দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। অথচ, অদূরেই দাহ্য বস্তুর পসরা নিয়ে বসে আছেন দোকানিরা। সোমবার দুপুরে এমনই বিপজ্জনক দৃশ্য দেখা গেল নিউ মার্কেটের হগ মার্কেটের কাছে। এ দিন সেখানে ভূগর্ভস্থ বাজার সিম পার্ক মলে আগুন লাগে। বাজার বন্ধ থাকায় সেই সময়ে গেটও বন্ধ ছিল। তাই আগুন বাজারের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ছুটি থাকায় বিপদও কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। দমকল আসার আগেই তাঁরা জল দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেন, যার ফলে তা ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারেনি। পরে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এসে আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে দেয়।
এ দিনের ওই ছোট আগুনই অবশ্য বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। নিউ মার্কেট তল্লাটে রোজই দাহ্য বস্তুর যে রকম চক্রব্যূহ তৈরি হয়, তাতে যে কোনও সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষত, স্থায়ী দোকানগুলির ব্যবসায়ীরা এমনটাই মনে করছেন। এ দিন হগ মার্কেটের আশপাশে ঘুরে দেখা গেল, পিস বোর্ডের বড় বড় বাক্সে জিনিসপত্র রেখে ব্যবসা করছেন অস্থায়ী দোকানের মালিকেরা। কেউ বিক্রি করছেন কাপড় আর স্পঞ্জের তৈরি পুতুল, কেউ বা পলিথিনের সামগ্রী। আবার নিউ মার্কেটের দিক থেকে কলকাতা পুরসভার দিকে যেতে দেখা গেল, রাস্তার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে দাহ্য পদার্থ।
গোটা এলাকাই যে কার্যত জতুগৃহে পরিণত হয়েছে, মেয়র ফিরহাদ হাকিমও তা স্বীকার করেছেন। অসহায়তা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার এই মুহূর্তে এর প্রতিকার কিছু করার নেই। ওই জায়গায় হকার বেড়ে গিয়েছে। পুরসভা উচ্ছেদের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু হকারেরা উচ্চ আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছেন।’’ ভূগর্ভস্থ বাজারের এক ব্যবসায়ী আমির আলি বললেন, ‘‘আজ ছুটির দিন না হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারত। ছুটি থাকায় বাজারের আশপাশে হকারদের ভিড় ছিল। তাঁদেরই কেউ হয়তো সিগারেট ফেলেছেন। যা থেকে আগুন লেগে যায়।’’ ভেঙে পড়ে বাজারের প্রবেশপথের উপরের কাচের ছাউনি।
ওই জায়গার অদূরেই মির্জ়া গালিব স্ট্রিটে দমকলের সদর দফতর। তা সত্ত্বেও ঘিঞ্জি রাস্তা দিয়ে দমকলের পৌঁছতে সময় লেগেছে। হগ মার্কেটের সামনের ফোয়ারা এবং নিউ মার্কেট চত্বরের জল দিয়ে প্রাথমিক ভাবে তাঁরাই আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
এই ঘিঞ্জি পরিবেশেই ত্রিপল সহযোগে দোকান চালাচ্ছেন হকারেরা। মেয়রও স্বীকার করেন যে, ওই তল্লাটে পুরসভার নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে হকার বেড়ে গিয়েছে। বড় দুর্ঘটনা ঘটলে ফল ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা দোকানিদের। দু’-এক জন হকার জানান, ওই এলাকা ছাড়া তাঁদের ব্যবসা করার জায়গা নেই। অনেকেরই দাবি, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ব্যবসা করছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)