Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Barrackpore

কলেজে ভর্তিতে টাকা ‘আদায়’ নিয়ে অভিভাবক সরব, পাল্টা হুমকি

কলেজে ভর্তির সময়ে ‘হেল্প ডেস্ক’-এর নামে পড়ুয়াদের থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ বার বার উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৪১
Share: Save:

কলেজে নথি পরীক্ষা করতে গিয়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে ছাত্র সংসদের নামে। এমনকি, কোনও পড়ুয়া অন্য কলেজে ভর্তি হতে গেলে তাঁকে প্রথম কলেজের তরফে ভর্তির সময়ে নেওয়া টাকা ফেরতও দেওয়া হচ্ছে না। এমনই অভিযোগ উঠেছে ব্যারাকপুরের রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ওই কলেজে প্রথম সেমিস্টারে ভর্তি হয়েও পরে অন্যত্র চলে যান এক পড়ুয়া। তাঁর অভিভাবক পুরো ঘটনাটি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। কলেজের অধ্যক্ষ মনোজিৎ রায় পাল্টা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট অভিভাবক ওই পোস্ট নিয়ে ক্ষমা না চাইলে তিনি আইনি পথে যাবেন।

ফেসবুকে লেখা পোস্টে শাশ্বতী দত্তরায় নামে ওই অভিভাবক জানিয়েছেন, কলেজে তাঁর মেয়ের নথি যাচাইয়ের সময়ে কয়েক জন যুবক এসে ছাত্র সংসদের নামে টাকা দাবি করেন। চাওয়া হয়েছিল ১০০০ টাকা। শেষ পর্যন্ত ৫০০ টাকা দিতেই হয়।

শাশ্বতীর অভিযোগ, নথি যাচাইয়ের জন্য যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের সকলকেই টাকা দিতে হয়েছিল। কিন্তু রসিদ দেওয়া হয়নি। এর পরে তাঁর মেয়ে অন্য কলেজে ভর্তি হন। ভর্তির টাকা ফেরতের জন্য ২৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেন শাশ্বতী। তাঁর সঙ্গেই আরও অনেকে আবেদন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই টাকা ফেরত পাননি। কোনও রসিদও দেওয়া হয়নি তাঁদের। এই কলেজের ছাত্র সংসদ সর্বশেষ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) অধীনে ছিল।

প্রসঙ্গত, কলেজে ভর্তির সময়ে ‘হেল্প ডেস্ক’-এর নামে পড়ুয়াদের থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ বার বার উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামলাতে কলেজে ভর্তির যাবতীয় প্রক্রিয়া অনলাইনে করার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। টাকাও দিতে হয় অনলাইনে। মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই নিয়মে ক্লাস শুরুর দিনেই কলেজে নথিপত্র যাচাই হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে এখনও ক্লাস শুরু হয়নি। তাই রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে অনলাইনেই। কিন্তু সে ক্ষেত্রে নথি যাচাই জরুরি হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ-সহ পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বেশ কিছু কলেজ পড়ুয়াদের ডেকে নথি যাচাই করেছে। শাশ্বতীর অভিযোগ, ১১ ডিসেম্বর নথি যাচাই করতে গেলে টাকা চাওয়া হয়।

সোমবার তিনি বলেন, ‘‘আমি অনিয়ম তুলে ধরতে চেয়েছি মাত্র। আমার বক্তব্য, পাঁচশোই হোক বা পাঁচ হাজার— ইউনিয়ন কোনও টাকা চাইতে পারে না। কারণ, নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র সংসদের অস্তিত্বই কলেজে নেই। অথচ, তাদের নামে টাকা তোলা হচ্ছে।’’

অধ্যক্ষ মনোজিৎবাবু নিজে শাশ্বতীর পোস্টে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। শাশ্বতী অবশ্য সাফ জানিয়েছেন, ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। অধ্যক্ষের পাল্টা দাবি, তাঁর এবং কলেজের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন ওই অভিভাবক। অশালীন ভাষায় তাঁকে আক্রমণ করেছেন। ইউজিসির নির্দেশ অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা ভর্তির টাকা ফেরতের আবেদন করেছেন, তাঁদের টাকা ফেরত দিতে হবে। কিন্তু মনোজিৎবাবুর দাবি, ওই সময়ের মধ্যে শাশ্বতীর মেয়ের আবেদন জমা পড়েনি। জমা দেওয়ার রসিদ দেখাতে পারলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

টিএমসিপি টাকা নিচ্ছে, এই অভিযোগও অধ্যক্ষ মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, যদি টাকা চাওয়া হয়েও থাকে, তখনই তাঁর কাছে কেন অভিযোগ জানানো হল না? তিনি জানান, গত ৪ জানুয়ারি মেয়ের ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিতে এসেছিলেন শাশ্বতী। তা পেয়ে গিয়েছেন। দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা বহিরাগতদের চক্রান্ত হতে পারে। তবে আমরা কড়া নজর রাখছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy