Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Liluah Home

Liluah Home: সরকারি ‘ফাঁসে’ চার বছর ধরে হোমে আটকে ভিন্‌দেশি তরুণী

অচেনা জায়গায় ট্রেন থেকে নামতেই ফের দালালদের খপ্পরে পড়েন তরুণী। তারা তাঁকে বাড়ি ফেরানোর জন্য সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২১ ০৮:১৪
Share: Save:

চার বছর ধরে তাঁর ঠিকানা, হাওড়ার লিলুয়া হোম। সেখানে ‘বন্দিদশা’ কাটিয়ে এখনও বাংলাদেশে মা-বাবার কাছে ফিরতে পারেননি এক তরুণী। অথচ, নারী পাচারের যে মামলায় জড়িয়ে থাকার কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না, তাতে ইতিমধ্যেই চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। বাংলাদেশে থাকা পরিজনেরাও বার বার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছেন তাঁদের মেয়েকে। কিন্তু অভিযোগ, স্রেফ সরকারি উদ্যোগের অভাবে মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি। শুধু ওই তরুণীই নন। অভিযোগ, এই একই কারণে বাংলাদেশের বাড়িতে ফিরতে পারছেন না বহু কিশোরী ও তরুণী।

হাওড়া জেলা সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ওই তরুণীকে চাকরির টোপ দিয়ে ২০১৭ সালে বনগাঁয় আনে এক দালাল। এর পরে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয় বেঙ্গালুরুর এক যৌনপল্লিতে। সেখান থেকে ছ’মাস পরে পালিয়ে আসেন তিনি। ঠিক করেন, পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ফিরে যাবেন। কিন্তু, তা আর হয়ে ওঠেনি।

জানা গিয়েছে, অচেনা জায়গায় ট্রেন থেকে নামতেই ফের দালালদের খপ্পরে পড়েন তরুণী। তারা তাঁকে বাড়ি ফেরানোর জন্য সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তার বদলে ওই তরুণীকে একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে তাঁর আয় করা টাকা ও গয়না চুরি করে পালায় তারা। পরে ওই দালালেরাই বনগাঁ পুলিশের হাতে তুলে দেয় তরুণীকে। আদালতের নির্দেশে তাঁর স্থান হয় লিলুয়া হোমে। ওই দালালদের খোঁজ করছে পুলিশ।

জেলা সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, ২০১৭-র ১২ ডিসেম্বর ওই তরুণীকে হোমে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের লোকজন তখনও জানেন না, তাঁদের মেয়ে কোথায়। সেই সময়ে তরুণীর সাহায্যে এগিয়ে আসেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা রাজু দাস। রাজু জানান, তিনি যখন মুম্বইয়ে আয়কর দফতরে গাড়িচালকের কাজ করতেন, সেই সময়ে এক মহিলা তাঁকে ওই তরুণীর বিপদের কথা জানান। চাকরি ছেড়ে রাজ্যে ফিরে রাজু স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যোগাযোগ করেন তরুণীর সঙ্গে। তাঁর বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর জোগাড় করেন। রাজুই যোগাযোগ করেন তরুণীর ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির থেকে জানতে পারি, ওঁরা খুবই গরিব। টাকা খরচ করে মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই ওঁদের। তা শুনে আমিই মেয়েটিকে ফেরানোর জন্য চেষ্টা শুরু করি।’’

ওই যুবক জানান, হাওড়া জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে বিদেশ মন্ত্রক— তরুণীকে ফেরানোর জন্য কোথাও চিঠি লিখতে বাকি রাখেননি তিনি। বার বার ছুটেছেন বনগাঁ আদালত ও হাওড়া আদালতে। নিজের টাকা খরচ করে হাই কোর্টে মামলা লড়ছেন। তরুণীর ভাইও নিজেদের জমি বিক্রি করে গত চার বছর ধরে ছোটাছুটি করছেন দিদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওই তরুণীর এবং নিজেদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রও জমা দিয়েছেন।

জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘সময়-সুযোগ বুঝে আমরা এক-একটি দল তৈরি করে এমন তরুণীদের বাংলাদেশে পাঠাই। মাসখানেক আগেও কয়েক জনকে পাঠানো হয়েছে। তখনও এই তরুণীর নাম আসেনি। এ বার নাম এলেই তাঁকে ফেরানো হবে।’’ জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘কেন ওই তরুণীকে এত দিনেও পাঠানো হয়নি, খোঁজ নিয়ে দেখব। জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গেও কথা বলব।’’

গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘মামলা চললে নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে। দেড় বছর ধরে কোভিডের কারণে বহু মামলার মীমাংসা হয়নি। তবে ওই তরুণীকে দেশে ফেরানোর জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে যাতে ভিডিয়ো-কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানিতে হাজির করা যায়, সে ব্যাপারে আমরা কলকাতা হাই কোর্টের কাছে আবেদন করছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Liluah Home Foreigner
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy