মর্মান্তিক: একটি যন্ত্রের এই অংশ ভেঙে পড়েই শুক্রবার মৃত্যু হয় প্রভাস মহলদার নামে এক শ্রমিকের। চিনার পার্কে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
একের পর এক শ্রমিকের মৃত্যুতেও হুঁশ ফিরছে না। অভিযোগ, নিরাপত্তার বন্দোবস্ত ছাড়াই শহর জুড়ে রমরমিয়ে চলছে নির্মাণ ব্যবসা। হুঁশ নেই পুলিশ-প্রশাসনেরও। কোনও ঘটনা ঘটলে শুধু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হচ্ছে থানায়। প্রোমোটার বা ঠিকাদারকে ডেকে পাঠিয়ে কড়া ধারায় মামলা রুজু করে ব্যবস্থা নেওয়ারও ব্যাপার থাকছে না। কলকাতা পুরসভা ‘কী ভাবে কাজ করতে হবে’ সংক্রান্ত বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করলেও শহরতলির অন্যান্য পুর প্রশাসনের সেই সচেতনতাটুকুও নেই বলে অভিযোগ। অনেকের আবার দাবি, কলকাতা পুরসভাও শুধু নির্দেশিকা জারি করেই দায় সারছে। আদৌ তা মানা হচ্ছে কি না, দেখছে কে?
বুধবারই যেমন হরিদেবপুরের একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের দশতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে পঙ্কজ সর্দার (২০) নামে এক তরুণের। বিধি মোতাবেক ওই শ্রমিকের যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল কি না, পুলিশ তা তো বলতে পারেইনি, উল্টে এমন কিছু যে ঘটেছে, সেই তথ্যও ছিল না থানার কাছে। তাঁকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ি থেকে খবর পায় হরিদেবপুর থানা। প্রায় দু’দিন পেরোতে চললেও ওই নির্মাণস্থলের দায়িত্বে থাকা প্রোমোটার বা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সে ভাবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
একই রকম অভিযোগ উঠেছে চিনার পার্কের ডিরোজ়িয়ো কলেজের কাছে একটি নির্মাণস্থলে। শুক্রবার সকালে সেখানে মৃত্যু হয় প্রভাস মহলদার নামে বছর পঞ্চাশের এক শ্রমিকের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিউ টাউন থানা এলাকার গৌরাঙ্গনগরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি বহুতলটির নীচে দাঁড়িয়ে নির্মাণ সামগ্রী উপরে তোলার একটি যন্ত্র চালাচ্ছিলেন। সাততলার কাছাকাছি থাকাকালীন ওই যন্ত্রে হঠাৎ গোলযোগ দেখা দেয়। তখনই সেটির একাংশ ভেঙে প্রভাসের মাথায় পড়ে। তিনি হেলমেট পরে ছিলেন না। দ্রুত ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা প্রভাসকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আপাতত নির্মাণকাজ বন্ধ। মাটিতে চাপ চাপ রক্ত। যন্ত্রের ভাঙা অংশ মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। সুরক্ষা ব্যবস্থা বলতে বহুতলটির চার দিকে শুধুমাত্র জাল লাগানো। পাশের বহুতলের নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘‘ওই জালেরও বেশ কিছু অংশ ছেঁড়া। সামান্য ইট খসে পড়লেও এই জাল ধরে রাখতে পারবে না। মানুষ পড়লে বাঁচানো তো দূর অস্ত্।’’
পুর প্রশাসনের নির্দেশ, যে কোনও নির্মাণস্থলে শ্রমিকদের অবশ্যই মাথায় হেলমেট পরতে হবে। বহুতলের বাইরের দিকে উঁচুতে কাজ করার জন্য কোমরে বেঁধে রাখতে হবে দড়ি। এ ছাড়া, চকচকে জ্যাকেট এবং বুট পরে কাজ করাটাও বাধ্যতামূলক। ধরা হয়, কোনও ভাবে বাড়ি ভেঙে পড়লে ওই চকচকে জ্যাকেট দেখেই ধ্বংসাবশেষের নীচ থেকে শ্রমিকদের বার করে আনা সহজ হবে। এ ছাড়া, নির্মাণস্থলে প্রাথমিক চিকিৎসার বন্দোবস্ত রাখাও বাধ্যতামূলক।
এর কিছুই না করে নির্মাণকাজ চলছিল কী করে? মূল ঠিকাদার স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘আমি কলকাতায় নেই। কী হয়েছে, ঠিক বলতে পারব না। বেশি নিয়ম মানতে গেলে কাজটাই হবে না।’’ বিধাননগর কমিশনারেটের নিউ টাউন ডিভিশনের এক পুলিশ আধিকারিক আবার বললেন, ‘‘দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। কোনও অভিযোগ এখনও আসেনি। অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ কেন অভিযোগ পাওয়ার অপেক্ষা না করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেবে না? উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy