পাঠশালা: সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতে চলছে ‘রামধনু’র ক্লাস। —নিজস্ব চিত্র।
পড়াশোনা করে কী হবে! সেই তো কোনও বাড়িতে বাসনই মাজতে হবে। বস্তির সকলেরই ওই এক কথা। বাবা-মায়েরও সায় ছিল না পড়াশোনায়।
ফুটপাতের উপরে ত্রিপল ঘেরা একচিলতে পরিসর সামলাতেই ব্যস্ত তাঁরা। তার মধ্যে মাঝে মাঝেই থানার ‘হল্লা গাড়ি’ এসে সব ফেলে তছনছ করে দিয়ে যায়। সব সামলে ফের নতুন করে সাজাতে হয় সংসার। ‘‘এত ঝামেলার মধ্যে দুই মেয়েকে পড়াশোনা করানো কি সহজ!’’ বললেন ঝর্না প্রামাণিক। কিন্তু প্রিয়া, প্রিয়াঙ্কা প্রামাণিক, সোনিয়া ঘোষেরা নাছোড়বান্দা। ছাড়ার পাত্র নন তাদের দিদিমণি মিত্রবিন্দা ঘোষও। শর্ত শুধু একটাই। তিন জনের পড়াশোনার সব দায়িত্ব দিদিমণির।
২০১৯ থেকে শুরু হয়েছিল লড়াই। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে ঢোকার মুখেই ফুটপাতে মাদুর পেতে বসে চলত তিন জনের পড়াশোনা। ফুটপাত থেকে উৎখাত হলে বসতে হত প্রিয়ার বাবার ভ্যানে। ভরসা ল্যাম্পপোস্টের আলো। তিন জনই এর পরে ভর্তি হয় টালিগঞ্জের সরকারি স্কুলে। এ বছর প্রিয়ার মাধ্যমিক। নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে বাকি দু’জন। তাদের স্কুলের দিদিমণিদের সঙ্গে কথা বলা, পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আলোচনা করা, তাদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা, চিকিৎসার দায়িত্ব এখন মিত্রবিন্দার সংস্থা ‘রামধনু’র। মিত্রবিন্দা বলেন, “আগের সন্ধ্যায় তিন জনকে পড়িয়ে গেলাম। পরদিন সকালে খাবার দিতে এসে দেখি, কোথাও কিছু নেই। পুলিশের তাড়া খেয়ে সবাই পালিয়ে গিয়েছে। ভেবেছিলাম, এখানেই সব শেষ। কোথায় খুঁজব ওদের!”
পাশে পেয়েছিলেন সোনিয়ার দিদিমা শ্রীমা মিশ্র ওরফে কালীকে। এলাকার একটি সুলভ শৌচালয়ে কাজ করেন তিনি। নাতনি সোনিয়াকে নিয়ে শৌচালয়ের ভিতরেই থাকেন। তিনিই খুঁজে আনেন দুই পড়ুয়াকে। সঙ্গে আরও কিছু এলাকার ফুটপাতে, সিগন্যালে ভিক্ষা করা খুদেদের। ফের সব কিছু নতুন করে শুরু হয়। শ্রীমা বলেন, “আমার নাতনির ভবিষ্যৎ যেন আমার মতো না হয়। এই ছেলেমেয়েগুলো কেন ভিক্ষা করবে? সুযোগ যখন পেয়েছে, ওরা অন্তত পড়াশোনাটা করুক।”
সলতে পাকানোর এই কাজে এক-এক করে জুটে গিয়েছেন আরও অনেকে। সপ্তাহে চার দিন করে বড়দের বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের ক্লাস নেন কলেজছাত্রী স্নেহা ও নমিতা। পুলিশের তাড়া খেয়ে ক্যানিংয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন রূপা। প্রতি শনি ও রবিবার সেখান থেকে দুই মেয়ে দীপিকা ও বিপাশাকে নিয়ে আসেন সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে অভিজিৎ, আভেরি, অন্তরীপাদের ক্লাসে। তিন থেকে তাই এখন সংখ্যাটা বেড়ে পঁচিশ হয়েছে। দিনে-দিনে খোলতাই হচ্ছে রামধনুর ছটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy