়, ওই ট্যাক্সিচালকের উল্টোডাঙা এলাকাতেই বাড়ি। তাঁর মেয়ে বছর একুশের মনীষা একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। শনিবার দুপুরে দেখা করে অনিকেতকে তাঁর হারানো ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে যান ওই তরুণী। অনিকেত এর পরে থানায় ব্যাগ ফিরে পাওয়ার কথা জানালে পুলিশ মনীষা ও তাঁর বাবাকে থানায় দেখা করতে বলে। শনিবার
পুলিশ হারানো ব্যাগ এবং তাতে থাকা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করে একটি সিজ়ার তালিকা ধরায় অনিকেতকে। আদালত থেকেই সেগুলিকে ছাড়িয়ে নিতে হবে বলেও জানায়।

রবিবার মনীষা বলেন, ‘‘ওই রাতে মায়ের হঠাৎ শরীর খারাপ করে। আমি কাজের সূত্রে বাইরে ছিলাম। আমার ছোট ভাই আর মা বাড়িতে ছিলেন। ভয় পেয়ে বাবাকে ফোন করে দ্রুত চলে আসতে বলেন মা। গাড়িতে যে ব্যাগ রেখেই ওই যুবক নেমে গিয়েছিলেন বাবা তা বুঝতে পারেননি।’’ ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে অবশ্য কথা বলা যায়নি। মনীষা জানান, সকালে গাড়ি ধোয়ার সময়ে তাঁর বাবা ব্যাগটি দেখতে পেয়ে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখেন। বেলায় ঘুম থেকে উঠে মনীষা ব্যাগটি দেখতে পান। তাঁর কথায়, ‘‘দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম, কোনও গোলমাল হয়েছে। ব্যাগটি যাঁর, তাঁর নাম পেলাম ব্যাগ থেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই নাম ধরে খুঁজে ওই যুবককে বার করলাম। ফোনে কথা বলে ব্যাগ পৌঁছে দিয়েছি। ব্যাগটা ওঁর হাতে তুলে দেওয়াই কর্তব্য মনে হয়েছিল। বাবার উচিত ছিল ওই যুবককে বলে ফিরে আসা। কিন্তু মায়ের অবস্থা শুনে বাবা আর অপেক্ষা করতে পারেননি।’’

অনিকেত বলেন, ‘‘ওই তরুণীকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ক্যামেরা ও ল্যাপটপই আমার রুটিরুজি। কিন্তু পুলিশ এখন ওগুলো আদালত থেকে ছাড়াতে হবে বলছে। করোনায় রোজগার বন্ধ ছিল। এখন কিছু কিছু বিয়েবাড়ি পাচ্ছি। এ দিকে আদালত থেকে ছাড়াতে গিয়ে সামনের কয়েকটা বিয়ে বাড়িতে কাজ করতে না পারলে খুব মুশকিলে পড়ব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Camera Taxi Drivers Lenses
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy