ধর্না মঞ্চের কাছে পোস্টার হাতে অতনু ঘোষ। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
‘‘গোলাপ তো অনেক পাঠালে। এ বার তোমার নিয়োগপত্রটা কবে পাঠাবে? যেটা দেখিয়ে বাবাকে বলতে পারব যে আমরা বিয়েটা শেষ পর্যন্ত করতে চলেছি।’’
ভ্যালেন্টাইন্স দিবসে একটি তরতাজা গোলাপ বাড়িতে পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়ার পরে এমনটাই বলেছেন উচ্চ প্রাথমিকের এক চাকরিপ্রার্থীর বান্ধবী। মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে বসে আন্দোলনরত ওই চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘ছ’বছর ধরে সম্পর্ক রয়েছে আমাদের। আর নিয়োগের এই আন্দোলনও প্রায় ছ’বছর ধরেই চলছে। আমার বান্ধবী থাকে বর্ধমানে। প্রথম প্রথম ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে গোলাপ দিতাম। বেড়াতে যেতাম আশপাশে কোথাও। কিন্তু ছ’বছরের অপেক্ষার পরে ওর বাড়ি থেকে আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। আমার বান্ধবী একটি ছোট বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে। ওর একার উপার্জনে সংসার চলবে না। তাই যে দিন নিয়োগপত্র পাব, সেই দিনই আমাদের ভ্যালেন্টাইন্স ডে।’’
ওই চাকরিপ্রার্থীর পাশে বসে থাকা আর এক উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী অতনু ঘোষ জানালেন, মেধা তালিকায় তাঁর র্যাঙ্ক ১৪২। কাউন্সেলিংয়ে স্কুল বাছাইও হয়ে গিয়েছে। অতনু বলেন, ‘‘আমার বাড়ি হুগলিতে। আমার বান্ধবীর বাড়ি বালুরঘাটে। আমি নিজের বাড়ির কাছে না নিয়ে বান্ধবীর বাড়ির কাছাকাছি একটা স্কুল পছন্দ করেছি। কিন্তু স্কুল তো পছন্দ হয়ে গেল, নিয়োগপত্র কবে পাব হাতে? হাই কোর্টে শুনানির সময়ে বার বার বিচারপতির বেঞ্চ বদল হওয়াতে আমাদের চূড়ান্ত রায় বেরোতে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।’’ ‘বিয়ে এ বার করতে চাই, তাই তো মোরা নিয়োগ চাই’— এই পোস্টার নিয়ে ভালোবাসার সপ্তাহে ময়দানে দাঁড়িয়ে ছিলেন অতনুও। তিনি জানান, আজ, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে বান্ধবী অনেক দূরেই থাকবেন। তিনি এক বার ভেবেছিলেন বালুরঘাট চলে যাবেন। কিন্তু পরে মত বদলেছেন। অতনু বলেন, ‘‘এখন বালুরঘাট গিয়ে কী হবে? আমি একদম নিয়োগপত্র নিয়েই বালুরঘাট যেতে চাই।’’
গান্ধী মূর্তির পাদদেশে নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন চলছে এক হাজার দিনেরও বেশি ধরে। ওই চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের দুই যুবক-যুবতী জানালেন, তাঁদের সম্পর্ক এক হাজার দিনের থেকেও অনেক বেশি দিনের। কিন্তু তাঁরা ঘর বাঁধতে পারছেন না। কারণ নিয়োগপত্র এখনও অধরা। বান্ধবীর পাশে বসে ওই চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে এখানেই বসে থাকব। বড়জোর ২০ টাকা দিয়ে একটা গোলাপ ফুল ওকে দিতে পারি। ভাল কোথাও খাওয়ার মতো পকেটের জোর নেই। এত বছর ধরে অপেক্ষা করার পরে বান্ধবীর বাড়ির লোকেরা অধৈর্য হয়ে উঠেছেন। বান্ধবীর বাবা বার বার জানতে চান, আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে?’’ মঞ্চে বসে থাকা আর এক চাকরিপ্রার্থী অভিষেক সেন বলেন, ‘‘আমাদের এই মঞ্চে অনেকেই সম্পর্কে আছেন। সমস্যাটা বেশি হচ্ছে মেয়েদের ক্ষেত্রে। বয়স বাড়লে বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ আসছে। নিয়োগের এই অনিশ্চয়তার মধ্যেও সম্পর্কের গভীরতা আছে বলেই সেগুলো এত বছর ধরে এখনও টিকে আছে।’’
বিকেল ৫টা বেজে গেলে ধর্নামঞ্চ থেকে ওঁরা বাড়ি চলে যান। বিকেলের পড়ন্ত আলোয় তাঁরা জানালেন, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে কোনও উপহার নয়, গোলাপ নয়, কোথাও বেড়াতে যাওয়া নয়। শুধু পরস্পরের হাত ধরে অঙ্গীকারবদ্ধ থেকে নিয়োগের অপেক্ষা করবেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy